বসুন। কথা আছে।
জুলেখা ওরফে রীতা ওরফে দোয়েল ডিভানটায় বসল। একটু জড়সড়।
আপনার আসল নামটা কী?
দোয়েল।
বরুণ ঘোষের সঙ্গে পরিচয় কবে হয়েছিল?
প্রায় নয় বছর আগে। উনি নার্সিং হোমে ভরতি হয়েছিলেন একটা চেক আপের জন্য। ব্রঙ্কিয়াল কারসিনোমা সাসপেক্টেড। খুব অসুস্থ ছিলেন। আমি তখন ওখানে আয়া ছিলাম।
তখনই ঘনিষ্ঠতা হয়?
হ্যাঁ। উনি আমাকে খুব পছন্দ করতেন, আমিও ওকে।
অ্যান্ড দ্যাটস দ্যাট?
তখন আমার বয়স চব্বিশটব্বিশ। ওঁর মিড ফর্টিজ। উইডোয়ার। উই ফেল্ট ফর ইচ আদার।
তারপর?
উনি ভাল হয়ে গেলেন। ক্যান্সার হয়নি।
তখন ওঁর মেয়ের বিয়ে কি হয়ে গেছে?
অসুখের পরই মেয়ের বিয়ে হয়, ডিভোর্স হয়, মেয়ে চলে যায় আমেরিকায়। তখন ভীষণ লোনলি। আমাকে ওঁর খুব দরকার হত।
বন্দোবস্তটা কীরকম ছিল?
উনি এ বাড়ির এই অংশটা লিজ নিয়েছিলেন আমার নামে। দশ বছরের লিজ। মাসে মাসে দু’হাজার টাকা মাসোহারা দিতেন।
এখানেই আপনাদের দেখাসাক্ষাৎ হত?
হ্যাঁ।
এর আগে আপনি কোথায় থাকতেন?
আমার মায়ের সঙ্গে, মোমিনপুরে।
আপনার মা এখনও সেখানে আছেন?
না। মারা গেছেন।
সেই বাড়িটা?
ওটা ভাড়া বাড়ি। আমার দাদা থাকে। তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই।
আপনি ইংরিজি বলা কোথায় শিখলেন?
স্কুলে। বাবা যখন বেঁচে ছিলেন আমাদের অবস্থা ভাল ছিল। বাবা চাকরি করতেন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে। তিনি মারা যাওয়ার পর আমরা ভীষণ খারাপ অবস্থায় পড়ি। পড়াশুনো ছাড়তে হয়, চাকরি নিতে হয়। তাও আয়ার চাকরি এবং ক্যাজুয়াল। দাদা বাড়ি থেকে তাড়াতে পারলে বাঁচে। তারও অবশ্য অবস্থা খারাপ ছিল।
বরুণবাবুকে আপনি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন?
বহুবার।
বিয়ে হল না কেন?
উনি লোকনিন্দার ভয় পেতেন। একবার রাজি হতেন, আবার নানা টালবাহানা করে পিছিয়ে যেতেন।
বিয়ে না করেই সন্তান হল?
হ্যাঁ। উনি অ্যাবরশন করাতে চেয়েছিলেন। আমি রাজি হইনি। ভেবেছিলাম বাচ্চা হলে হয়তো বিয়েতে রাজি করাতে পারব।
উনি রাজি হননি?
না। ওই তো বললাম, খুব দোনোমোনো করতেন। আমি ওঁর ছেলের মা, আমি ভীষণ ইনসিকিউরিটি ফিল করতাম।
উনি টাকাপয়সা দিয়ে কমপেনসেট করতে পারতেন তো!
টাকাপয়সার ব্যাপারে উনি খুব উদার ছিলেন না। উনি যা দিতেন তাতে চলত না। ছেলে হওয়ার পর খরচ তো বেড়েছিল। বিয়ের জন্য চাপ দিতাম বলে উনি ক্রমে ক্রমে আমার ওপর বিরক্ত হয়ে উঠছিলেন।
আমি আপনার অবস্থাটা বুঝতে পারছি। উনি কি ছেলেকে ভালবাসতেন?
বাবা যেমন ছেলেকে ভালবাসে তেমন নয়। তবে বোধহয় মায়া একটু ছিল। আদরটাদর করতেন।
তারপর কী হল?
উনি মেয়ের কাছে আমেরিকা গেলেন। এক বছরের জন্য। আমাকে মাত্র কুড়ি হাজার টাকা দিয়ে গিয়েছিলেন। আমার ছেলের স্কুলের বেতনই মাসে দেড়শো টাকা। আরও খরচ আছে। আমি ফের আয়ার চাকরি শুরু করেছিলাম। কিন্তু বাজার খারাপ। আয় সামান্যই হত।
আপনি কি ওঁকে ব্ল্যাকমেল করতেন?
ব্ল্যাকমেল। না। কথাটা তখন মাথায় আসেনি।
উনি একটা ডায়েরিতে ব্ল্যাকমেল করার কথা লিখে গেছেন। অবশ্য তাতে আপনার নাম নেই।
ব্ল্যাকমেল নয়। তবে উনি আমেরিকা যাওয়ার অনেকদিন আগে থেকেই আমার কাছে আসা বন্ধ করেছিলেন। আমি ভয় পাচ্ছিলাম উনি হয়তো আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন না। বাধ্য হয়ে আমি ওঁর কাছে যাই। ওঁর বাড়িতে যাওয়া বারণ ছিল আমার। বাধ্য না হলে যেতাম না। আমার একার জন্য তো নয়, ছেলেটাকে তো দেখতে হবে। উনি আমাকে দেখে খুব রেগে যান। আমি টাকাপয়সার কথা বলাতে উনি বলেন, তুমি আমাকে ব্ল্যাকমেল করতে এসেছ? এটা কি ব্ল্যাকমেল, আপনিই বলুন তো!
না। তারপর বলুন।
শেষ অবধি উনি কুড়ি হাজার টাকা দিয়েছিলেন।
তারপর?
উনি আমেরিকা চলে যাওয়ার পর আর যোগাযোগ ছিল না। উনি আমাকে চিঠি লিখতেন কখনও। আমার তো লেখা বারণই ছিল। এক বছর বাদে উনি ফিরে আসার পর আমার সঙ্গে দেখা করেন। দেখলাম খুব নরম হয়ে পড়েছেন। আমার প্রতি যেন একটা টানও হয়েছে। সেই দুর্বলতার সুযোগে আমি ফের বিয়ের কথা তুললাম। উনি নিমরাজি ছিলেন। তবে চিন্তা ছিল বিষয়সম্পত্তি নিয়ে। বিয়ে করলে প্রীতীশ ওঁর সম্পত্তির মস্ত ভাগীদার হয়ে দাঁড়াবে। সেটা উনি যেন খুব একটা পছন্দ করছিলেন না। তবে শেষ অবধি রাজি হয়েছিলেন। এমনকী ওঁর কথামতো আমি একজন ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের সঙ্গেও যোগাযোগ করে নিয়মকানুন জেনে আসি। কিন্তু উনি হঠাৎ করে মারা যাওয়ায় সব ভেস্তে যায়।
মিতালিদেবীর সঙ্গে আপনি যোগাযোগ করেছিলেন কি এসব কথা জানানোর জন্য?
হ্যাঁ। আর এক বছর পর এই বাড়ির লিজ শেষ হয়ে যাবে। আমার মাসোহারা বন্ধ। চাকরি থেকে হাতে টাকাপয়সা আসছে না। আমি কী করতে পারি বলুন তো! আমার ছেলে অবৈধ সন্তান আমি জানি, কিন্তু ধৰ্মত ওঁরই সন্তান। ও কেন অন্যায়ভাবে বঞ্চিত হবে? সেইজন্য আমি প্রথমে ওঁকে টেলিফোনে সব খুলে বলার চেষ্টা করি। উনি ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। আমাকে উলটে গালাগাল করেন।
আপনি কলগার্লের জীবিকা কবে থেকে বেছে নেন?
মাথা নিচু করে একটু চুপ করে থেকে দোয়েল মাথা তুলে বলল, উনি আমেরিকা যাওয়ার প্রায় সাত আট মাস পরে। কলগার্ল নয়। আমি নার্সিং হোম থেকেই একজন মধ্যবয়স্ক পেশেন্টের সঙ্গে তার বাড়ি যাই। সেখানেই শুরু। তবে ইচ্ছে হত না। বাধ্য হয়েই