একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিঠু বলল, বসুন।
শবর বসল।
কেমন আছেন?
মিঠু মৃদু একটু হাসবার চেষ্টা করে বলল, আছি।
আজ ঠিক জেরা করতে আসিনি।
তা হলে কি অ্যারেস্ট করতে?
এখনই নয়। আমি আর্লি অ্যারেস্টে বিশ্বাসী নই। বরং সন্দেহভাজনকে নড়াচড়া করতে দিলে এবং নজর রাখলে ভাল কাজ হয়।
তাই বুঝি। বলুন, কী করতে পারি আপনার জন্য?
আমার জন্য নয়, দেশ ও দশের জন্য। আমার একটা ইনফর্মেশন চাই।
কীসের ইনফর্মেশন?
রিগার্ডিং বরুণ ঘোষ।
অনেক কথাই তো হয়েছে।
শবর মাথা নেড়ে বলল, তা হলেও অনেক কিছু জানা যায়নি।
কী জানতে চান?
গত দু-তিন বছর ধরে ওঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে উইথড্রয়ালের পরিমাণ হঠাৎ অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল কি না।
ওঁর অ্যাকাউন্ট চেক না করে তো বলা যাবে না।
চেক করুন। করছি। আর কিছু?
হ্যাঁ। উনি কেমন লোক ছিলেন?
সে কথা তো বলেইছি।
লোনলি, উইডোয়ার, মিডল এজেড?
হ্যাঁ।
শবর একটু হাসল। তারপর বলল, যতদুর জানি মিতালিদেবীর দু’বছর বয়সের সময় বরুণবাবুর স্ত্রী মারা যান।
হ্যাঁ।
তখন ওঁর দ্বিতীয়বার বিয়ে করার বয়স ছিল।
হ্যাঁ।
উনি মারা গেছেন চুয়ান্ন বছর বয়সে।
তা হবে।
বয়সটা খুব বেশি নয়, কী বলেন?
আপনি একটা কিছু ইঙ্গিত করতে চাইছেন।
হ্যাঁ। বুঝতে পারছেন কি?
না। আন্দাজ করছি।
তা হলে স্পষ্ট করেই বলি। ওয়াজ দেয়ার এ উওম্যান সামহোয়ার?
আমি ঠিক জানি না।
একটু ভাবুন। আপনার সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। আপনি তার অ্যাকাউন্ট হ্যান্ডেল করেছেন।
মিঠু ভ্রু কুঁচকে খানিকটা চুপ করে রইল।
শবর বলল, বলতে আপনার রুচিতে বাধছে কি?
তা নয়।
তা হলে?
এটুকু বলতে পারি যে, সম্ভাবনাটা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
আচ্ছা, উনি কি সবসময়ে নিজেই টাকা তুলতে আসতেন?
না। মাঝে মাঝে ওঁর রান্নার লোক হরেন বা ড্রাইভারও আসত।
আর কেউ?
ন্না।
দেখুন, কেসটা সিরিয়াস একটা টার্ন নিচ্ছে। এ সময়ে দ্বিধা করলে আমরা মুশকিলে পড়ব। ভাল করে ভেবে দেখুন।
দেখুন, বেয়ারার চেক তো যে কাউকেই দেওয়া যায়। উনি অনেককেই হয়তো চেক পেমেন্ট করতেন। সব মনে রাখা কি সম্ভব?
না। তবু কোনও অস্বাভাবিকতা ঘটে থাকলে সেটা মনে থাকতে পারে।
কিছু মনে পড়ছে না।
আচ্ছা, উনি কি অনেককেই চেক পেমেন্ট করতেন?
যতদূর মনে আছে, না।
ওঁর আরও তিনটে ফিকটিশাস অ্যাকাউন্ট আছে।
সে তো আপনি জানেন।
এই তিনটে অ্যাকাউন্ট থেকে উনি টাকা তুলতেন কি?
খুব কম।
মনে করে দেখুন তো, কখনও এ তিনটের কোনও একটা থেকে এমন কেউ টাকা তুলতে এসেছেন কি না, যে একটি মেয়ে, যার বয়স এখন বত্রিশ-তেত্রিশ, ছিপছিপে, ছোটখাটো, আনইমপ্রেসিভ চেহারা?
মিঠু একটু হাসল।
হাসলেন যে!
এই বিবরণটা আপনি আর একজনকেও দিয়েছেন।
হ্যাঁ। জয়িতাদেবীকে।
মনে পড়ছে না।
শুনুন মিঠুবাবু, মানুষের ব্রেন একটা অনন্ত স্টোরহাউস। তাতে সব জমা থাকে। ব্রেনটা একটু ট্যাপ করুন। চোখ বুজে মেডিটেট করুন।
মিঠু অসহায়ভাবে বলল, তার চেয়ে কম্পিউটারের শরণাপন্ন হওয়াই বোধহয় ভাল।
গুড আইডিয়া। কম্পিউটার অবশ্য কোনও মুখশ্রী দেখাবে না। তবু ইট মে হেলপ টু রিমেমবার।
টেবিলের একধারে রাখা মনিটরটা চালু করে কিছুক্ষণ নিবিষ্টভাবে দেখল মিঠু। তারপর বলল, পিনাকী শর্মার অ্যাকাউন্ট থেকে রেগুলার উইথড্রয়াল হয়েছে।
অ্যামাউন্টটা?
প্রতি মাসে তিন হাজার।
সেলফ চেক?
হ্যাঁ, উনি আমেরিকায় যাওয়ার আগে একটা বড় উইথড্রয়াল দেখছি।
কত?
ছত্রিশ হাজার।
কী মনে হয়?
বুঝতে পারছি না।
টাকাটা উনি কাকে দিতেন?
আপনি যা সাজেস্ট করছেন তা মেনে নিতে পারলে ভাল হত হয়তো। কিন্তু—
মনে পড়ছে না তো?
না।
তা হলে আমি একটু সাজিয়ে দিই। বিয়িং এ উইডোয়ার উনি একটা শুকনো জীবন কাটাতেন। মেয়েটাকে মানুষ করতে হবে বলে এবং সৎ মায়ের ভয়ে বিয়েও করেননি। কিন্তু লাইফ হ্যাজ ইটস ডিম্যান্ড। সুতরাং একটু বেশি বয়সে, ধরুন লেট ফর্টিজ-এ উনি একজন কাউকে পিক আপ করেন। তাকে কখনও নিজের বাড়িতে জায়গা দেননি। কিন্তু রেগুলার তাকে ভিজিট করতেন। মাসে মাসে তাকে মাসোহারা দিতে হত। পিনাকী শর্মা নামটাই হয়তো মেয়েটাকে বলেছেন। মেয়েটাও এক জায়গায় নিজেকে জুলেখা শর্মা বলে পরিচয় দিয়েছিল।
এরকম হতেই পারে।
খুব নির্দোষ ব্যাপার বলছেন?
তা বলিনি। তবে সারকামস্ট্যান্সেস মে কমপেল এ ম্যান—
হ্যাঁ হ্যাঁ। ঠিক কথা। চেকগুলো কি সবই সেলফ চেক?
দেখতে হবে।
দেখুন। তবে তাড়া নেই। মেয়েটাকে খুঁজে বের করাই এখন প্রথম কাজ।
**
হরেনবাবু, আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই।
যে আজ্ঞে। বলুন।
আপনি কতদিন বরুণবাবুর বাড়িতে কাজ করছেন?
তা পনেরো-ষোলো বছর হবে।
যখন আপনি কাজে ঢোকেন তখন তো বরুণবাবুর স্ত্রী বেঁচে নেই।
আজ্ঞে না। তার কয়েক বছর আগেই মারা যান।
একটা কথার জবাব ভেবেচিন্তে দিন। বরুণবাবুর চরিত্র কেমন ছিল?
আজ্ঞে, ভালই। চমৎকার মানুষ ছিলেন।
কিন্তু আমরা জানি গত কয়েক বছর হল বরুণবাবুর সঙ্গে একটি মেয়ের ঘনিষ্ঠতা হয়। মেয়েটিকে আপনি কখনও দেখেছেন?
আজ্ঞে না।
আরও স্পষ্ট করে বলি, মেয়েটিকে বরুণবাবু এ বাড়িতে কখনও আনতেন না। হয়তো নিজের আসল পরিচয়ও দেননি। কিন্তু তিনি মেয়েটির কাছে যেতেন। আপনার কি মনে পড়ে গত কয়েক বছর যাবৎ বরুণবাবু মাঝে মাঝে বাইরে রাত কাটাতেন কি না।