সবকিছু করেন?
আমার কোনও কাজের লোক নেই। নিজেই সব করি।
তরকারি বা মাছ কুটতে পারেন?
পারি।
তরকারি কী দিয়ে কাটেন? বঁটি?
না। ছুরি দিয়ে।
কীরকম ছুরি?
কিচেন নাইফ।
দেখুন তো, এরকম ছুরি?
না, অত বড় নয়।
এর চেয়ে কতটা ছোট হবে?
আরও দু’ইঞ্চি ছোট।
আপনি কি জানেন মিতালিদেবী ঠিক এরকমই একটা কিচেন নাইফে খুন হয়েছেন?
জানি।
কীভাবে জানলেন?
কাগজে পড়েছি। আপনি কী মিন করতে চাইছেন?
আচ্ছা, মিতালিদেবী কি কখনও আপনাকে বলেছিলেন যে, তিনি অন্য কাউকে ভালবাসেন?
না তো!
ভাল করে ভেবে দেখুন।
এরকম কথা বললে আমার মনে থাকত।
বিয়ের সময় আপনার বয়স কত ছিল?
পঁচিশ-ছাব্বিশ।
আর মিতালিদেবীর?
আঠারো-উনিশ। তখন ও ডাক্তারি পড়ছিল।
আপনার কি কোনও প্রেমিকা আছে?
না।
মাত্র তেত্রিশ বছর বয়স, নামমাত্র বিয়ে, তবু কেউ জোটেনি?
না।
ণা? অথচ এর আগে পুলিশের জেরার উত্তরে আপনি বলেছেন যে, আপনার দুজন বান্ধবী আছেন।
বান্ধবী আর প্রেমিকা এক নয়।
তফাতটা কী?
অনেক তফাত।
তাদের মধ্যে একজনের নাম কি শিখা বরুয়া?
হ্যাঁ।
আর একজনের নাম মন্দিরা সেন?
হ্যাঁ।
এদের সঙ্গে আপনার কোনও অ্যাফেয়ার নেই?
না।
বিশ্বাস করতে বলছেন?
বলছি।
ঠিক আছে। ডিভোর্সের পরই আপনার স্ত্রী বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। ফর হায়ার স্টাডিজ। কোথায় গিয়েছিলেন আপনি জানেন?
শুনেছি আমেরিকায়।
আপনি বিদেশে তার ঠিকানা জানতেন?
ন্না।
জানতেন না। তা হলে তাকে যে আপনি গাদা গাদা চিঠি লিখতেন সেগুলো তার কাছে কীভাবে পৌঁছোত?
আমি তাকে চিঠি লিখতাম না।
হাসালেন মশাই। তার সুটকেসে আপনার একাধিক চিঠি পাওয়া গেছে।
আমি তাকে চিঠি লিখিনি।
কখনও নয়?
না।
আচ্ছা আপনার শ্বশুরমশাইয়ের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিল?
প্রথম দিকে ভালই ছিল। মিতালি আমাকে ছেড়ে ওঁর কাছে চলে যাওয়ায় উনি খুব দুঃখিত হয়েছিলেন। মিটমাটের চেষ্টাও করেছিলেন। তখন আমার সঙ্গে প্রায়ই দেখা করতেন, দুঃখ প্রকাশ করতেন। মিতালি শেষ অবধি ডিভভার্সের মামলা করায় উনি ভেঙে পড়েন। শুনেছি তখন থেকেই ওঁর হার্টের দোষ দেখা দেয়। তখন থেকেই আমাদের দেখাসাক্ষাৎ কমে যেতে থাকে।
আপনি কি বরুণ ঘোষকে সেসময়ে ব্রেট করেছিলেন?
না তো! থ্রেট করব কেন?
আপনি কি কুংফু ক্যারাটে জানেন?
খানিকটা শিখেছিলাম।
কেন শিখেছিলেন?
এমনি, শখ করে।
নাকি মস্তান হওয়ার জন্য!
মস্তান!
অবাক হচ্ছেন? বাসব হালদার নামে একজন লোককে তার দু’জন বন্ধুসহ আপনি একডালিয়ায় মারধর করেছিলেন। তারা আপনার বিরুদ্ধে পুলিশে ডায়েরি করেছিল। পুলিশ আপনাকে গ্রেফতারও করে। ঠিক কি না?
হ্যাঁ। বাসব হালদার নিজেই একজন গুন্ডা। একডালিয়ায় আমার একজন বন্ধু ভাড়াবাড়িতে থাকত। তাকে তুলে দেওয়ার জন্য বাড়িওলা বাসবকে লাগায়। বাসব তাকে প্রায়ই হ্যারাস করত, এমনকী তার বোনকে পর্যন্ত রাস্তা-ঘাটে টিজ করা শুরু করে। তখন বাধ্য হয়ে
বাসব হালদার গুন্ডা ছিল, এ কথা আপনিই বলছেন। তা হলে বলুন, গুন্ডাকে পেটাতে পারে আরও একজন গুন্ডাই, তাই না?
আমি গুন্ডামি করিনি, অন্যায়ের প্রতিকার করেছিলাম মাত্র।
রবিন হুড? অ্যাঁ! আপনি নিজেকে হিরো বলে প্রমাণ করতে চাইছেন নাকি? তা হলে বলি, আপনার বিরুদ্ধে আরও একটা পুলিশ কেস ছিল। প্রিন্স গোলাম মহম্মদ রোডে ন্যাটা দাসকে আপনি মেরে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন। বেচারা মারাও যেতে পারত। এফআইআর-এ আছে আপনি তাকে গুলিও করেছিলেন।
আমি! আমি কী করে গুলি করব? আমার কোনও বন্দুক পিস্তল নেই।
ধীরে, মশাই, ধীরে। গুলি আপনি করেছিলেন ঠিকই, তবে শেষ অবধি সেটা প্রমাণ হয়নি। প্রমাণ হয়নি বলেই ধরে নেবেন না যে আপনি নিরপরাধ। অনেক ক্রাইমই প্রমাণ হয় না। ন্যাটা দাসকে আপনি কেন মেরেছিলেন?
আমার জ্যাঠামশাই তাকে বিশ্বাস করে কিছু ডলার ভাঙাতে দিয়েছিলেন। টাকাটা সে মেরে দেয়।
কীরকম জ্যাঠামশাই?
গ্রাম সম্পর্কের। ওঁকে ছেলেবেলা থেকেই চিনি। জাহাজে চাকরি করতেন।
ন্যাটা দাসও কি গুন্ডা ছিল?
নিশ্চয়ই। পুলিশের রেকর্ডে তার বিরুদ্ধে অনেক কেস।
আপনি কি তাকে খুন করতে চেয়েছিলেন?
না। শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম।
খুনের একটা টেন্ডেন্সি আপনার কি বরাবর ছিল?
না।
তা হলে আপনি আসলে একজন হিরো? দুঃখের বিষয় এরকম একজন হিরোর মূল্য মিতালিদেবীই টের পেলেন না। যাকগে, বরুণ ঘোষের কথায় আসা যাক। আপনি তাকে কীভাবে ব্ল্যাকমেল করতেন বলুন তো!
ব্ল্যাকমেলের প্রশ্নই ওঠে না।
ওঠে। তার আগে জিজ্ঞেস করি, ব্ল্যাকমেল কথাটার অর্থ আপনি জানেন তো! গুপ্ত কথা ফাস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা বা সুবিধা আদায়। আপনি বরুণ ঘোষের অন্তত একটা গুপ্ত খবর জানতেন।
কী?
ওঁর বেনামা অ্যাকাউন্ট। রুদ্র সেন, পিনাকী শর্মা আর হরিপদ হাজরা–এই তিনটে ফিকটিশাস নামে ওঁর আরও তিনটে অ্যাকাউন্ট ওই ব্রাঞ্চে ছিল। আপনি কি তা জানতেন না?
জানতাম।
এটা কি গুপ্ত খবর নয়?
এটা ম্যালপ্র্যাকটিস। ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার জন্য কেউ কেউ করে। কিন্তু তেমন মারাত্মক অপরাধ নয় বলে গুরুত্ব না দিলেও চলে।
তা হলে কি বলতে চান, আপনি বরুণ ঘোষ সম্পর্কে আরও গুরুতর কোনও গুপ্ত কথা জানতেন?
না। তার সঙ্গে আমার পরিচয় সামান্য।
আপনি কি জানেন আমরা তার কিছু ডায়েরি পেয়েছি, যাতে তিনি লিখে গেছেন যে, তাকে কেউ নিয়মিত ব্ল্যাকমেল করত?