এটা কি তোমার অফিশিয়াল ভিজিট, না ব্যক্তিগত?
ব্যক্তিগত। এটা সেই অর্থে পুলিশ কেস নয়। আমার একটা সন্দেহ ছিল ছবিগুলো নকল।
কেন সন্দেহ হল?
আমি আপনাকে দীর্ঘদিন চিনি বলে।
তুমি কি বিশ্বাস করো যে এ কাজ আমার দ্বারা সম্ভব নয়?
মানুষের পক্ষে সবই সম্ভব। তবু আমি আপনার কথা বিশ্বাস করছি। এখন বলুন তো এ কাজ কে করতে পারে এবং কেন?
কী করে বলব বলল তো। আমার কেমন শত্রু থাকতে পারে? আমি রগচটা মানুষ ছিলাম ঠিকই, কিন্তু কারও কোনও গর্হিত ক্ষতি করেছি বলে তো মনে পড়ে না।
আরও একটা কথা।
বলো।
অন্তত চারটি ছবিতে ইভের সঙ্গে আদমকেও দেখা গেছে। কে জানেন?
না, বলো।
একজন আপনার বন্ধু সুধাময় ঘোষ।
সে কী?
দুটো ছবিতে সুধাময় ঘোষ এবং আপনার স্ত্রীকে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে আঁকা হয়েছে।
আর?
আপনার দুই মেয়ের সঙ্গে আরও দুটি আদমকে আমরা পাচ্ছি। একজন আপনার বড় মেয়ের বন্ধু বান্টু সিং। অন্যজন ছোট মেয়ের বন্ধু ডেভিড।
এদের তো আমি চিনিই না!
আপনি না চিনলেও যে এঁকেছে সে চেনে।
এটা কি একটা ষড়যন্ত্র বলে তোমার মনে হয় শবর?
সে তো বটেই।
সিংঘানিয়াকে তোমরা ক্রস করোনি?
করেছি। সে পরিষ্কার বলেছে আপনার এজেন্টের মাধ্যমে সে ছবি কিনেছে। আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে সে চেনে না।
আমার এজেন্ট কী বলে?
আপনার এজেন্ট রতন শেঠ হার্টের ট্রিটমেন্ট করতে আমেরিকায় গেছে। তার ছেলেরা বলছে, ছবিগুলি ওরিজিন্যাল।
বলল?
হ্যাঁ, তারা বলছে এখান থেকেই তারা প্যাক করে ছবিগুলো প্রায় ছয় মাস আগে নিয়ে যায়।
ব্যাপারটা যে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
মুশকিল হল, শুধু ওই ইভ সিরিজের ছবিগুলির জন্য আপনার পাওনা দশ লাখ টাকা তারা ব্যাঙ্কে আপনার অ্যাকাউন্টে জমাও দিয়েছে।
টাকা জমা দেওয়াটা বড় কথা নয়, প্রমাণও নয়। ওরা সবসময়েই আমার ছবি নিয়ে যায় এবং বিভিন্ন সময়ে ব্যাঙ্কে টাকা জমা করে।
সেটা ঠিক কথা। আমি জানতে চাই ওরা কি মিথ্যে কথা বলছে?
হ্যাঁ শবর! এটা একটা চক্রান্ত। তা তো বুঝলাম, কিন্তু আপনি সোনার ডিম-পাড়া হাঁস। অন্তত ওদের কাছে। আপনাকে ফাঁসিয়ে ওদের লাভ কী?
ওরা আর কারও কাছে টাকা খেয়ে এটা করেছে।
না, আমার তা মনে হয় না।
তোমার কী মনে হয়?
আপনার ছবি ট্রান্সপোর্ট করার সময় বা এজেন্টের গোডাউনে বা কোথাও ছবিগুলো সুইচ করা হয়েছে।
মাই গড!
কারণ আপনার এজেন্ট বা সিংঘানিয়া কেউ খুব একটা মিথ্যে কথা বলছে বলে মনে হয় না। আপনি চক্রান্ত বলে সন্দেহ করছেন। আমিও তাই করি। আপনি কবে কলকাতা যেতে পারবেন?
যাওয়া তো ইমিডিয়েটলি দরকার শবর।
মেক ইট টুডে অর টুমরো।
গিয়ে কী করতে হবে বলো তো!
একটা প্রেস কনফারেন্স ডাকুন। ছবিগুলো যে আপনার নয় তা স্ট্রংলি বলুন।
ছবিগুলো আমি দেখতে চাই।
সেটা অ্যারেঞ্জ করা যাবে। আমি আপনার জন্য ছবিগুলোর ফটোপ্রিন্ট নিয়ে এসেছি। দেখুন।
সর্বজিৎ দেখল। বারো বাই আট ইঞ্চির পরিষ্কার রঙিন প্রিন্ট। কোনও সন্দেহ নেই যে ছবিগুলি যে এঁকেছে সে সর্বজিতের আঁকার শৈলী জানে। অতিশয় নিপুণ এই চাতুরী সে নিজে ছাড়া আর কারও ক্ষেই ধরা সম্ভব নয়। দুটো ছবিতে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে সুধাময়
এবং তার স্ত্রী ইরা আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে আছে।
নিজের দুই মেয়ে নিনা আর টিনার ছবিগুলোর দিকে চেয়ে লজ্জায় ঘেন্নায় গা রিরি করছিল সর্বজিতের। এক-আধবার চোখ বুলিয়েই সে ছবিগুলি শবর দাশগুপ্তকে ফেরত দিল।
ছবিগুলো কেমন দেখলেন?
কেমন আর দেখব? নকল।
কলকাতার কিছু কাগজ কিন্তু ব্যক্তিগত অ্যাঙ্গেলটা অ্যাভয়েড করে ছবিগুলোর খুব প্রশংসাও করেছে।
তাই নাকি?
কিছু মনে করবেন না, আপনার স্ত্রীর এখন বয়স কত?
হিসেবমতো আটত্রিশ।
শি লু ইয়ং।
হ্যাঁ। শি হ্যাজ গুড লুকস।
সুধাময় ঘোষের সঙ্গে আপনাদের পারিবারিক রিলেশন কেমন?
সর্বজিৎ একটু চিন্তিত হল। ভেবে বলল, ইরার সঙ্গে প্রেম আছে কি না জানতে চাইছ?
যদি বলি চাইছি?
আই ক্যান্ট হেল্প ইউ। কারণ আমি জানি না। বিয়ের চার-পাঁচ বছরের মধ্যেই ইরার সঙ্গে আমার সম্পর্ক এমন খারাপ হয়ে যায় যে, আমি ওর কোনও কিছুই লক্ষ করতাম না। বেশিরভাগ সময়েই তো পড়ে থাকতাম বন্ডেল রোডের স্টুডিয়োতে। প্রেম হলেও আমার কিছু করার ছিল না।
ছবিগুলোতে আপনার স্ত্রীর কন্টেম্পোরারি চেহারা রয়েছে, নাকি অল্প বয়সের?
কন্টেম্পোরারি। ছবিগুলো রিয়ালিস্টিক ধরনে আঁকা। মুখ এবং অবয়ব খুব প্রমিনেন্ট। ইরার বাঁদিকের বুকে একটা জডুল আছে। সেটাও এঁকেছে। ইট মিনস দি বাস্টার্ড নোজ হার ওয়েল।
সুধাময় ঘোষ সম্পর্কে একটু বলুন।
কী বলব? সুধাময় ইজ এ নাইস ফেলল। বিগ শট ইন দি ইলেকট্রনিক বিজনেস। কোটিপতি।
আপনার স্ত্রীর প্রতি তার কোনও ক্রাশ ছিল কি?
কী করে বলব বলল তো! সুধাময় আমার বন্ধু ছিল। তার সঙ্গে আমার সম্পর্কটাও ছিল গভীর। আমার দুঃখের দিনে, ইন মাই আর্লি ডেজ হি হেল্পড এ লট। বিয়ের পর তো আমার মাথা গোঁজবার জায়গা ছিল না। সুধাময় আমাকে তার একটা বাড়িতে সস্ত্রীক থাকতে দেয়। নাইস ম্যান, নাইস ফ্রেন্ড। ওর রি-অ্যাকশন কী?
উনি টোকিওতে রয়েছেন। বিজনেস টুর। তারপর যাবেন রাশিয়া এবং ইউরোপ। হয়তো চিন এবং তাইওয়ানও। ফিরতে দেরি হবে। ওঁর বয়স কত?
হার্ডলি ফর্টি ফাইভ।