তা হলে কোয়াইট ইয়ং।
হ্যাঁ, আমার চেয়ে কয়েক বছরের ছোট।
উনি তো বিয়ে করেছেন?
আলবাত। ওর বউ সোনালি খুব ভাল মেয়ে। এই ঘটনাটা মেয়েটাকে দুঃখ দেবে।
উনি আপাতত স্বামীর সঙ্গে বাইরে।
বাঁচা গেল।
আপনি রিলিফ ফিল করছেন, কিন্তু আমি তা করছি না। ওঁরা থাকলে আমার কাজের সুবিধে হত।
তুমি কি ভাবছ যে, ইরার সঙ্গে যদি সুধাময়ের অ্যাডাল্টারির সম্পর্ক থেকেও থাকে তা হলে তা জেরা করে বের করতে পারতে?
কনফেশন আদায় করা সহজ নয়। কিন্তু রিঅ্যাকশন দেখে অনুমান করা সম্ভব।
সেক্ষেত্রে ইরাকেই তো প্রশ্ন করতে পারতে। তার রিঅ্যাকশন দেখে অনুমান করো।
ইরাদেবীর মানসিক অবস্থা এখন ভারসাম্যহীন। তিনি প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন আপনার ওপর। এ অবস্থায় ওঁকে ওসব সেনসিটিভ ব্যাপারে প্রশ্ন করাটা ঠিক নয়।
তুমি এই তদন্তের কাজ কি প্রাইভেটলি করছ? নিজের গরজে? নাকি অফিশিয়ালি?
অফিশিয়ালি। ইরাদেবী আপনার নামে এফআইআর করেছেন। পুলিশের বড় কর্তারা তদন্তের ভার আমাকে দিয়েছেন।
কিন্তু একটু আগেই তো তুমি বলেছ যে, এটা তোমার ব্যক্তিগত সফর।
সেটাও সত্য। আমি ঠিক পুলিশ হিসেবে আপনার কাছে আসিনি। এসেছি ব্যক্তিগত উদ্যোগে। পুলিশ কেসটা খুব সিরিয়াসলি নিচ্ছে না। তাই তাদের এ ব্যাপারে একটা গয়ংগচ্ছ ভাব আছে। সিরিয়াস ক্রাইম সামাল দিতে তাদের হিমশিম খেতে হয়, পারিবারিক কেচ্ছা নিয়ে তদন্তে সময় দেওয়ার উপায় নেই।
তুমি একজন অত্যন্ত নামকরা গোয়েন্দা। লালবাজারের প্রায় মাথার মণি। এরকম একটা কেসে তোমার মতো উঁদে অফিসারকে লাগানোর মানে কী?
শবর একটু হাসল, আপনিও গোয়েন্দাগিরিতে কম যান না দেখছি। কথাটা ঠিকই। আপনাদের কাছে ব্যাপারটা সিরিয়াস হলেও পুলিশের চোখে এটা মাইনর পেটি কেস। আপনার অনুমানও যথার্থ। পুলিশ আমাকে নিয়োগ করেনি। আমি স্বেচ্ছায় তদন্তটা করতে চেয়েছিলাম। কর্তারা আমাকে অনুমতি দিয়েছেন।
নাউ ইউ আর টকিং সেন্স।
সিংঘানিয়ার এগজিবিশন এখানে বন্ধ করা গেলেও দিল্লি বোম্বাই বা বিদেশে বন্ধ করা যাবে না। ছবিগুলি যে নকল এটা প্রমাণ করাটা খুবই জরুরি। আপনি কি সেটা পারবেন?
কেন পারব না? ছবির ক্যারেক্টারই বলে দেবে যে ওগুলো আমার আঁকা নয়।
তা হলে আপনি কবে কলকাতা যাচ্ছেন?
আজ হবে না। কাল যাব।
গিয়ে কোথায় উঠবেন?
আমি তো বন্ডেল রোডের স্টুডিয়োতেই থাকি কলকাতায় গেলে। অনেকদিন অবশ্য যাওয়া যায়নি।
ওটা কি ভাড়ার ফ্ল্যাট?
ভাড়াই ছিল। পরে বাড়িওয়ালার কাছ থেকে কিনে নিয়েছি।
আপনার বাড়ির লোক কি স্টুডিয়োটা চেনে?
বোধহয়। তবে কেউ কখনও যায়নি।
২. ঘরের দরজা খুলে সর্বজিৎ
ঘরের দরজা খুলে সর্বজিৎ ভিতরে ঢুকে প্রায়ান্ধকার স্টুডিয়োটাকে একটু অনুভব করার চেষ্টা করল। এ ঘর কেউ ব্যবহার করে না। ধুলো ময়লা এবং বদ্ধ বাতাসের অস্বাস্থ্যকর গন্ধ জমে আছে।
সর্বজিৎ পর্দা সরিয়ে বড় বড় জানালাগুলো খুলে দিল। বাইরের আকাশে বর্ষার মেঘ থম ধরে আছে। দ্রুত ঘনিয়ে আসছে অকাল-সন্ধ্যা।
সর্বজিৎ ঝাড়ন দিয়ে একটা চেয়ার ঝেড়ে নিয়ে একটু বসল পাখার নীচে। ক্লান্ত লাগছে। যশিডি থেকে মাত্র ছয় ঘণ্টার ট্রেন জার্নি। পরিশ্রম যে খুব বেশি হয়েছে তা নয়। তবু ক্লান্ত লাগছে বোধহয় মানসিক অবসাদে, তিক্ততায়।
খানিকটা বিশ্রাম করে সে উঠল। তারপর ঘরদোর পরিষ্কার করতে লাগল।
ফ্ল্যাটে মাত্র দুটোই ঘর। ভিতরের ঘরটা বড়। এটাই তার স্টুডিয়ো কাম বেডরুম। বেড বলতে অবশ্য বেতের তৈরি একটা সরু ডিভান গোছের। তার ওপর তোষক। ঘরময় তার আঁকার সরঞ্জাম, ক্যানভাস ইত্যাদি রয়েছে। আধখাচড়া কিছু ছবিও জমে আছে এখানে।
কলকাতা তার আজকাল ভাল লাগে না। রিখিয়া কি বেশি ভাল লাগে? তাও না। তবু ওখানে অন্তত শব্দহীনতা আছে। লোকহীনতা আছে। অনবরত মানসিক সংঘর্ষহীনতা আছে। অপেক্ষাকৃত ভাল।
ঘণ্টা খানেকের চেষ্টায় সে ঘরদোর বাসযোগ্য করে তুলল তারপর চা বানিয়ে খেল। স্নান করল। একটু শুয়ে রইল চুপচাপ। আর শুয়েই বুঝতে পারল তার মাথাটা গরম হয়ে আছে। মনটা অস্থির।
একটু তন্দ্রা এসেছিল। হঠাৎ টেলিফোনের অচেনা শব্দে চমকে চটকা ভেঙে উঠে বসল সে। বুকটা ধড়ফড় করছে। বহুকাল যন্ত্রটার সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই।
বলুন।
মিস্টার সরকার বলছেন কি?
হ্যাঁ।
আমি জয়কুমার শেঠ। চিনতে পারছেন তো?
হ্যাঁ, বলো।
উই আর বিয়িং হাউন্ডেড অ্যারাউন্ড বাই সাম পিপল। কিন্তু সাহাব, আমাদের তো কোনও কসুর নেই।
কসুর নেই?
না সাহাব। আমরা আপনার প্যাকেজিং-এর মধ্যেই আন-মাউন্টেড ছবিগুলো পেয়ে যাই। আমরা আপনার সঙ্গে কখনও এরকম করতে পারি কি? পুলিশ বলছে ছবিগুলো একদম জালি। সাবস্টিটিউশন।
আমি যে আজ কলকাতায় আসব কে বলল?
মিস্টার দাশগুপ্ত বলেছিলেন। আপনি না এলে আমি দু-একদিনের মধ্যে রিখিয়ায় গিয়ে আপনার সঙ্গে দেখা করতাম। পিতাজি আমেরিকায়, উই আর ইন ট্রাবল।
ছবিগুলো আমার আঁকা নয়, জয়। তোমরা ছবিগুলো কোথায় রেখেছিলে?
ছবি কস্টলি জিনিস সাহাব। আমরা সব ছবি রাখি আমাদের বাড়ির স্টোরে। এসি ঘর আছে।
সিকিউরিটির ব্যবস্থা কী?
স্টোর রুমের জন্য সেপারেট সিকিউরিটি নেই। তবে আমাদের বাড়িতে চারজন রিলায়েবল দারোয়ান আছে। সুইচ অর সাবস্টিটিউশন ইজ ইমপসিবল স্যার।