লম্বা না বেঁটে?
লম্বাও না, বেঁটেও না। গড়পড়তা হাইট।
পোশাক?
এই তো, আপনি তো আমাকে শেষ অবধি জেরাই করছেন। তাই না? অথচ বললেন কনভার্স করতে চান!
শবর হেসে ফেলল। তারপর বলল, মাপ করবেন। কেসটা এমন ঘাড়ে চেপে আছে যে, বে-খেয়ালে আপনার ওপর প্ৰেশার ক্রিয়েট করে ফেলেছি হয়তো।
আপনার হাসিটা কিন্তু ভারী সুন্দর! আচ্ছ। আপনি কি একটু শক্ত ধাতুর লোক?
ওকথা বলছেন কেন?
আপনার চোখ দুটো কিন্তু ভীষণ পেনিট্রেটিং ! তাকালে যে কেউ একটু ভয় পাবে।
দয়া করে আপনি যেন ভয় পাবেন না। কারণ আমি ইতিমধ্যেই আপনাকে সাহসী বলে মনে করতে শুরু করেছি।
আপনাকে দেখে মনে হয় না যে, আপনি মহিলাদের কমপ্লিমেন্ট দিতে পারেন।
ফাঁকা কমপ্লিমেন্ট নয় ম্যাডাম। যাক গে, আর কিছু যদি মনে পড়ে তা হলে বলুন। খুব বেশি ষ্ট্রেস-এর দরকার নেই। জাস্ট চোখ বুজে একটু ভেবে দেখুন। সেই রাতের আর কোনও ডিটেলস মনে পড়ে কিনা।
নিশ্চয়ই চেষ্টা করব। কিন্তু আমি যখন মারা যাইনি আর ডাকাতরাও তেমন কিছু নিতে পারেনি তখন তদন্তের কি আর খুব একটা দরকার আছে? এখন থেকে একটু অ্যালার্ট থাকলেই তো হবে।
কিন্তু পুলিশকে তো শেষ পর্যস্ত তদন্ত করে দেখতেই হবে। আমরা তো এইজন্যই বেতন পাই।
তা অবিশ্যি ঠিক। আপনি যখন বলছেন তখন আমি নিশ্চয়ই সেই রাতের ডিটেলস মনে করার চেষ্টা করব। এখানে আমার একটুও ভাল লাগছে না। কবে যে এরা ছাড়বে।
আপনার কামব্যাকটা খুব অ্যামেজিং। ডাক্তাররা আশাই করেনি যে আপনার এত কুইক রিকভারি হবে। মনে হয়। আর দু-চারদিনের মধ্যেই আপনি ছাড়া পেয়ে যাবেন। বাই দি বাই, আপনার হাজব্যান্ডের সঙ্গে দেখা হয়েছে?
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল শিবাঙ্গী। তারপর সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে বলল, হয়েছে। বেশ রোগ হয়ে গেছে, মুখভরতি দাড়ি-গোঁফ। চিনতেই পারিনি প্ৰথমে।
কখন দেখা হল?
আমার কনশাসনেস ফিরেছে শুনে কাল রাতেই এসেছিল। সঙ্গে জাহ্নবী।
তখন তো ভিজিটিং আওয়ার্স নয়।
আপনি জাহ্নবীকে চেনেন না, একটা বিচ্ছু। ও কয়েকদিন এসেই হাসপাতালের সকলকে পটিয়ে নিয়েছে। ও তো যখন—তখন আসে-যায় বলে শুনেছি।
হ্যাঁ, মেয়েটা বেশ বুদ্ধিমতী। আপনার খুব প্রিয় পাত্রী বুঝি?
আমার তো ছেলেপুলে নেই। ওর ওপর একটু মায়া পড়ে গেছে।
আপনি ওকে অল্পবয়সেই গাড়ি চালানো শিখিয়ে লাইসেন্স বার দিয়েছেন, শুনলাম।
মাই গড! কী বোকা। পুলিশের কাছে ওসব বলতে হয়?
ভয় নেই। আমরা আইনের পথ ধরে আর ক’জন চলি? তবে মাইনরের গাড়ি চালানো তার নিজের এবং অন্যদের পক্ষে বিপজ্জনক।
সরি শবরবাবু, কাজটা অন্যায় হয়ে গেছে। কিন্তু ওকে আমি একটু তাড়াতাড়ি পাকিয়ে তুলতে চেয়েছিলাম। পড়াশোনাটা হয়নি, আর সব কাজে পাকা।
ওর বোধহয় নন্দিনী ম্যাডামের সঙ্গে একটু ইগো প্রবলেম আছে!
কী করে বুঝলেন? কিছু বলেছে বুঝি?
ভেবে বলেনি। তবে বুঝিয়ে দিয়েছে।
ওই তো প্রবলেম। অথচ নন্দিনীকে যে ও কেন পছন্দ করে না তাও বুঝি না বাবা।
নন্দিনীও কি ওকে অপছন্দ করে?
না না! নন্দিনী সেরকম মেয়েই নয়। ভীষণ বুদ্ধিমতী। আপনি নিশ্চয়ই নন্দিনীকে মিট করেছেন?
করেছি।
চার্মিং না?
উনি সুস্থ নন বলে আমার সঙ্গে বিশেষ কথা হয়নি। নন্দিনীর সঙ্গে আপনার কবে, কোথায় পরিচয়?
পরিচয় তো অনেক দিনের। আমার যখন ষোলো-সতেরো, ওর তখন চোঁদ-পনেরো। ওই সময়েই ওরা আমাদের পণ্ডিতিয়া টেরাসে ফ্ল্যাট ভাড়া করে এল।
অর্থাৎ যখন আপনার বয়স ষোলো-সতেরো আর নন্দিনীর চৌদ-পনেরো?
একজু্যাক্টলি।
ওঁর ব্যাকগ্রাউন্ড?
খুব সাদামাটা। বাবা পোস্টাল ডিপার্টমেন্টে চাকরি করতেন। ওরা দুই ভাই-বোন। ভাই ছোট। আমাদের বেশ ভাব হয়ে গেল।
নন্দিনী বিয়ে করেননি কেন?
বিয়ে করেনি মানে করবে না তো নয়। মাত্র তো পাঁচিশ বছর বয়সী।
কোনও বয়ফ্রেন্ড?
না। একটু চুজি। আচ্ছা নন্দিনীকে নিয়ে আমরা কথা বলছি কেন?
কৌতুহল। যাক গে। আপনি তাড়াতাড়ি সেরে উঠুন।
এ জায়গাটা বড্ড বিচ্ছিরি। ঘরে টিভি নেই, খবরের কাগজ দেওয়া হয় না, মোবাইল বা ল্যাপটপ কিছুই অ্যালাউ করে না। এরা। শুনছি। নাকি বাইরে পুলিশও চব্বিশ ঘণ্টা পাহারা দেয়। সত্যি নাকি?
হ্যাঁ। সাবধানের মার নেই। আর আপনি আছেন আইসিইউ-তে। এখানে খবরের কাগজ, টিভি, মোবাইল সব নিষিদ্ধ।
সারাদিন কথা না বলে বা কাজ না করে কি থাকা যায়?
এখন বিশ্রাম নিন। কাজের জন্য সামনে লম্বা সময় পড়ে আছে। আজ তো কথাও অনেক বলেছেন। আমিই বকিয়েছি আপনাকে। এবার আসি?
চলে যাচ্ছেন? আবার আসবেন কিন্তু।
হাসালেন ম্যাডাম। পুলিশকে কেউ আবার আসতে বলে না। পুলিশ মানেই বিপদ।।
তা হতে পারে। কিন্তু আপনার সঙ্গে কথা বলে আমার তো বেশ লাগল। আমি বাড়ি ফিরে গেলে একদিন চা খেতে আসবেন।
আপনি এখন বোর হচ্ছেন বলে আমার সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগছে। নইলে আই অ্যাম অ্যান আনকমফিটেবল কম্পানি।
একদম নয়। আবার এসে দেখুন না। আমি আনকমফর্টেবল ফিল করি কি না।
ঠিক আছে ম্যাডাম। বাই।
দাঁড়ান, দাঁড়ান। একটা কথা হঠাৎ মনে পড়ল।
কী কথা?
একটা নাম।
কার নাম?
তা জানি না। তবে ব্ল্যাক আউট হওয়ার সময় কে যেন বলল, বাচ্চু, আর চালাস না…
বাচ্চু?
হ্যাঁ।
আর কিছু মনে পড়ছে?
থ্যাঙ্ক ইউ ফর দি লিড।
ফের বলছি। আবার আসবেন।
৪. শবর দাশগুপ্ত
দু’দিন পর এক ভোরবেলা পুলিশ বাদু মণ্ডলকে তুলে নিল তিলজলা থেকে। তার দু’দিন পর ভিক্টর ধরা পড়ল পার্ক সার্কাসে। দু’জনেরই প্ৰাথমিক স্টেটমেন্ট, তারা ডাকাতি করতে ঢুকেছিল। খুন করার উদ্দেশ্য ছিল না। কেউ সুপারি দেয়নি। বাধা পড়ায় গুলি চালিয়ে দিতে হয়। এই বিবরণ বার চারেক চার পুলিশ অফিসারকে দেওয়ার পর অবশেষে একদিন শবর দাশগুপ্তের মুখোমুখি হতে হল তাদের। এবং সঙ্গে সঙ্গে তারা বুঝতে পারল, বিপদ।।