মা, ও লোকটা কি পাপী?
ছিঃ তোটন—
আমি পাপী। পঞ্চ ম-কার—
উঃ ওরকম কোরো না তো—
এবারকার মতো—
কী জ্বালা বাবা—
লক্ষ্মী সোনা—
বাঙ্গালোরেই যাও না–
না, না, তোমাকে ছেড়ে স্বর্গেও—
মিথ্যুক–মিথ্যুক–ভূতের ভয়ে—
পায়ে পড়ি—
আচ্ছা আচ্ছা, হয়েছে–
চল্লিশ মিনিট বাদে গাড়িতে পাশাপাশি বসে তারা ফিরে আসছিল। ক্ষণিকার গোল মুখশ্রীতে এখনও সকালের সেই অপারগ ক্ষমাশীলতা। ঘুমঘুম চোখ। অলস দৃষ্টিতে সামনের দিকে চেয়ে থেকে বলল, মিঠু মিত্রের লাভারটি কে বলো তো?
মিঠুর লাভার? যাঃ। কেউ নেই।
আছে।
কী করে বুঝলে?
জানি। হি হ্যাজ এ লাভার। তোমার বান্ধবী বলেছে।
কে বান্ধবী?
দ্যাট পুয়োর রেচে গার্ল। মিতালি।
কী বলেছে?
বেশ মাতাল মাতাল হয়ে গিয়েছিল সেদিন। আমার কাঁধে মাথা রেখে কাদছিল একটা সময়ে। তখন বলল, ডু ইউ নো হি হ্যাজ এ লাভার? শি লাভস হিম।
কিছুক্ষণ চুপচাপ গাড়ি চালাল সমীরণ। তারপর সতর্ক গলায় জিজ্ঞেস করল, মেয়েটার নাম কী?
সেটা বলেনি। সেজন্যই তো জানতে চাইছি।
সমীরণ মাথা নেড়ে বলল, আমিও জানি না। তবে তোমাকে একটা কথা বলি, মাতালদের কথায় কখনও বিশ্বাস কোরো না।
করি না। কিন্তু মিতালিকে সেদিন লক্ষ করেছ? শি ওয়াজ এক্সট্রিমলি ডিস্টার্বড। আর সেইজন্যই ওরকম আনাড়ির মতো মদ খাচ্ছিল। ডিস্টার্বড থাকার একটা কারণ তো আছে।
ব্যাপারটা লজিক্যাল নয়, কিন্তু শি ওয়াজ ইন লাভ উইথ মিঠু।
লজিক্যাল নয় কেন?
ডিভোর্সের এতদিন পর এবং এত দূরের দেশে থেকে হঠাৎ প্রেমে পড়ে যাওয়াটা কি স্বাভাবিক?
খুব স্বাভাবিক। মিতালির বিয়ে হয়েছিল অল্প বয়সে। তখন ওর ম্যাচিয়োরিটি ছিল না। পরে যখন ধীরে ধীরে পুরো ব্যাপারটা শান্তভাবে ভেবেছে তখন হঠাৎ বুঝতে পেরেছে, কাজটা ঠিক হয়নি। মিঠু মিত্র তো চমৎকার মানুষ। টল, হ্যান্ডসাম, কারেজিয়াস অ্যান্ড কাম। কোয়াইট লাভেবল।
সমীরণ চুপ করে থাকল। তারপর বলল, এনিওয়ে সেই রিডিসকভারি অফ লাভ থেকেই হয়তো ও ওরকম রেস্টলেস হয়ে পড়েছিল।
মোটেই নয়। শি ওয়াজ ডিস্টার্বড বিকজ শি কেম টু নো দ্যাট দেয়ার ওয়াজ অ্যানাদার উওম্যান।
তুমি শিয়োর?
শিয়োর।
কে হতে পারে?
লেট আস থিঙ্ক।
ইয়েস লেট আস থিঙ্ক।
ক্ষণিকা চোখ বুজে ধ্যানস্থ হল। সমীরণ ধ্যানস্থ হতে সাহস করল না, কারণ সে গাড়ি চালাচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ বাদে ক্ষণিকা চোখ খুলে বলল, একটা ব্যাপার মনে পড়েছে।
কী সেটা?
একটা মেয়ে টেবিলে বিরিয়ানি সার্ভ করছিল। বছর কুড়ি-একুশ বয়স। পরনে একটা সবুজ রঙের গাদোয়াল ছিল। মুখখানা ভারী মিষ্টি। একটু ড্রিমি মুখ। চোখ দুখানা খুব নরম। মনে আছে?
একটু গম্ভীর হয়ে সমীরণ বলে, তোমার মনে থাকা উচিত, ডিনারের সময় আমার বাহ্যজ্ঞান ছিল না।
ডিনারের অনেক আগেই তাকে দেখতে পেয়েছ নিশ্চয়ই। মনে পড়ছে?
আমি মেয়েদের দিকে তাকাই না।
শুধু তাকাও না, চোখ দিয়ে গিলে খাও।
আচ্ছা আচ্ছা, আমাকে মেডিটেট করতে দাও। তার আগে বলো এই মেয়েটি সম্পর্কে কী বলেছিল মিতালি?
কিছু বলেনি। মেয়েটা যখন বিরিয়ানির প্লেট নিয়ে ঘরে ঢুকছিল তখনই মিতালি একটু শিউরে উঠে যেন হিসিং সাউন্ড করে বলল, শি, শি ইজ ইন লাভ উইথ হিম!
ওই মেয়েটাকেই মিন করছিল?
অফকোর্স! মেয়েটাকে দেখেই যেন রিঅ্যাক্ট করল। আমি জানতে চাই মেয়েটা কে?
সবুজ শাড়ি আর অবুঝ মুখ তো!
অবুঝ মুখ মোটেই বলিনি।
এনিওয়ে, মনে পড়ছে না। শোনো, ছেলেরা কখনও মেয়েদের পোশাক মনে রাখতে পারে না।
তা হলে কী মনে রাখে?
বেশি মনে রাখে চোখ। দু’নম্বর, মুখশ্রী।
মুখশ্রীর কথা তো বললাম।
ডেসক্রিপশন ইনকমপ্লিট। আমি ভিসুয়ালাইজ করতে পারছি না।
চুলগুলো স্টেপকাট করা।
আর কিছু?
দু’দিকে দুটো মিষ্টি গজাত আছে। হাসলে বেশ দেখায়।
যাঃ, ও তো জয়িতা!
সে কে?
জয়িতা হল মিতালির খুড়তুতো বোন।
যাঃ বলছ কেন?
ও সেরকম মেয়েই নয়।
কীরকম মেয়ে?
ভীষণ ভাল টাইপের। ছেলেদের সঙ্গে মেশে না। খুব লাজুক।
ক্ষণিকা একটু হেসে বলল, লাজুকরা বুঝি প্রেমে পড়ে না?
তা নয়। কিন্তু মিঠুর সঙ্গে ওর কোনও কানেকশনই নেই যে।
খোঁজ নাও।
নিয়ে লাভ?
জাস্ট কৌতূহল।
সমীরণ মিটিমিটি হাসছিল। বলল, জয়িতা যদি কারও প্রেমে পড়ে তা হলে সে বেচারি ইহজীবনেও জানতে পারবে না যে একটা মেয়ে তার প্রেমে পড়েছিল।
তা হলে মিতালি জানল কী করে?
ইউ ক্যান্ট বি শিয়োর।
আই অ্যাম শিয়োর।
ওকে ওকে। মেনে নিচ্ছি। তবু মনে রেখো, মিতালি ও কথা বলার সময় মাতাল হয়ে গিয়েছিল।
জানি। আমি মিতালিকে সামলাচ্ছিলাম। ন্যাপকিন দিয়ে চোখ মুখ মুছিয়ে দিয়ে ঠান্ডা জল খাইয়ে হাত ধরে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসিয়ে দিয়ে আসি। সোফায় বসেই হড়হড় করে বমি করে দিল। ভাগ্যিস উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম, নইলে ডিনারটাই নষ্ট হত।
সমীরণ ভ্রু কুঁচকে বলল, সামথিং ইজ টিকিং।
হোয়াইট টিকিং?
ইউ মে বি রাইট।
আই অ্যাম রাইট।
ক্ষণিকা, শবর দাশগুপ্তের কানে কথাটা গেলে হি উইল মেক দি গার্ল আপ সাইড ডাউন।
কেন?
লোকটা ভীষণ পাজি। তোমাকেও জ্বালাবে।
মেয়েটাকে জ্বালালে তোমার ক্ষতি কী? হ্যাভ ইউ গট এ সফট কর্নার ফর হার?
আরে না। শি ইজ জাস্ট এ কিড।
মোটেই নয়। কুড়ি-একুশ যথেষ্ট বয়স। কীরকম বোন বললে?
আপন খুড়তুতো বোন। ওর বাবা অরুণ ঘোষ আমাদের প্রফেসর ছিলেন। মাই গড!