তা কাটাতেন।
গত ক’বছর ধরে?
হিসেব করিনি। সাত-আট বছর ধরে হবে।
এবার খুব হিসেব করে জবাব দেবেন। মেয়েটি ছোটখাটো চেহারার, মাজা রং, ছিপছিপে, কিন্তু রুগণ নয়। মেয়েটি কখনও রীতা দাস, কখনও জুলেখা শর্মা নামে পরিচয় দেয়।
নাম জানি না, তবে আপনি যেমন বলছেন তেমন একটা মেয়ে বাবুর সঙ্গে একবার দেখা করতে এসেছিল।
কবে?
বাবু আমেরিকা যাওয়ার মাত্র কয়েকদিন আগে। দিদিমণি চলে যাওয়ার পর এ বাড়িতে মেয়েছেলে বড় একটা আসে না। তাই এ মেয়েটিকে দেখে একটু ধন্দ লেগেছিল।
কেন এসেছিল?
তা জানি না। বাবুর খোঁজ করাতে আমি তাকে ঘরে বসিয়ে বাবুকে খবর দিই।
ওঁদের মধ্যে কী কথা হয়েছিল জানেন?
না। তবে বাবু যে মেয়েটিকে দেখে রেগে গিয়েছিলেন তা দূর থেকেও চেঁচামেচি শুনে বুঝেছি। বলতে ভুলে গেছি, মেয়েটার সঙ্গে একটা বাচ্চা ছেলেও ছিল।
ছেলে! কত বড় ছেলে?
চার-পাঁচ বছর হবে।
বরুণবাবু চেঁচিয়ে কী বলেছিলেন মেয়েটাকে?
একটা-দুটো কথা শুনেছি। একবার বললেন, এখানে আসার দরকার ছিল না। আর একবার যেন বললেন, টাকা কি গাছে ধরে?
আর কিছু শোনেননি?
না।
মেয়েটাকে আর কখনও দেখেছেন?
হ্যাঁ।
কবে এবং কোথায়?
দিদিমণি যেদিন খুন হন তার দুদিন আগে।
কোথায়?
ফটকের বাইরে।
কী করছিল?
চেয়ে ছিল। আমি বাজারে বেরোনোর সময়ে মুখোমুখি পড়ে যাই। কী চায় জিজ্ঞেস করায় বলল, কাজ খুঁজছে। আগে একবার দেখেছিলাম, তাই চেনা চেনা ঠেকছিল।
সঙ্গে ছেলেটা ছিল?
না।
কীরকম কাজ খুঁজছে বলল?
সে কথা আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। বলল গভর্নেন্স বা আয়া। আমি বললাম এখানে হবে না। তখন চলে গেল। চলে যাওয়ার অনেকক্ষণ বাদে কোথায় দেখেছি, কোথায় দেখেছি ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়ল যে এই মেয়েটাই বাবুর কাছে একবার এসেছিল।
এ বাড়িতে সে ঢোকেনি, ঠিক জানেন?
না।
মিতালিদেবীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেনি?
আমার তো চোখে পড়েনি। তবে আমাকে তো বাজারহাট রান্নাবান্না নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। নয়নের মা বলতে পারবে হয়তো।
সে কে?
কাজের মেয়ে। ডেকে দিচ্ছি।
নয়নের মা রোগা, কালো, মধ্যবয়স্কা। খুব পান খায়। সব শুনেটুনে বলল, এসেছিল।
কবে?
ওই সব্বোনেশে ব্যাপার যেদিন হয় তার আগের দিন দুপুরে। দিদিমণি তাকে দুর-দূর করে তাড়িয়ে দেয়।
কোনও ঝগড়াঝাটি হয়েছিল?
না। মেয়েটা নীচের ঘরে বসেছিল। দিদিমণি নেমে এসে দেখা করলেন। দু’-চারটে কথার পরই ওপর থেকে শুনলাম দিদিমণি চিৎকার করে উঠলেন, বেরিয়ে যাও। বেরিয়ে যাও!
আপনি চেঁচামেচি শুনে নেমে এলেন না।
না। ঝাড়পোঁছ করছিলাম। ভাবলাম সাহায্যটাহায্য চাইতে এসেছে। কত লোকই তো আসে৷
দিদিমণি কিছু বলেছিলেন আপনাকে?
না। একটু থমথমে মুখ করে ছিলেন কিছুক্ষণ। তারপর আবার সব ঠিক হয়ে গেল।
আর কিছু মনে পড়ছে?
না।
মেয়েটা ধমক খেয়ে উলটে কিছু বলেছিল?
না। আমি দোতলা থেকে দেখলাম গটগট করে বেরিয়ে গেল।
পোশাকটা মনে আছে?
সাদা চুড়িদার।
**
আই অ্যাম ডিস্টার্লিং ইউ। কিন্তু কেসটা সিরিয়াস। কাজেই–
ইটস ওকে অফিসার। হাউ ক্যান উই হেলপ ইউ?
আমি একটি ছেলের সন্ধান করছি। এখন তার বয়স হবে ছয়-সাত। নাম জানি না। কিন্তু পদবিটা শর্মা হলেও হতে পারে। বাবার নামও জানি না। তবে দেয়ার ইজ এ পসিবিলিটি যে, বাবার নাম পিনাকী শর্মা। আপনাদের রেকর্ডটা কনসাল্ট করবেন?
নো প্রবলেম। আপনি বসুন, আমি আসছি।
হেড মিস্ট্রেস উঠে গেলেন। শবর বসে রইল। অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়া। তবু লেগেও যায় অনেক সময়ে। মেরিজ স্কুল নামটা যখন জুলেখার মুখে এসেছে তখন হলেও হতে পারে, ওর ছেলে এই স্কুলে পড়ে।
হেড মিস্ট্রেস পনেরো মিনিটের মধ্যেই ফিরে এলেন। মুখে একটু উদ্বেগ।
ইয়েস অফিসার, ক্লাস টু-তে দু’জন শর্মা আছে। টুইন ব্রাদার্স। কিন্তু ওদের বাবার নাম সুজিত শৰ্মা, এ মার্চেন্ট। মিস্টার শর্মা পেরেন্টস মিটিং-এ আসেন, আমরা তাঁকে চিনি।
শবর মাথা নেড়ে বলল, না, এরা নয়।
দেন উই আর সরি।
শবর উঠতে যাচ্ছিল। তারপর মাথায় বজ্রাঘাতের মতো একটা কিছু চমকে গেল তার। কী বোকা সে!
ম্যাডাম।
ইয়েস অফিসার।
আই অ্যাম মেকিং এ মেস অফ থিংস। কিন্তু দয়া করে আমাকে আর একটা ইনফর্মেশন দিন।
বলুন।
ছেলেটার পদবি সম্ভবত ঘোষ। বাবার নাম বরুণ ঘোষ।
নিশ্চয়ই। বসুন, আমি চেক করে আসছি।
পনেরো মিনিট যেন পনেরো ঘণ্টার মতো কাটল। হেড মিস্ট্রেস ফিরে এলেন।
ইয়েস অফিসার। হি ইজ ইন ক্লাস টু। প্রীতীশ ঘোষ। বাবা বরুণ ঘোষ, মা দোয়েল ঘোষ। ঠিকানা টুয়েন্টি এ বাই সিক্স হরিশ চ্যাটার্জি বাই লেন।
শবর চিরকুটটা পকেটে রেখে বলল, থ্যাঙ্ক ইউ ম্যাডাম।
ইউ আর অলওয়েজ ওয়েলকাম।
**
দরজা খুলল সেই মেয়েটাই। তাকে দেখে একটুও চমকাল না। চোখে চোখ রেখে একটু চেয়ে রইল। তারপর দরজাটা ছেড়ে দিয়ে বলল, আসুন।
চিনতে পারছেন?
পারছি। জানতাম আপনি আসবেন।
গলির মধ্যে একটা পুরনো বাড়ির একতলার ছোট্ট বাসা। ভিতরটা অপরিচ্ছন্ন নয়। বরং বেশ তকতকে ঝকঝকে। একটা ডিভান আছে, দুটো বেতের চেয়ার, কারে শোকেসের ওপর একটা রঙিন টিভিও পাশে ভিসিআর। এটা স্পষ্টতই বাইরের ঘর। ভিতরে একখানা শোয়ার ঘরও আছে। শবর বেতের চেয়ারটায় বসল।
জুলেখা পরদা সরিয়ে ভিতরে গেল। দু’মিনিটের মধ্যেই ফিরে এল।