নন্দিনী সম্পর্কে আমি তো প্ৰায় কিছুই জানি না স্যার। যেটুকু জানা ছিল বলেছি।
আপনার পাসওয়ার্ড কি আপনি কাউকে জানিয়েছেন, বা কোথাও লিখে রেখেছিলেন?
না স্যার। আমি সজ্ঞানে অন্তত করিনি।
কিন্তু পাসওয়ার্ড নন্দিনী জানত। সেটা কীভাবে সম্ভব?
আমার কথা যে কেউ বিশ্বাস করছে না তা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার তো কিছুই করার নেই।
আপনার বেডরুম আর শিবাঙ্গীর বেডরুম কি আলাদা?
হ্যাঁ স্যার। পাশাপাশি।
বরাবর কি এরকমই বন্দোবস্ত ছিল? দু’জন দুই ঘরে?
না। আগে আমরা একই বেডরুম আর বেড শেয়ার করতাম। পরে সম্পর্ক খারাপ হতে থাকায় এই সিস্টেম চালু হয়।
দুই ঘরের মধ্যে একটা লিংকিং দরজা আছে। সেটা কি বন্ধ থাকত?
হ্যাঁ স্যার। শিবাঙ্গীর দিক থেকে বন্ধ থাকত।
আর হলঘরের দিকের দরজাটা?
শিবাঙ্গীর কথা জানি না। তবে আমার বেডরুমের হলঘরের দরজাটা লক করা থাকত না। কারণ, আমার ঘরে তেমন কোনও ভ্যালুয়েবলস নেই। আমার হাতঘড়িটা বেশ দামি, আর মোবাইল ফোনটাও। আর হ্যাঁ, ল্যাপটপ। এগুলোর জন্য দরজা লক করার দরকার ছিল না। বাইরে সিকিউরিটি আছে, ফ্ল্যাটের দরজাও রাতে বন্ধ থাকে।
আমি চুরির কথা ভাবছি না। একটা সেনসিটিভ প্রশ্ন করছি। জবাবটা এড়িয়ে যাবেন না।
আমার লুকোনোর কিছু নেই।
শিবাঙ্গীর সঙ্গে আপনার সেক্সয়াল রিলেশন কি একদম ছিল না?
সেই অর্থে ছিল না বললেই হয়।
তার মানে কখনও সখনও আপনারা মিলিত হতেন কি?
সত্যি কথা বলতে কী, আমার দিক থেকে কোনও উদ্যোগ ছিল না। আপনাকে তো আগেই বলেছি, আমি শিবাঙ্গীকে খুব ভয় পেতাম। ওর সামনে খুব পাপবোধে ভুগতাম। নিজেকে ছোট মনে হত। কিন্তু শিবাঙ্গী কখনও সখনও চলে আসত গভীর রাতে। অ্যান্ড দ্যাট ওয়াজ দ্যাট।
কিন্তু আপনি তো রোজই মদ্যপান করে ঘুমোতেন?
কম বা বেশি এবং প্রায় রোজই। কিন্তু কখনও সখনও বাদও গেছে। আমার দাদুগত বছর অনেক বয়সে মারা যান। হি ওয়াজ মাইমেন্টর। দাদুর মৃত্যুর পর আমি দিন পনেরো এক ফোঁটাও মদ খাইনি। আমি খুব একটা রিলিজিয়াস লোক নই, তবু পুজোটুজোর দিনে আমি মদ খাই না।
আপনার কাজের লোকেরা অবশ্য তাই বলেছে। কিন্তু এবার আমি আপনাকে একটা অস্বস্তিকর প্রশ্ন করতে চাই।
করুন স্যার।
শিবাঙ্গীর সঙ্গে লাস্ট কবে আপনার ফিজিক্যাল রিলেশন হয়েছে?
একটু ভেবে বলতে হবে স্যার। দু’মিনিট।
ভাবুন।
মে মাসের শেষ দিকে বোধহয় চব্বিশ বা পঁচিশ তারিখে।
ভেবে বলছেন তো!
খুব অ্যাকুরেট না হলেও দুটোর মধ্যে যে কোনও একটা দিন। আর তার আগে, মে মাসের ষোলো তারিখে।
শিয়োর?
মোটামুটি শিয়োর।
আপনি কি ড্রাংকেন অবস্থায় এনগেজড হয়েছিলেন?
অন্তত খুব একটা সচেতনও ছিলাম না।
আপনি আপনার স্ত্রীর হোয়ার অ্যাবাউটস সম্পর্কে কতটা খবর রাখেন?
খুব একটা নয়। উই লেড সেপারেট লাইভস।
উনি কি এসে আপনাকে ডেকে ঘুম থেকে তুলতেন?
না। কখন আসত আমি টের পেতাম না। এমব্রেস করত, চুমু খেত। অ্যান্ড…
বুঝেছি। আপনার কখনও সন্দেহ হয়নি যে মহিলাটি শিবাজী নাও হতে পারে?
কী বলছেন স্যার? ইমপসিবল! শিবাঙ্গী ছাড়া অন্য কেউ হতেই পারে না।
উত্তেজিত হবেন না বিষাণবাবু। এই ফ্ল্যাটে আপনি, শিবাঙ্গী আর নন্দিনী ছাড়া আর কেউ কি রাত্রিবাস করে?
জাহ্নবী। ও মেয়েটা শিবাঙ্গীর খুব ন্যাওটা। অল্পবয়স থেকে আছে। শুনছিলাম, শিবাঙ্গী তার বিয়ের ব্যবস্থা করছে। কিন্তু এসবই তো পুলিশ জানে স্যার।
হ্যাঁ। তবু জানার তো শেষ নেই বিষাণবাবু। ফর ইয়োর ইনফর্মেশন মে মাসের চব্বিশ আর পঁচিশ তারিখে শিবাঙ্গী কলকাতায় ছিল না। ব্যাঙ্গালোর গিয়েছিল।
২. জাহ্নবী
জাহ্নবী গাড়ি চালাতে শিখে গিয়েছিল মাত্র পনেরো বছর বয়সে। রঘুবীর সিং শিখিয়েছিল। ম্যাডামের হুকুমে। সবে যখন ষোলোয় পা তখন একদিন ম্যাডাম নিয়ে গেল তার ড্রাইভিং লাইসেন্স করাতে। বয়সের গড়বড় তো ছিলই, কিন্তু ম্যাডাম কলকাঠি নেড়ে বয়স বাড়িয়ে লাইসেন্স বের করে দিয়ে বললেন, এখন থেকে তুই আমার গাড়ি চালাবি।
জাহ্নবীর বুক ধড়ফড়, ওরে বাবা! কলকাতার রাস্তায় আমি চালাব?
ভয় পেলে থাক। কিন্তু সাহস করলে পেরে যাবি। আমি তোর চেয়েও অল্প বয়সে গাড়ি চালিয়েছি।
জাহ্নবীর সাহসের অভাব ছিল না। প্ৰথম কয়েকদিন ম্যাডাম সামনের সিটে তার পাশে বসে একটু-আধটু গাইড করত। মাসখানেকের মধ্যে হাত-পা সব সেট হয়ে গেল। সেই থেকে সে ম্যাডামের ড্রাইভার।
ওখানেই থেমে থাকতে দেয়নি ম্যাডাম। বাড়িতে ম্যাডামের যে সব বিউটিশিয়ান আসত তাদের সঙ্গে ভিড়িয়ে দিয়ে ক্ৰ প্লাক, ম্যানিকিয়োর, পেডিাকিয়োর, মাস্ক তৈরি করা এবং কয়েক রকমের চুলের ছাঁট দিতেও শিখেছে সে। ম্যাডামের একটাই কথা ছিল, ট্রেনিং থাকলে ঝি খেটে মরতে হবে না, বুঝলি?
জাহ্নবীর এখন সতেরো বছর বয়স। ছিপছিপে জোরালো চেহারা। ম্যাডাম নিজের সঙ্গে তাকে জিম করাত, ওয়েট ট্রেনিং আর যোগা। জাহ্নবী বুঝতে পারছিল, ম্যাডাম তাকে তৈরি করে দিচ্ছেন। ম্যাডামের পারফিউম ল্যাবেও সে কাজ করে। ভারী মজার কাজ। কনসেনট্রেটেড নিৰ্যাস থেকে ব্যবহারযোগ্য পারফিউম তৈরি করা, খুব বড় ব্যাবসা নয়। মাত্র কয়েকজন বাঁধা খদের। তৈরি হতে না হতে বিক্রি হয়ে যায়। দাম খুব চড়া।
সতেরোতে এসে সব উলটেপালটে গেল। ম্যাডাম হাসপাতালে আইসিইউ-তে। বাঁচেন কিনা সন্দেহ। নন্দিনী ম্যাডাম খুন। পুলিশের জেরায় জেরায় বাঁঝরা হয়ে সে এখন বাধ্য হয়ে তাদের হাজরার বস্তিতে নিজের সংসারে এসে উঠেছে। ব্যাঙ্কে তার অ্যাকাউন্টে টাকা কম নেই। মাসের বেতন ব্যাঙ্কে জমা হয়ে যেত। কিন্তু এখন তার ভবিষ্যৎ কিছুটা অনিশ্চিত। কী হবে কে জানে! তবে জাহ্নবীর ভয়ডর বিশেষ নেই।