হ্যাঁ, ওঁকে পারমিশন দেওয়া হয়েছে।
ওঁকে ছেড়ে দিন স্যার। উনি কিছু করেননি।
কিন্তু কেউ তো করেছে। সেটা না জানা অবধি ওঁকে তো সন্দেহের বাইরে রাখতে পারি না।
ওরকম ভাল একটা লোককে সন্দেহ করা কি ঠিক?
৩. শিবাঙ্গী
কেমন আছেন ম্যাডাম?
আপনি কে বলুন তো? আপনাকে কি আমি চিনি?
না, আমাদের পূর্বপরিচয় নেই। আমার নাম শবর দাশগুপ্ত। আমি পুলিশের গোয়েন্দা।
ওঃ। হ্যাঁ, এরা বলে রেখেছিল যে, পুলিশ থেকে কেউ আমাকে জেরা করতে আসবে।
না ম্যাডাম, জেরা নয়। জাস্ট একটু কনভারসেশন। কিন্তু আপনি এখন কেমন আছেন?
ভাল নেই। মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা, তাকাতে কষ্ট হয়। তার চেয়েও বেশি কষ্ট মনের মধ্যে। আচ্ছা, আমি কি একটা লোককে খুন করেছি? সবাই বলছে আমি খুন করিনি। কিন্তু ওরা বোধহয় সত্যি কথাটা আমাকে বলতে চায় না। আপনি তো পুলিশ। আপনি তো জানেন আমি গুলি চালিয়ে একটা লোককে মেরে ফেলেছি।
না। আপনার গুলিতে সামান্য জখম হলেও কেউ মরেনি।
জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আমি বড্ড পাপবোধে ভুগছি। অনুশোচনায় বুক পুড়ে যাচ্ছে।
অনুশোচনার কী আছে? আপনার ঘরে একজন ইনট্রিউডার ঢুকলে তার বিরুদ্ধে আপনি অ্যাকশন নিতেই পারেন। আমার মতে আপনি ঠিক কাজই করেছেন এবং সাহসের সঙ্গে।
পিস্তলটিা জীবনে কখনও ব্যবহার করতে হবে বলে ভাবিনি। তা ছাড়া কাউকে লক্ষ করেও গুলি চালাইনি। ভেবেছিলাম দেয়ালের দিকে তাক করে ফায়ার করব, আর ওরা ভয় পেয়ে পালিয়ে যাবে।
ওরা অত সহজে ভয় পাওয়ার পাত্র নয়।
ওরা কারা বলুন তো!
সুপারি কিলার বললে বুঝতে পারবেন?
ওসব আজকাল সবাই বোঝে। আমি যাকে গুলি করেছি। সে তা হলে বেঁচে আছে তো!
আছে বলেই মনে হয়। তবে সে ধরা পড়েনি, পালিয়ে গেছে।
লুটপাট করতে এসেছিল তো।
মনে হয় না। আপনার ঘর থেকে কিছু চুরি গিয়ে থাকলে আপনি ছাড়া আর কেউ ভাল করে বুঝতে পারবে না। তবে চুরি বা ডাকাতিটা উদ্দেশ্য ছিল না।
সুপারি কিলার বললেন না? তার মানে কস্ট্রাক্ট কিলার তো?
হ্যাঁ।
আমাকে মারতে এসেছিল?
তাই তো মনে হয়।
কিন্তু কেন?
সেটাই তো এখন লাখ টাকার প্রশ্ন, কেন?
ভারী আশ্চর্য ব্যাপার তো! আমাকে কেন খুন করবে। কেউ? আমি তো কারও কোনও ক্ষতি করিনি। ভাবতেই যে আমার মাথা ঘুরে যাচ্ছে।
উত্তেজিত হবেন না। আমি তো শুনেছি আপনি একজন তেজস্বিনী মহিলা।
কে বলেছে?
সবাই তো বলছে।
তেজস্বিনীটিনি নই। তবে সাহসী বলতে পারেন। কিন্তু এই ঘটনার পর সব উলটেপালটে গেছে। খুব ভয় ভয় করছে এখন।
মাত্র গতকাল বিকেলে আপনার জ্ঞান ফিরেছে। এখনও আপনি খুব দুর্বল। আর শরীর দুর্বল থাকলে মনটাও ওরকমই হয়ে যায়।
বোধহয় তাই।
সংক্ষেপে ঘটনাটা একটু বলতে পারেন?
ঘটনা। ঘটনাটার তো মাথামুণ্ডুই নেই।
সেইটেই বলুন।
আমরা একটু আর্লি শুতে যাই রাতে। ধরুন দশটা নাগাদ। খুব প্রয়োজন ছাড়া কখনও লেট নাইট করি না। টিভি সিরিয়াল দেখার নেশা আমার নেই। তবে নন্দিনী বেশ রাত অবধি জেগে থাকে। ওয়ার্কহোলিক। কাজ ছাড়া থাকতে পারে না। আচ্ছা একটা কথা বলবেন?
কী কথা।
গতকাল থেকে আজ অবধি নন্দিনী তো আমাকে দেখতে এল না? এরা এই হাসপাতালে পেশেন্টদের মোবাইল ফোন অ্যালাউ করে না। তবু আজ সকালে এক সিস্টারকে ধরেকরে ফোন করিয়েছিলাম। কিন্তু নন্দিনীর ফোন সুইচ অফ আসছে। কী ব্যাপার বলুন তো!
কিছু না ম্যাডাম। আসলে ঘটনার ফলে উনি ভীষণ শৰ্কড। ওঁর নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়েছে। এখন নার্সিংহোমে ভরতি।
ওঃ গড! নন্দিনীও হাসপাতালে?
হ্যাঁ। আপনি কি ওঁকে খুব মিস করছেন?
ভীষণ। ও তো আমার মেন্টর। আমার গ্রুমিং তো ও-ই করে।
হ্যাঁ, যা বলছিলেন–
সেদিন রাত দশটায় শুয়ে পড়েছিলাম। আমার ঘুমের প্রবলেম আছে বলে সেডেটিভ খেতে হয়। কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। ঘুম ভেঙে ডিম লাইটে দেখি ঘরের মধ্যে দুটো লোক। তাদের মুখ বোঝা যাচ্ছিল না, কিন্তু হাতে কিছু ছিল।
কী ছিল?
পিস্তল বা ওরকম কিছু।
কথা বলেছিল?
আমি চেঁচিয়ে উঠেছিলাম ‘কে?’ বলে। তখন সামনের লোকটার হাতে একটা ছোরাও দেখতে পাই। আমার বালিশের পাশেই আমার পিস্তলটা থাকে। কোনওদিন কাজে লাগবে বলে ভাবিনি। ওই বিপদের মুখে পিস্তলটার কথা মনেও পড়েনি। কিন্তু হাতে ভর দিয়ে উঠে বসতে গিয়ে হঠাৎ ডান হাতে পিস্তলটা পেয়ে যাই। একটুও ভাবনা চিন্তা না করে গুলি চালিয়ে দিতেই লোকটা ‘যাঃ শালা!’ বলে একটা আর্তনাদ করে পড়ে গেল।
তারপর?
তার পরের ব্যাপারটা ব্ল্যাঙ্ক অ্যান্ড ব্ল্যাক আউট। পরে শুনেছি। আমার মাথায় গুলি করা হয়েছে। কিন্তু মাথায় গুলি লাগলে তো আমার বেঁচে থাকার কথা নয়।
আবার বলছি, আপনি তেজস্বিনী মহিলা। আর হ্যাঁ, গুলিটল মাথায় লাগলেও ভাইটাল পার্টে লাগেনি। ফ্যাটাল ইনজুরি নয়। তবে সিরিয়াস ইনজুরি। আপনি প্ৰায় পনেরো দিন কনশাস ছিলেন না।
আমার গুলিতে সত্যিই কেউ মরেনি তো!
না। আর মরলেও ভারতের সংবিধান অনুযায়ী তাতে আপনি অপরাধী সাব্যস্ত হন না। আত্মরক্ষার জন্য খুন করা অপরাধ নয়।
সংবিধান নিয়ে কি আমাদের জীবন চলে? আমার হাতে কেউ খুন হয়ে থাকলে–সে গুন্ডা-বদমাশ যা-ই হোক, আমার নিজেকে বরাবর অপরাধী মনে হবে।
আপনি ওদের কারও মুখ দেখতে পেয়েছিলেন?
আমার ঘরে জোরালো আলো থাকে না। আর ঘুমের সময় আমি আলো সহ্য করতে পারি না বলে খুব কম পাওয়ারের একটা আলো জ্বালানো থাকে। ফলে ঘরটা একরকম আবছা অন্ধকার ছিল। দুটো লোককে দেখেছিলাম, আবছা ভাবে। তবে তারা পুরুষ, আর মনে হয় বয়স খুব বেশি নয়।