আপনার কাউকে সন্দেহ হয়?
না স্যার। তবে শুনছি, পুলিশ আমাকেই সন্দেহ করছে। এখনও কেন অ্যারেস্ট করেনি জানি না।
তার কারণ আপনার অ্যালিবাই। ঘটনাটা ঘটে পাঁচ তারিখে রাত বারোটার কাছাকাছি।
হ্যাঁ স্যার জানি। কিন্তু পুলিশের সন্দেহ আমি সুপার কিলার লাগিয়ে কাণ্ডটা করেছি।
সেটা খুবই সম্ভব।
হ্যাঁ স্যার, এরকম ঘটনা আকছার ঘটছে। আর আমার তো মোটিভও আছে, কী বলেন?
হ্যাঁ। তা হলে কি আপনি স্বীকার করছেন যে কাণ্ডটা আপনারই?
না স্যার। আমি শিবাঙ্গী বা নন্দিনীকে খুন করার কথা কখনও ভাবিনি। কারণ, খুন করার পিছনে কোনও একটা উদ্দেশ্য তো থাকবে! আমার তো কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। শিবাঙ্গীর জ্ঞান ফিরলে এবং কথা বলার মতো অবস্থা হলে ওর কাছ থেকেই জানতে পারবেন। যে, আমি স্বামী হিসেবে অযোগ্য হলেও ভিনডিাকটিভ নই। আমাকে ও কিছুদিন আগে মিউচুয়াল ডিভোর্সের কথা বলেছিল। আমি খুব অপরাধবোধের সঙ্গেই বলেছিলাম, আমি তো অপদার্থ, আমার সঙ্গে কোনও মহিলারই বসবাস করা সম্ভব নয়।
ডিভোর্সে আপনার মত ছিল?
ছিল। না থাকলেও ডিভোর্স ও পেয়ে যেত। দেড় কোটি টাকার একটা সেটলমেন্টের কথাও হয়েছিল।
বাঃ! এটাই তো মোটিভ! শিবাঙ্গী মারা গেলে আপনার দেড় কোটি টাকা বেঁচে যেত। তাই না?
হ্যাঁ স্যার। আমি তো বলেইছি আমার মোটিভের অভাব নেই। পুলিশ আমাকে অনায়াসে ঝুলিয়ে দিতে পারে। কিন্তু নন্দিনীকে খুন করার পিছনে আমার কী মোটিভ থাকতে পারে তা আমি ভেবে পাচ্ছি না।
মোটিভ আছে বিষাণবাবু।
আছে তা হলে তো হয়েই গেল। কিন্তু নন্দিনীর সঙ্গে আমার তো সম্পর্কই ছিল না স্যার।
আপনি কখনও নন্দিনীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চেক করেছেন কি?
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট! না স্যার, ফেসবুকের কথা লোকের মুখে শুনি বটে, কিন্তু আমি কখনও ফেসবুক চেক করি না। কখনও ইন্টারেস্টই হয়নি। কেন স্যার, ফেসবুকে কি নন্দিনী আমার সম্পর্কে কিছু বলেছে?
ক্যাটেগরিক্যালি নয়, তবে কিছু হিন্ট আছে। নন্দিনী একজন রহস্যময় পুরুষের কথা লিখেছে। তার পুরো নাম বা ছবি লোড করেনি। শুধু ইনিশিয়াল দেওয়া আছে, আর ইনিশিয়াল হল বি পি। আপনার নামের আদ্যক্ষর। আপনি কি জানেন নন্দিনী ছবি আঁকতে জানত কিনা?
না। স্যার, নন্দিনী সম্পর্কে আমি বেশি কিছুই জানি না। শুধু জানি সে ছিল শিবাঙ্গীর ডান হাত। তাকে ছাড়া শিবাজীর এক মুহূর্তও চলত না। দু’জনের খুব ভাব ছিল, বন্ধুর মতো। এমপ্লয়ার-এমপ্লয়ির মতো নয়।
এতে কি আপনি বিরক্ত হতেন?
না। স্যার, বিরক্ত হব কেন? বরং শিবাঙ্গী যে মনের মতো একজন সঙ্গিনী পেয়েছে তাতে আমি খুশিই হতাম।
নন্দিনী কখনও আপনাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ইন্টারফিয়ার করত?
না স্যার। কারণ শিবাঙ্গীর সঙ্গে আমার ঝগড়া হত না। বরং দু’জনের মধ্যে একটা নীরবতাই ছিল। কোলান্ড ডিসট্যান্স। তবে কখনও সখনও শিবাঙ্গী গায়ের ঝাল। ঝাড়ত। একতরফা। আমি কখনও জবাব দিতাম না। কারণ আমি সর্বদাই পাপবোধে ভুগতম। আমি যে অন্যায় করছি তা তো আমি জানি।
সেয়ানা পাপী?
হ্যাঁ স্যার, আমাকে ওটা বলাই যায়। কিন্তু নন্দিনীর ছবি আঁকা নিয়ে আপনি কিছু জানতে চাইছিলেন।
হ্যাঁ। তার কারণ, নন্দিনীর মোবাইলে আমরা আপনার কয়েকটা ছবি পেয়েছি।
মাই গড! আমার ছবি। নন্দিনীর মোবাইলে? অসভ্য ছবি নয় তো স্যার?
কেন, সেরকম সম্ভাবনা আছে নাকি?
আজকাল মডার্ন টেকনোলজি দিয়ে কত কী করা যায়।
না, অসভ্য ছবি নয়। আর ছবিগুলো কোনও অ্যালবাম থেকে তোলা হয়েছে বলেই মনে হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, নন্দিনীর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আপনার ছবি থেকে করা একটা স্কেচ আপলোড করা আছে। পাশে লেখা ‘মিস্টিরিয়াস বি পি ইজ মিরাজ টু মি’।
তার মানে কী স্যার?
আমার ডিডাকশন হল, নন্দিনী আপনার প্রেমে পড়েছিল।
এতে কি আমার খুশি হওয়া উচিত? কিন্তু স্যার, আমার তো শুনে কোনও খুশি হচ্ছে না।
খুশি না হওয়াই ভাল। কারণ এই মেসেজটা আপনাকে ফাঁসিয়ে দিতে পারে।
ও গড!
নন্দিনীর দিক থেকে আপনি কখনও কোনও ইশারা-ইঙ্গিত পাননি? কখনও না? ভাল করে ভেবে দেখুন।
ইশারা-ইঙ্গিত! বিশ্বাস করুন স্যার, নন্দিনী ওয়াজ এ ভেরি সিরিয়াস টাইপ অফ উওম্যান। সবসময়ে গভীর, সবসময়ে এনগেজড ইন সাম ওয়ার্ক। ওর গলার স্বরও আমি বিশেষ শুনতে পেতাম না। আর আমি বাড়িতে থাকতামই বা কতক্ষণ বলুন। সকালে ব্রেকফাস্ট খেয়ে ন’টার মধ্যে বেরিয়ে যেতাম। ফিরতে রাত। বেশিরভাগ সময়েই ডিনার বাইরে খেয়ে আসতাম। আর শিবাঙ্গী বা নন্দিনীও তো বাড়িতে বসে থাকার লোক নয়। শিবাঙ্গীর ব্যাবসা ছাড়াও নানা সোশ্যাল এনগেজমেন্ট আছে। সুতরাং, নন্দিনী কী করে ইশারা-ইঙ্গিত করতে পারে? বরং আমার মনে হয় শি হেটেড মি।
আমি আপনাকে আর একটু কনসেনট্রেট করতে বলছি। আর একটু ভাবুন। কোনওদিন কোনও ছোটখাটো ইনসিগনিফিক্যান্ট কিছু মনে পড়ে কি?
স্যার, শিবাঙ্গী আমাকে ঘেন্না করে ঠিকই, কিন্তু কোনও মহিলা আমার প্রতি ইন্টারেস্টেড হলে শি। উইল নো ইট ইমিডিয়েটলি। এবং সে ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয়।
আর ইউ শিয়োর?
হ্যাঁ স্যার। আমাদের বিয়ের পরই ওর এক বান্ধবী আমার সঙ্গে একটু ঢলাঢলি করার চেষ্টা করেছিল। শিবাঙ্গী তাকে এমন অপমান করে যে সে আর কখনও মুখ দেখায়নি।
শুনুন মশাই, নন্দিনী সম্পর্কে আপনার ধারণা খুব নির্ভরযোগ্য নয়। আপনার ই-মেলের পাসওয়ার্ড নন্দিনী কী করে জানল?