মেয়েটাই।
বারটা কোথায়?
বার নয় স্যার, ঠেক। কাছেই, ভবানীপুরে।
তাকে আগে কখনও দেখেছ?
না।
একটু ছোটখাটো ছিপছিপে চেহারা কি?
হ্যাঁ। আপনি চেনেন স্যার?
চিনি বলেই মনে হচ্ছে। এবার খুব ভাল করে ভেবে জবাব দাও। সেদিন–মিতালিদেবীর খুনের দিন তুমি কখন ড্রিঙ্ক করতে শুরু করেছিলে?
রাত আটটার পরই সাধারণত আমি খাই।
ঘরে বসে খাচ্ছিলে?
হ্যাঁ।
মেয়েটাও খাচ্ছিল কি?
একটু আধটু।
কখন শুতে গিয়েছিলে?
ঘড়ি দেখিনি। তবে সেদিন মালটা বেশি টেনে ফেলেছিলাম স্যার।
সময়টা বলতে পারবে না?
বোধহয় ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। রীতা একটা পাঞ্চ তৈরি করেছিল। দারুণ জিনিস।
পাঞ্চ?
হ্যাঁ। দু-তিনরকম মদ মিশিয়ে।
.
যে লোকটা দরজা খুলল সে একজন চিনেম্যান চেহারার লোক। বেশ স্বাস্থ্যবান। শবর তার দিকে দু’সেকেন্ড চেয়ে রইল।
হু ডু ইয়া ওয়ান্ট?
এটা কি তোমার ঘর?
অফ কোর্স!
এখানে রীতা দাস বলে কেউ থাকে?
নো। আই লিভ অ্যালোন।
জুলেখা শর্মা বলে কেউ?
নো। হু দি হেল আর ইউ?
পুলিশ ইন্টেলিজেন্স।
মাই গড! কাম ইন।
ঘরে ঢুকে শবর চারদিকে চেয়ে দেখে নিল। বোর্ডিং হাউসের ঘর যেমন হয় তেমনই। দশ বাই বারো মাপেরই হবে। দেয়ালে খুব চড়া রঙের ওয়ালপেপার লাগানো। একটা সরু খাট, টেবিলের ওপর একটা স্টিরিয়োতে মাইকেল জ্যাকসনের ক্যাসেট বাজছে, একটা ওয়ার্ডরোব এবং নিত্য ব্যবহার্য কিছু জিনিস। একটা লোহার চেয়ার এগিয়ে দিয়ে লোকটা বলল, প্লিজ সিট ডাউন। তোমার বয়স কত?
থার্টি সিক্স।
ম্যারেড?
নট ইয়েট। নো মানি টু ম্যারি।
কী করো?
এলিট সিনেমার গলিতে আমার ব্যাগ তৈরির কারখানা আছে। এ ভেরি স্মল এন্টারপ্রাইজ।
তুমি ইন্ডিয়ান সিটিজেন?
অফ কোর্স!
এ ঘরে কত দিন আছ?
লাস্ট টেন ইয়ার্স।
রীতা দাস বা জুলেখা শর্মা নামের কোনও মেয়েকে চেনো?
না।
এ ঘরে কোনও মেয়ে আসে?
না। ওসব এখানে হয় না।
তা হলে কোথায় হয়?
ইফ আই নিড এ গার্ল আই গো টু হার।
থ্যাঙ্ক ইউ।
.
আপনার নাম?
সুনীতা রায়।
আপনি এই স্কুলের ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর?
হ্যাঁ।
কতদিন এখানে কাজ করছেন?
এগারো বছরেরও বেশি।
জুলেখা শর্মা বলে কেউ এখানে কাজ করে না বলছেন?
না। কোনওদিন নয়।
ছোটখাটো ছিপছিপে চেহারা, পুলিশ অফিসারের নাতনি।
না। এরকম কেউ এখানে কাজ করে না।
আপনাদের সব স্টাফ আজ উপস্থিত আছেন কি?
হ্যাঁ। ফুল স্টাফ।
আমি তাদের দেখতে পারি কি?
পারেন। তবে অনেকে এখন ক্লাসে আছেন।
আমি অপেক্ষা করব।
ওকে।
***
নমস্কার জয়িতাদেবী।
নমস্কার।
আমাকে দেখে আপনি বোধহয় খুশি হননি। পুলিশের দুর্ভাগ্য, তাদের দেখে কেউ খুশি হয় না।
না না, আপনি তো আপনার কাজ করছেন। বসুন।
আজ খুব বেশি জেরা করার নেই। শুধু দু’-একটা প্রশ্ন।
বলুন।
মিতালিদেবীর ঘর থেকে খুনের রাতে কিছু জিনিস খোয়া যায়।
জানি। শুনেছি।
অনেক সময়ে খুনি তার মোটিভ ঢাকতে চুরিটা সাজিয়ে নেয়। আমাদের অ্যাঙ্গেল অফ এনকোয়ারিতে তাই আমরা চুরিটাকে গুরুত্ব দিইনি। উনি কলকাতা কাস্টমসে যে ডিক্লেয়ারেশন দিয়েছিলেন তাতে দেখছি উনি সঙ্গে মাত্র দুশো ডলার এনেছিলেন। একটা হার আর বালা ছাড়া সোনাদানাও বিশেষ ছিল না। ওঁর সব গয়না আমেরিকায় এবং কলকাতায় ব্যাঙ্কের লকারে আছে। সুতরাং চুরির পরিমাণ বেশি নয়। এ ব্যাপারে আপনি কিছু বলতে পারেন?
পারি। মিতালিদির হ্যান্ডব্যাগে দশ হাজার ডলার ছিল।
দশ হাজার? বলেন কী?
টাকাটা উনি আমাকে দেখিয়েছিলেন।
সেই হ্যান্ডব্যাগটায় আর কী ছিল?
কয়েকটা গয়না।
অত ডলার উনি এনেছিলেন কেন জানেন? বিশেষ করে যখন এখানেও ব্যাঙ্কে ওঁর প্রচুর টাকা রয়েছে?
জানি। মিতালিদি একটু অগোছালো টাইপের। একটু আনমনাও। ভারতবর্ষে আসার সময়ে, প্লেন ধরার আগে বাড়ি থেকে বেরোবার মুহূর্তে ও দেখতে পায়, বিছানায় বালিশের তলায় ডলারের গোছাটা পড়ে আছে। টাকাটা ফেলে এলে চুরি যাওয়ার ভয় ছিল। তাই তাড়াতাড়িতে হ্যান্ডব্যাগে ঢুকিয়ে নেয়। হ্যান্ডব্যাগটা কি চুরি গেছে?
না। তবে ডলার আর গয়না চুরি হয়েছে।
ইস, অনেক টাকা, না?
হ্যাঁ। চুরির অ্যাঙ্গলটাকে আমরা এখন একটু গুরুত্ব দিচ্ছি। আপনার কি মনে পড়ে, মিতালিদেবী দেশে আসার পর কোনও মেয়ে ওর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল কি না?
অনেক মেয়ে এসেছিল। ওর বান্ধবীরা। রোজই তো আসত।
তাদের কথা বলছি না। বান্ধবী নয় এমন কেউ?
আমি তো সবসময়ে বাড়িতে থাকতাম না।
ছোটখাটো ছিপছিপে চেহারার একটি মেয়ে? মাজা রং?
মনে পড়ছে না।
ভাল করে ভাবুন।
জয়িতা ভাবল। তারপর মাথা নেড়ে বলল, না। তবে—
তবে?
একদিন একটা ফোন এসেছিল।
হ্যাঁ বলুন।
ফোনটা করেছিল একটা মেয়ে। আমিই ফোন ধরেছিলাম। মিতালিদিকে চাইছিল বলে আমি ওকেই ফোনটা দিই। অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল। মিতালিদি ফোনটার পর খুব রেগে গিয়েছিল। আমাকে বলল, কী যাচ্ছেতাই ব্যাপার বল তো! এ তো ব্ল্যাকমেল।
বটে? আপনি জানতে চাননি কে ফোনটা করেছিল?
চেয়েছিলাম। মিতালিদি বলল, একটা বাজে মেয়ে। চিনি না। খারাপ খারাপ কথা বলছিল।
ব্যস! আর কিছু নয়?
না। ব্যাপারটা মিতালিদি তেমন পাত্তা দিল না। তবে খুব রেগে গিয়েছিল, এটা মনে আছে।
০৭. মিঠু খুব ধীরে তার বিষণ্ণ মুখখানা তুলল
নমস্কার।
মিঠু খুব ধীরে তার বিষণ্ণ মুখখানা তুলল। ব্যাঙ্ক এখন ফাঁকা। বেলা তিনটে বেজে গেছে। টেবিলের ওপাশে শবর দাঁড়িয়ে।