আপনি কি জানেন যে, মিতালিদেবীর মিঠুবাবুর প্রতি মনোভাব বদলে গিয়েছিল?
না, আমি জানতাম না।
জানতাম না মানে তখন জানতেন না, কিন্তু এখন জানেন?
এখনও জানি না।
এই জেরক্স কপিগুলো দেখুন তো। এ কি মিতালিদেবীর হাতের লেখা?
হ্যাঁ।
কষ্ট করে একটু পড়বেন কি? সবটা পড়ুন।
জয়িতা পড়ল। শবর দাশগুপ্ত ঈগলের চোখে চেয়ে রইল তার মুখের দিকে। পড়ার পর জয়িতার হাত থেকে কাগজগুলো ফেরত নিয়ে শবর তার ব্রিফকেসে ঢোকাতে ঢোকাতে বলল, কিছু বুঝতে পারলেন?
হ্যাঁ। মিতালিদি মিঠুদার প্রতি সট হয়ে পড়েছিল।
এগজ্যাক্টলি। আপনি কি জানেন যে ওঁর সেই সফটনেস এতটাই ছিল যে উনি মিঠু মিত্রকে ওঁর যাবতীয় বিষয়সম্পত্তির কাস্টোডিয়ান করে দিয়েছেন?
জানি। মিঠুদা বলেছে।
জয়িতাদেবী, মিতালিদেবীকে কে খুন করেছে বলে আপনার মনে হয়?
জানি না।
জানতে বলছি না। লজিক্যাল অনুমান বলে তো একটা ব্যাপার আছে।
আমি জানি না।
তা হলে ঘটনাগুলো একটু সাজিয়ে দিই। আপনার সুবিধে হবে। মিঠু মিত্র একজন বড়লোকের একমাত্র সন্তান মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। বড়লোকের সুন্দরী মেয়ে যাকে বিয়ে করার মতো যথেষ্ট যোগ্যতা তার ছিল না। বরুণ ঘোষের বেনামা অ্যাকাউন্ট এবং সম্ভবত আরও দু-চারটি গুপ্ত খবর তিনি জানতেন। মে বি দেয়ার ওয়াজ এ টাচ অফ ব্ল্যাকমেল ইন দা ম্যারেজ। কিন্তু বিয়ে টিকল না। মিতালিদেবী ডিভোর্স করে আমেরিকায় চলে গেলেন। সুতরাং মিঠু মিত্রের তেমন লাভ হল না। কিন্তু কপালটা ভাল, তিনি আপনার সন্ধান পেয়ে গেলেন এবং একটা চমৎকার প্ল্যান করে রাখলেন। প্ল্যানটা অবশ্য একটু ফার ফেচেড, এটা আমি স্বীকার করছি। হয়তো প্ল্যান ওঁর ছিল না। কিন্তু সুযোগ এসে গেল। বরুণ ঘোষ মারা গেলেন এবং মিতালিদেবী দেশে ফিরলেন। দেখুন কীরকম গোল্ডেন অপরচুনিটি। মিতালিকে সরিয়ে দেওয়া গেলে দুটো কাজই হয়। এক, বহুঁকালের হারানো অপমানের শোধ নেওয়া এবং আপনাকে প্রচুর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী করে দেওয়া। শুধু তাই-ই নয়, আমেরিকাতেও বেশ ভাল সম্পত্তি থাকায় তার ইনহেরিটর হিসেবে আপনার এবং আপনার হাজব্যান্ড হিসেবে ওঁরও ভবিষ্যতে আমেরিকায় যাওয়া এবং গ্রিন কার্ড পাওয়ার সম্ভাবনা খুলে দেওয়া। সুতরাং মিঠু মিত্র এই সুযোগ ছাড়লেন না। কিন্তু মুশকিল দেখা দিল মিঠুর প্রতি হঠাৎ মিতালির প্রেম। মিতালিকে খুন না করে, শুধু আবার বিয়ে করে ফেললেই মিঠু মিত্রের উদ্দেশ্য সফল হয়ে যেত। কিন্তু আমার অনুমান, তিনি সত্যিই আপনাকে ভীষণ ভালবেসে ফেলেছিলেন। তাই মিতালিকে সরিয়ে দেওয়ার প্ল্যানেই স্টিক করে থাকতে হল। ওঁর কপাল সত্যিই তুলনাহীন। কারণ মিতালিদেবী মারা গেলেই যে আপনি ওঁর সম্পত্তি বা টাকাপয়সা হাতে পেতেন তা নয়। উত্তরাধিকার আইন কমপ্লিকেটেড এবং সাকসেশন সার্টিফিকেট পাওয়া সময়সাপেক্ষ। সেক্ষেত্রেও মিঠু কেল্লা মেরে দিলেন মিতালি ওঁকে কাস্টোডিয়ান করে দেওয়ায়। সুতরাং লজিক্যাল কনক্লশনে যাওয়া কি খুব শক্ত বলে মনে হচ্ছে আপনার? আপনি কাঁদছেন? গুড। আশা করি মূল্যবান চোখের জলটা আপনি সমাজের একজন জঘন্য অপরাধী, একজন ঠান্ডা মাথার খুনির জন্য অপব্যয় করছেন না। এই কান্নাটা যদি অসহায় হতভাগিনী মিতালিদেবীর জন্য হয়ে থাকে তবে ইট ইজ মোস্ট ওয়েলকাম।
আমি আর পারছি না। আমাকে আজ ছেড়ে দিন।
জয়িতাদেবী, আর একটা ছোট্ট প্রসঙ্গ আছে। খুব অপ্রিয় প্রসঙ্গ। কিন্তু জরুরি। আপনি বরং টয়লেট থেকে ঘুরে আসুন। চোখেমুখে ভাল করে জলের ঝাঁপটা দেবেন, ইউ উইল ফিল গুড। যান।
জয়িতা গেল। অনেকটা সময় নিয়ে চোখেমুখে জলের ঝাঁপটা দিল। তারপর আয়নায় নিজের মুখখানার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। মাত্র কুড়ি বছরের জীবন তাকে কত কিছু শেখাচ্ছে।
বাইরের ঘরে এসে বসতেই শবর হাসল, এই তো বেশ নরম্যাল লাগছে আপনাকে। গুড। এবার সেই কথাটা।
বলুন।
আপনি কি ভেবে দেখেছেন যে মিতালিদেবীকে খুনের পিছনে আপনারও একটা মোটিভ আছে?
আমার?
আরে না না, ঘাবড়াবেন না। আমি আপনাকে সন্দেহ করছি না। কিন্তু কথাটা খুব সংগত কারণেই উঠতে পারে।
আমি কেন খুন করব?
করেনওনি। কিন্তু পাবলিক প্রসিকিউটর মে রেইজ এ কোশ্চেন। প্রশ্ন তুলতে পারে মিঠু মিত্রের উকিলও। সব দিক ভেবে রাখা ভাল।
আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
বুঝিয়ে দিচ্ছি। আপনি মিঠুকে ভালবাসেন। ঠিক তো?
হ্যাঁ।
ভালবাসার জন্য মানুষ সব কিছু করতে পারে, স্বীকার করেন?
হ্যাঁ।
আপনি যখন মিতালিদেবীর বাড়িতে ছিলেন তখন নিশ্চয়ই আপনারা দুই বোন অনেক বিষয়ে কথা বলতেন।
হ্যাঁ। আমরা রাত দুটো-তিনটে পর্যন্তও আড্ডা মারতাম।
গুড। কী বিষয়ে কথা হত আপনাদের?
মোস্টলি আমেরিকা। ওখানকার লাইফ স্টাইল, লোনলিনেস, ঐশ্বর্য–এইসব নিয়ে।
হ্যাঁ হ্যাঁ, আমেরিকা তো থার্ড ওয়ার্ল্ড পিপলের কাছে সবচেয়ে বেশি আলোচ্য বিষয় হবেই। খুব স্বাভাবিক। ধরুন প্রশ্ন উঠল যে, এইসব গল্পের ফাঁকে ফাঁকে মিতালিদেবী আপনাকে তার হৃদয়ের পরিবর্তনের কথাও জানিয়েছিলেন। তিনি যে আসলে মিঠুকে ভুলতে পারেননি এবং নতুন করে তার প্রেমে পড়েছেন এবং রিকনসিলিয়েশনের চেষ্টা করছেন সেসব কথাও বলেছেন।
না, মিতালিদি বলেননি।
আহা, সে তো বটেই। কিন্তু প্রশ্ন উঠলে কী করবেন? বিশেষ করে প্রশ্নটা যদি হয় ভীষণ লজিক্যাল অ্যান্ড ডাউন টু আর্থ? তাই বলছিলাম, এগুলোও ভেবে রাখা ভাল।