পারছি। কিন্তু একটা মুশকিল কী জানেন?
কী?
এই পুরো ক্রাইমটার পিছনেই আপনি রয়েছেন। অথচ আপনি কিছুই করেননি। কিন্তু রয়েছেন অনুঘটকের মতো। গোটা ব্যাপারটাই ঘটেছে আপনাকে কেন্দ্র করে এবং আপনার জন্যই। কিন্তু আপনি ক্যাটালিস্ট মাত্র।
আমি বুঝতে পারছি না।
ব্যাপারটা একটু জটিল। তবে একটু কনসেনট্রেট করলে বুঝতে পারবেন। আপনি যে চেহারা এবং স্বভাব নিয়ে জন্মেছেন তাতেই আপনার চারদিকে কিছু সমস্যা তৈরি হয়ে গেছে। তাতে আপনার কিছু করারও নেই। শক্ত মানুষ হলে আত্মরক্ষার কিছু পন্থা অবলম্বন করতে পারতেন। কিন্তু আপনি তেমন শক্ত মানুষ নন, তাই ভেসে গেছেন। এই বাড়িতেই দুখ-দুটি অসমবয়সি মহিলা আপনার প্রতি আসক্ত হয়েছে। একজন নন্দিনী। নন্দিনীর সঙ্গে আপনার গোপন অভিসার প্রথম টের পায় জাহ্নবী। কারণ জাহ্নবীও আপনার অনুরাগিনী। তার বয়স অল্প, তাই হিংসের জ্বালাপোড়াও বেশি। সে ব্যাপারটা শিবাঙ্গীকে বলে দেয়। লক্ষ করলে দেখতে পেতেন, আপনার আর শিবাঙ্গীর ঘরের বন্ধ দরজায় খুব সূক্ষ্ম ইলেকট্রনিক আই বসানোর জন্য একটা ছ্যাদা করা আছে। চালাকি করে সেটা মোম দিয়ে আটকানো। দরকার মতো যন্ত্রটা বসিয়ে নিয়ে আপনার ঘরের সব দৃশ্যই দেখা সম্ভব। পুলিশ যন্ত্রটা শিবাঙ্গীর ক্যাবিনেটে খুঁজেও পেয়েছে।
মাই গড!
সুতরাং আপনার আর নন্দিনীর ব্যাপারটা শিবাঙ্গীর কাছে গোপন ছিল না। নন্দিনী শিবাঙ্গীর বন্ধু হয়েও ওকে অ্যাসেসমেন্ট করতে ভুল করেছিল। ভেবেছিল, ধরা পড়লেও শিবাঙ্গী বড়জোর রাগারগি করবে, তাড়াতাড়ি ডিভোর্সের মামলা করবে। আর বড়জোর নন্দিনীকে তাড়িয়ে দেবে। শিবাঙ্গী তা করেনি। নন্দিনী যে তার বিশ্বাসের মর্যাদা দিল না। এটাতেই শিবাজী বোধহয় ফিউরিয়াস হয়ে ওঠে। আমি শুনেছি শিবাঙ্গী খুবই রাগী।
ঠিকই শুনেছেন। রাগলে ওর কাণ্ডজ্ঞান থাকে না।
শিবাঙ্গী আর জাহ্নবী মিলে ঠিক করে নন্দিনীকে সবক শেখাতে হবে। জাহ্নবী ভিক্টরকে ঠিক করে দেয়। ভিক্টর ছোটখাটো উঠতি মস্তান। বোধহয় দু’লাখ টাকার কন্ট্রাষ্ট্রে রাজি হয়ে যায়। পুলিশ শিবাঙ্গীর ব্যাঙ্কে ক্যাশ উইথড্রয়াল চেক করে দেখেছে, জুন মাসের এক তারিখে এক লাখ টাকা ক্যাশ তোলা হয়।
তারপর?
কাহিনিটা একটু জটিল। কথা ছিল খুনটা করবে একা ভিক্টর। সিকিউরিটিকে এড়িয়ে বাড়ি ঢোকার পথ সম্ভবত ছক করে দিয়েছিল জাহ্নবী। ভিক্টর পেছনের দেওয়াল টপকে ঢোকে, গ্যারেজের গাড়ির আড়ালে গা-ঢাকা দিয়ে ওপরে ওঠে। ওর ফ্ল্যাটে ঢোকার ব্যবস্থা শিরাঙ্গাই করে দেয়। কিন্তু একটা মস্ত গণ্ডগোল হয়েছিল।
কীসের গণ্ডগোল?
শিবাজী শত্রুর শেষ রাখতে চায়নি। ভিক্টরকে বলা ছিল সে একা আসবে, নন্দিনীকে খুন করবে, তারপর শিবাঙ্গীর কাছ থেকে বাকি এক লাখ টাকা নিয়ে সরে পড়বে। শিবাঙ্গীর প্ল্যান ছিল, ভিক্টর টাকা নিতে ঢুকলেই আগে থেকে প্ৰস্তুত শিবাঙ্গী তাকে গুলি করে মেরে দেবে।
সর্বনাশ! শিবাঙ্গী কি এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে?
পারে। এবং তার পিছনে আপনি এবং শিবাঙ্গীর ইগো। তার প্ল্যান মতো ঘটনাটা ঘটলে শিবাঙ্গী হয়তো উতরেও যেত। কিন্তু গণ্ডগোল হল ভিক্টর একা খুন করতে আসেনি। সঙ্গে বাদুকেও এনেছিল। হয়তো একা আসতে সাহস পায়নি। আর ওই জন্যই প্ল্যানটা ভেস্তে গিয়েছিল। নন্দিনী অনেক রাত অবধি জেগে তার ঘরে কাজ করে। সম্ভবত বাইরের দরজা খুলে কেউ ঢুকেছে টের পেয়ে সে ব্যাপারটা দেখতে আসে এবং খুন হয়ে যায়। তারপর বাকি টাকা নিতে ভিক্টর শিবাঙ্গীর ঘরে যায়। শিবাঙ্গী তৈরি হয়েই ছিল। ভিক্টর কাছাকাছি হতেই সে গুলি চালায়। কিন্তু প্রবলেম হল, ম্যাডামের শুটিং প্র্যাকটিস ছিল না। আর হ্যান্ডগানগুলোর ব্যারেল ছোট বলে বেশিরভাগ সময়েই তা হয়ে যায়। এরাটিক। গুলি লাগে। ভিক্টরের বা কঁধে। সে সঙ্গে সঙ্গে পড়ে যায়। ম্যাডাম হয়তো তাকে ফিনিশ করতে পারত, কিন্তু বাদ সাধল বাদু। সে গুলির আওয়াজ পেয়েই ছুটে এসে ম্যাডামের হাতে পিস্তল। দেখেই ফায়ার করে।
আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি কি একটু জল খেতে পারি?
অবশ্যই।
এবার জল খেতে গিয়ে কাঁপা হাতে জল চলকে পড়ল বিষাণের বুকে। জল খেয়ে দম ধরে বসে রইল একটু। তারপর ধরা গলায় বলল, এবার বাকিটা বলুন মিস্টার দাশগুপ্ত।
ম্যাডাম আগুন নিয়ে খেলছিলেন, বুঝতে পারেননি। বাদুর গুলিতে ওঁর মারা যাওয়ার কথা। কপালজোরে বেঁচে গেছেন।
হ্যাঁ, ডাক্তাররাও বলছিলেন, উনি খুব অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন। স্কালে ঢুকলেও গুলি ভাইটিাল জায়গাগুলোকে টাচ করেনি।
জ্ঞান ফেরার পর শিবাঙ্গীর নতুন প্রবলেম দেখা দিয়েছে উনি জানেন না, নন্দিনী সত্যিই মারা গিয়েছে কিনা বা খুনিরা ধরা পড়েছে কিনা। ওঁর কাছে খবরের কাগজ, মোবাইল বা টিভি নেই। ডাক্তাররা সবাইকে বলে দিয়েছে ওঁকে কোনও খবর দেওয়া চলবে না। আমাকে উনি বারবার নন্দিনীর কথা জিজ্ঞেস করছিলেন।
আমাকেও করেছে। জাহ্নবীকেও।
তবে মনে হয় তিন-চারদিন আগে উনি সত্যটা জানতে পেরেছেন যে, নন্দিনী মারা গেছে। এবং খুনিরা ধরা পড়েছে।
কী করে বোঝা গেল?
উনি এখন ড্যামেজ কন্ট্রোল করার জন্য প্ৰাণপণ চেষ্টা করছেন।
কীভাবে?
তিনদিন আগে উনি জাহ্নবীকে দিয়ে ওঁর অ্যাকাউন্ট থেকে এক লাখ টাকা ক্যাশ তুলে ভিক্টরের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আর ভিক্টরের পক্ষে ব্ৰজবাসী দত্তকে দাড় করিয়েছেন। ব্ৰজবাসী একজন ধুরন্ধর ক্রিমিনাল ল-ইয়ার। উদ্দেশ্যটা স্পষ্ট। যাতে ভিক্টর কিছু কবুল না করে। আমার কাছে ও যা বলেছে তার রেকর্ড নেই। সুতরাং আদালতে ও বয়ান পালটাবে।