হ্যাঁ।
সমাজটা কোথায় যাচ্ছে শবর?
আস্ক ইয়োর ডটার্স। শুধু ছেলে দুটোকে দোষ দিয়ে কী লাভ?
একটা থাপ্পড় খেয়ে যেন কুঁকড়ে গেল সর্বজিৎ। তারপর অনুতপ্ত গলায় বলল, তাই তো শবর।
মাথা ঠান্ডা রাখুন। অনেক চোখা প্রশ্ন উঠবে। এখন থেকে তৈরি থাকুন।
আই শ্যাল টেল দি ট্রুথ।
ঠিক আছে।
আমার বাড়ির খবর কী?
কাল ফিরেই আমি ইরাদেবীর সঙ্গে দেখা করি।
আমি যে আসছি বলেছ নাকি?
না। তবে উনি জেনে গেছেন।
কিছু বলল?
না। খুব গম্ভীর।
ঠিক আছে শবর।
একটা কথা দাদা।
বলো।
আপনার ছেলেটা ছোট। বোধহয় ন’-দশ বছর বয়স।
হ্যাঁ।
আপনি বলেছেন গত দশ বছরে আপনার সঙ্গে ইরাদেবীর সম্পর্ক হয়নি। এটা কেমন করে হয়?
এ প্রশ্নের জবাব কি জরুরি?
না। তবে জানতে চাইছি বছর দশেক আগে আপনারা হঠাৎ রিকনসাইল করেছিলেন কিনা।
না, করিনি।
আপনার কাকে সন্দেহ?
এনিবডি।
সুধাময় ঘোষ?
হতেই পারে।
ইউ আর নট ইন্টারেস্টেড টু নো?
না। আমার ইন্টারেস্ট নেই।
আপনি ছেলেটার পিতৃত্ব স্বীকার করেছেন কি? মানে কাগজে কলমে? ইস্কুলের খাতায় ওর বাবার নাম কিন্তু সর্বজিৎ সরকার।
হ্যাঁ। ওটা নিয়ে গণ্ডগোল করিনি। কমপ্লিকেশন বাড়িয়ে কী লাভ?
ঠিক কথা। ও কে দাদা।
শোনো শবর, এসব নিয়েও প্রশ্ন উঠবে নাকি?
উঠতে পারে। আপনি অস্বস্তি বোধ করবেন?
ঠিক তা নয়। আবার এসব প্রশ্নের টুথফুল জবাব দিলে ফের একটা হইচই হবে। আমার স্ত্রী বা পরিবারের আর হেনস্থা আমি চাইছি না। আই অ্যাম নট এনজয়িং ইট এনিমোর।
তার মানে কি আগে এনজয় করতেন?
তোমাকে সত্যি কথা বলতে বাধা নেই, করতাম। আজ থেকে পাঁচ-সাত বছর আগে আমার স্ত্রী অপমানিত হলে আমি বোধহয় খুশিই হতাম। কিন্তু ওই মনোভাব এখন আমার নেই। রিখিয়ায় চলে যাওয়ার পর থেকে আমার একটা বৈরাগ্যই এসেছে বোধহয়।
আপনি আজ কি আপনার স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন?
না। দরকার কী? উনি রেগে আছেন, হয়তো অপমান করবেন।
তা ঠিক।
শবর, আমার মেয়েরা এরকম ছিল না। দেওয়ার কোয়াইট গুড ইন দেয়ার আর্লি ইয়ারস।
হুঁ।
এত তাড়াতাড়ি ওরা এরকম হয়ে গেল কেন?
কীরকম?
মর্যাল করাপশনের কথা বলছি।
কিছু মনে করবেন না, ওদের তো ওভাবে শেখানো হয়নি, তৈরিও করা হয়নি।
ইটস এ বিট শকিং। আমি নিজে খুব ফ্রি জীবন যাপন করি না ঠিকই, কিন্তু আমি তো অতটা ভেসেও যাইনি।
হয়তো ইরাদেবী ওদের সেই শিক্ষাটা দিয়েছেন। যাকগে, ওটা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।
মাথা ঘামাচ্ছি না। বড্ড শন্ড লাগছে।
মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন।
চেষ্টা করব।
ফোনটা রেখে দেওয়ার পর সর্বজিৎ টের পেল তার বেশ খিদে পেয়েছে। হুইস্কি তার স্টকে আছে বটে, কিন্তু সেটা তার এখন খেতে ইচ্ছে করছে না। বরং কিছু খেলে হয়।
বাইরে বেশ জোরে বৃষ্টি নেমেছে, ঘরে খাদ্যবস্তু কিছুই নেই। রান্নার ব্যবস্থা অবশ্য আছে। ইলেকট্রিক হিটার, হটপ্লেট ইত্যাদি এবং কিছু বাসনপত্রও। খুঁজলে চাল ডাল কি পাওয়া যাবে?
সর্বজিৎ উঠে রান্নাঘরটা দেখল। চাল পাওয়া গেল একটা বড় স্টেনলেস স্টিলের কৌটোয়। ডালও দেখা গেল আছে। তবে আর কিছুই তেমন নেই। সবচেয়ে ভাল হত বাইরে গিয়ে কোনও রেস্তোরাঁয় খেয়ে এলে। কিন্তু বৃষ্টি না ধরলে সেটা সম্ভব নয়। আর রান্না করতে তার একটুও ইচ্ছে করছে না। তার বেশ ঘুমও পাচ্ছে।
অগত্যা সে জল খেল এবং হুইস্কির বোতল খুলে বসল। আর কিছু না হোক, হুইস্কিতে ক্ষুধা-তৃষ্ণা অস্বাস্থ্যকরভাবে ডুবিয়ে দেওয়া যায়।
রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ ফোনটা বাজল।
একটা পুরুষ গলা গমগম করে উঠল, সর্বজিৎ সরকার আছে?
বলছি।
শুয়োরের বাচ্চা, খানকির ছেলে, তোকে কী করব জানিস? তোর ডান হাত কেটে নিয়ে কুত্তাকে খাওয়াব, তারপর তোর…
সর্বজিতের সামান্য নেশা হয়েছিল। সেটা অশ্লীল গালাগালের তোড়ে কেটে যাওয়ার জোগাড়। সে টেলিফোনটা রেখে দিল। অভিজ্ঞতাটা কিছু নতুন। তবে এরকম হতেই পারে। লোকটা হয়তো ইরার পক্ষের।
হুইস্কিটা তাকে খুব একটা হেল্প করছে না। খিদেটা মারার চেষ্টা ব্যর্থই হয়েছে। ভেসে উঠতে চাইছে অম্বল আর গ্যাস।
সর্বজিৎ হঠাৎ খেয়াল করল, বৃষ্টি থেমেছে। সে দুর্বল শরীরে উঠে পোশাক পরে বেরিয়ে কাছেই একটা ধাবায় গিয়ে হাজির হল। বহুকাল সে রেস্টুরেন্টে খায়নি। কেমন লাগবে কে জানে?
কিন্তু রুটি, তরকা এবং মাংসের চাপ শেষ অবধি তার খারাপ লাগল না। বরং পেট ভরে বেশ তৃপ্তি করেই খেল সে। ফিরে এসে ঘুমোল।
সকালবেলাটা বেশ লাগল তার। মেঘ ভেঙে চমৎকার রোদ উঠেছে। চারদিকটা ঝলমল করছে। এসব সকালে ছবি আঁকতে ইচ্ছে করে।
কলকাতায় খুব বেশিদিন থাকবে না সে। আজ প্রেস কনফারেন্সটা হলে কাল বা পরশুই রিখিয়ায় ফিরে যাবে। ঘটনাটা যা ঘটেছে তার সমাধান সহজ নয় বলেই তার মনে হচ্ছিল। সবাইকে বিশ্বাস করানো যাবে না যে, ছবিগুলো সে আঁকেনি।
সর্বজিৎ ফাঁড়ি পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে একটা দোকানে চা খেল। গরম শিঙাড়া আর টাটকা জিলিপি খেল বহুদিন বাদে। দুপুরে ফের রেস্তোরাঁয় খেয়ে নেবে। ফিরে এসে সে একটা ক্যানভাস বিছিয়ে ছবি আঁকতে বসে গেল। অন্তত এই একটা ব্যাপারে ডুবে যেতে বেশি সময় লাগে না।
সর্বজিৎ একটা সময়ে টের পেল, সে একটা অদ্ভুত কিছু আঁকছে। প্যাটার্নটা এলোমেলো এবং হরেক রকমের চড়া রঙের ডট আর ড্যাশ। কিন্তু ছবির মাঝখান থেকে চারদিকে একটা বিকেন্দ্রিক প্রচণ্ড গতিময় শক্তির প্রকাশ ঘটছে। এটা কি তার এখনকার মনের অবস্থারই প্রতিফলন? নাকি শুধুই একটা খেয়ালখুশি? দরকার কি অত ভেবে? ছবিটা আঁকতে তো তার ভালই লাগছে।