আপনি কি কখনওই টের পাননি যে, নন্দিনী আপনার প্রতি আসক্ত?
এ প্রশ্নের জবাব তো দিয়েছি।
না দেননি। আপনি এড়িয়ে গেছেন।
কিছুক্ষণ চুপ করে চিন্তিত মুখে রইল বিষাণ। তারপর বলল, আমার তেমন সূক্ষ্ম অনুভূতি নেই।
তার মানে কী? একটু এক্সপ্যান্ড করবেন?
শুনলে আমার ওপর আপনার হয়তো ঘেন্না হবে।
আমি ক্রিমিনাল ঘেঁটে বুড়ো হলাম, আমার রি-অ্যাকশন অত সহজে হয় না।
এটাও হয়তো ক্রাইম। পনেরো-ষোলো বছর বয়সেই আই ওয়াজ সিডিউসড বাই এ উওম্যান। আমার দূরসম্পর্কের এক বউদি, বয়সে সাত-আট বছরের বড়। সিডাকশনটা চার-পাঁচ বছর ধরে চলেছিল। প্রেম নয়, জাস্ট সেক্স। সেক্স অ্যান্ড সেক্স। কোনও অদ্ভুত কারণে আমি মেয়েদের ইজি টার্গেট। ওই শুরু। তারপর আরও ঘটনা। কী বলব, আই ওয়াজ অলমোস্ট ড্রেইন্ড আউট বাই উইমেন ইন দ্যাট আর্লি এজ। কাউকেই রিফিউজ করতাম না, একটা অ্যাডভেঞ্চারের আনন্দও তো ছিল।
তারপর? গো অ্যাহেড।
এর ফলে আমার রোমান্টিক সেন্সটাই ভোঁতা হয়ে গেল। আপনাকে তো বলেইছি আমরা বন্ধুরা অনেক সময়েই পয়সা দিয়ে মহিলা জুটিয়ে নিতাম। এখন বোধহয় আমার তেত্রিশ বছর বয়স। এখন টের পাই মহিলাদের প্রতি আমার কোনও লাগামছাড়া আকর্ষণ নেই। বড্ড বেশি ব্যবহৃত হলে বোধহয় এরকমই হয়। আপনার নিশ্চয়ই আমাকে লম্পট
বলে মনে হচ্ছো!
লম্পট নন, তা বলছি না। তবে লাম্পট্য থাকলেও আপনি বোধহয় কোনও মহিলাকে কখনও সিডিউস করেননি!
না। তার দরকার হয়নি। বরাবর আমিই সিডিউসড হয়েছি।
তার কারণ আপনার ভাল চেহারা এবং সুইট পারসোন্যালিটি।
কে জানে কী! তবে মেয়েদের কাছে অ্যাট্রাকটিভ হওয়ার জন্য আমি কোনওদিনই কোনও চেষ্টা করিনি। যা হয়েছে এমনিতেই হয়েছে। তবে ইদানীং আমি মাঝে মাঝে রিমোর্সও ফিল করি। আমার ভীষণ প্রিয় এক বন্ধু আছে, ইন্দ্ৰনীল। সে সন্তুর বাজায় এবং নানা জায়গায় প্রোগ্রাম করে। সে বিয়ে করার পর তার নতুন বিউটি যখন আমাকে ইশারা-ইঙ্গিত করতে শুরু করল এবং টেলিফোনে নানা সাংকেতিক কথা বলতে এবং মেসেজ পাঠাতে শুরু করল, তখন হঠাৎ খুব আত্মগ্লানি হল আমার। মনে হল ইন্দ্ৰনীলের স্ত্রীকে ভোগ করলে আমি আর আয়নায় নিজের মুখের দিকে তাকাতে পারব না। জোর করে সব কমিউনিকেশন বন্ধ করে দিলাম। মেয়েটা মরিয়া হয়ে অনেক পাগলামি করেছিল। ফলে শিবাঙ্গীর সঙ্গেও আমার ভুল বোঝাবুঝি হয়।
তার মানে, আপনি কখনও তেমন করে কারও প্ৰেমে পড়ার সময় পাননি।
প্রবলেমটা অ্যাটিচুডের। সময়ের নয়। কিন্তু আপনি আমাকে বোধহয় নন্দিনীর বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করেছিলেন।
যদি আপত্তি না থাকে তা হলে বলুন।
প্রথমেই ক্ষমা চাইছি যে, আমি আপনাকে একটু মিথ্যে কথা বলেছিলাম। আসলে মেয়েটি মারা গেছে, তার সম্পর্কে তাই কথাটা বলতে ইচ্ছে করেনি। আমার। এখন ভাবছি সত্য গোপন করলে হয়তো পুলিশের কাজের অসুবিধে হবে। তাই বলছি যে, হ্যাঁ, নন্দিনীও আমাকে সিডিউস করেছে। কয়েকবার।
শিবাঙ্গী পাশের ঘরেই আছে, জেনেও?
হ্যাঁ। বোধহয় মেয়েদের এসব ব্যাপারে সাহস একটু বেশিই। আর নন্দিনী বোধহয় চাইত ধরা পড়তেই। তাতে শিবাঙ্গীর সঙ্গে আমার দূরত্ব আরও বাড়বে।
শিবাঙ্গী কি টের পেয়েছিলেন?
না। ও ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমোয়।
আপনার ধারণাটা বোধহয় ভুল।
কেন ও কথা বলছেন?
সেটা পরে বলছি। এবার আরও একটা সেনসিটিভ প্রশ্ন।
বলুন।
নন্দিনী ছাড়া আর কেউ কি আপনার সঙ্গে উপগত হতে চেয়েছে। এ বাড়িতে?
না না! আর কে?
একটু ভেবে বলুন।
এসব কি আর ভেবে বলতে হয়?
আপনি বলতে চাইছেন না, কিন্তু আমি যে জানি।
হঠাৎ বিষাণের মুখটা লাল হয়ে উঠল। টেবিলের ওপর রাখা একটা জলের বোতল থেকে খানিকটা জল খেল। তারপর কেমন যেন কুঁকড়ে গিয়ে দুহাতে মুখটা ঢেকে চাপা গলায় বলল, প্লিজ, প্লিজ মিস্টার দাশগুপ্ত, লিভ হার অ্যালেন। শিইজ এ কিড ওনলি। এ মাইনর।
শুনুন বিষাণবাবু, ভারতের সংবিধান মতে একটি মেয়ে আঠারো বছরের আগে অ্যাডাল্ট বলে গণ্য হয় না। কিন্তু মানুষের যৌবন তো সংবিধান মেনে আসে না! তেরো-চোদ্দো বছর। বয়সে একটা মেয়ের ঋতুচক্র শুরু হয়, দেহবোধ আসে। সংবিধানের নিয়মে আঠেরো বছর। বয়সের আগে মেয়েদের বিয়ে করা নিষিদ্ধ। কিন্তু সংবিধান তো বলেনি। আঠারোর আগে প্রেমে পড়া চলবে না।
কিছুক্ষণ ঝুম হয়ে চোখ বুজে বসে রইল বিষাণ। তারপর বলল, আপনি জানেন না, আমার মেয়ের বয়সও এখন সতেরো।
আপনার মেয়ে?
হ্যাঁ। আমার যে বউদির কথা আপনাকে বলেছিলাম, মাই ফাস্ট অ্যাডভেঞ্চার, তার ফলেই মেয়ের জন্ম। যদিও অবৈধ।
কী করে শিয়োর হলেন যে, আপনারই মেয়ে। ডিএনএ টেস্ট করিয়েছেন?
তার দরকার হয়নি। সেই মেয়েকে দেখলেই আপনিও বুঝতে পারবেন। তার মুখে হুবহু আমার মুখের ছাপ। পাছে কেউ মিলটা ধরে ফেলে সেই ভয়ে আমি ওদের বাড়ির ত্ৰিসীমানাতেও যাই না। আরও একটা ভয়। মেয়ে তো জানে না যে, আমি ওর বাবা। তাই যদি বাবা হিসেবে না দেখে পুরুষ হিসেবে দেখতে শুরু করে তা হলেই সর্বনাশ!
শবর একটু হাসল, আপনার ট্রাজেডিটা আমি বুঝতে পারছি।
লম্পট হলেও বর্বর তো নই। তাই এই মেয়েটা যেদিন আমার বিছানায় ঢুকেছিল সেদিন আমার নিজের ওপরেই খুব ঘেন্না হল। ওকে ঘর থেকে বের করে দিলাম। খুব রাগারাগিও করেছিলাম, মনে আছে। পরদিন এসে পায়ে ধরে ক্ষমা চাইল। বলল, আর ওরকম করব। না। আমাকে তাড়িয়ে দেবেন না। আমি শুধু আপনার দেখাশোনা করব। মিস্টার দাশগুপ্ত, আপনি কি ব্যাপারটা বুঝতে পারছেন?