তার ফল কী হয়েছিল?
খুব খারাপ। যখন আমার স্ত্রীকে মডেল করে ন্যুড ছবিটা আঁকলাম তখন উনি বেঁকে বসলেন। ও ছবি বিক্রি করা চলবে না। এগজিবিট হিসেবেও দেওয়া যাবে না। দি সেন্টিমেন্ট ওয়াজ কোয়াইট লজিক্যাল।
সেই ছবিটার শেষ অবধি কী হল?
ফেসটা বদলে দিতে হল।
এরকম ঘটনা আর কখনও ঘটেনি?
না। ইন ফ্যাক্ট বিয়ের এক বছর পর থেকে আমি আমার স্ত্রীর কোনও ছবিই আঁকিনি। নডের প্রশ্ন তো ওঠেই না। কিন্তু কেন এই প্রশ্ন করছ জানতে পারি কি শবর?
আপনার দুই মেয়ে এবং এক ছেলে। মেয়েরা এখন একজন যুবতী এবং একজন কিশোরী। ঠিক তো!
হ্যাঁ।
কোনও বাপের পক্ষে তার নিজের যুবতী বা কিশোরী মেয়ের ন্যুড আঁকা কি সম্ভব বলে আপনার মনে হয়?
এ প্রশ্ন কেন করছ জানি না। তবে অনেক আর্টিস্টের ওসব সংস্কার থাকে না। কিন্তু আমার কথা যদি বলো তা হলে বলব আমার ওরকম রুচি কখনও হয়নি, হবেও না।
আপনার মুখ থেকে এ কথাটা শুনবার জন্যই আসা। আপনাকে নিয়ে কলকাতায় এখন একটা বিচ্ছিরি কন্ট্রোভার্সি চলছে।
কী ব্যাপার খুলে বলতে পারো?
রামপ্রসাদ সিংঘানিয়া নামে একজন বড় আর্ট কালেক্টার আছে, জানেন?
চিনি না। আজকাল আর্ট কালেক্টারের অভাব কী?
রামপ্রসাদ সিংঘানিয়া তার কালেকশন অব আর্টসের একটা এগজিবিশন দিয়েছেন।
ও। তা হবে।
সিংঘানিয়ার এই এগজিবিশনে প্রায় আশিটা ছবি ডিসপ্লে করা হয়েছে। তার মধ্যে ত্রিশখানাই আপনার।
বলো কী? একজনের কাছে আমার এত ছবি?
লোকটা শুধু কালেক্টরই নয়, ছবির ব্যাবসাও তার আছে।
হ্যাঁ, ছবি তো এখন ব্যাবসারই জিনিস।
আপনার এই ত্ৰিশখানা ছবির মধ্যে অন্তত দশটা ছবি নিয়ে একটা সিরিজ রয়েছে। সিরিজটার নাম মেনি ফেসেস অব ইভ।
যদূর মনে পড়ে এরকম কোনও সিরিজ আমি আঁকিনি।
ভাল করে ভেবে দেখুন।
ফটোর রেকর্ড না রাখলেও আমার মেমরি খুব ভাল। আর ছবির টাইটেলের একটা বাঁধা লিস্ট আমার ডায়েরিতে লেখা থাকে। ফর রেফারেন্স। কারণ, বুঝতেই পারছ, ছবি একটা হাইলি কমার্শিয়াল কমোডিটি।
বুঝতে পারছি। তা হলে মেনিফেসেস অব ইভ নামে কোনও সিরিজ আপনি আঁকেননি?
না। এই সিরিজেই কি ন্যুড ছবিগুলো রয়েছে?
হ্যাঁ। শুধু ন্যুড ছবিই নয়। ছবিগুলো আপনার স্ত্রী এবং মেয়েদের নিয়ে আঁকা।
মাই গড! এ তো সাংঘাতিক কথা।
কতটা সাংঘাতিক তা আপনি এখানে বসে ঠিক অনুমান করতে পারবেন না।
তাই নাকি? ছবিগুলো কি খুব অবসিন?
খুব। যাকে রগরগে বলা যায় তাই।
সিংঘানিয়াকে তোমরা অ্যারেস্ট করছ না কেন?
সেটা পরে হবে, আপনি ছবিগুলো আইডেন্টিফাই করার পর। কিন্তু দি ড্যামেজ ইজ অলরেডি ডান।
লোকটা তো ক্রিমিন্যাল দেখছি।
সেটা তো হতেই পারে। কিন্তু এর ফলে আপনার স্ত্রী এবং মেয়েদের সামাজিক মর্যাদা ভীষণভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। আপনার স্ত্রী একটা কো-এডুকেশন কলেজের অধ্যাপিকা। তিনি কলেজে যেতে পারছেন না। আপনার বড় মেয়ে কলেজে পড়ে, ছোটটি স্কুলে। তারা স্কুল কলেজ তো দুরের কথা, রাস্তাতেই বেরোতে পারছে না।
ছবিগুলো অতটা পাবলিসিটি পেল কীভাবে?
সিংঘানিয়া ছবিগুলো ডিসপ্লে করার পরই পত্র-পত্রিকায় ছবিগুলো নিয়ে আলোচনা হতে থাকে। অনেক কাগজেই ওই সিরিজটার ফটোগ্রাফ ছাপা হয়েছে। ক্রিটিকদের অনেকেই আপনার স্ত্রী ও মেয়েদের চেনে। তারাই প্রথম পয়েন্ট আউট করে যে সর্বজিতের ইভ আসলে তার স্ত্রী এবং দুই মেয়ে।
নাউ আই অ্যাম ভেরি অ্যাংরি শবর। সিংঘানিয়াকে একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার।
উত্তেজিত হবেন না। আগে শুনুন। আপনার স্ত্রী প্রথমে ছবিগুলো কিনে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। সিংঘানিয়া বিক্রি করেনি। কারণ এই এগজিবিশনের কোনও ছবিই বিক্রির জন্য ছিল না। সিংঘানিয়া ক্রিমিন্যাল কি না সেটা পরে দেখা যাবে। কিন্তু পরিস্থিতি খুব জটিল। ক্রিটিকরা আপনার সম্পর্কে কাগজে বিষোদগার করেছে, আপনার রুচি, বিকৃত যৌনতা, প্রতিহিংসাপ্রবণতা এবং অপ্রকৃতিস্থতার কথা তারা তীক্ষ্ণ ভাষায় লিখেছে।
আমি তো তা জানি না। জানতে পারলে এগজিবিশনটা ইনজাংশন দিয়ে বন্ধ করে দিতাম।
সেটা করা হয়েছে। আপনার স্ত্রী লিগ্যাল অ্যাকশন নিয়েছেন। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে। আপনার স্ত্রী মনে করেন নিজের পরিবারের ওপর প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়েই আপনি এ কাজ করেছেন। আপনার মেয়েরা এই ঘটনার পর প্রচণ্ড কান্নাকাটি করেছে। আপনার স্ত্রী আপনার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা আনছেন। সেইসঙ্গে হয়তো ডিভোর্সের মামলাও।
ছবিগুলো যে আমার আঁকা নয় এটা তাদের বোঝা উচিত ছিল। আমার আঁকার কিছু ক্যারেক্টারিস্টিকস আছে।
আমরা সেই অ্যাঙ্গেলটাও দেখেছি।
কী দেখলে? কলকাতায় কোনও ছবি বিশেষজ্ঞ–অর্থাৎ পেশাদার বিশেষজ্ঞ নেই। আমরা তাই ক্রিটিক এবং অন্যান্য আর্টিস্টের মতামত নিই। তারা প্রত্যেকেই বলেছেন, ছবিগুলো সর্বজিৎ সরকারেরই আঁকা। অর্থাৎ আপনি যে ক্যারেক্টারিস্টিকসের কথা বলছিলেন তা সবগুলোতেই আছে। নব দাস একটি বিখ্যাত ইংরিজি কাগজে লিখেছে, সর্বজিৎ সরকার চিরকালই যৌনবিকারের শিকার। সে তার বউ আর মেয়েদের বাজারে নামিয়ে দূষিত আনন্দ পাচ্ছে, এটা তার মতো নিম্নরুচির মানুষের পক্ষে নিতান্তই স্বাভাবিক ব্যাপার।
হুম, ব্যাপারটা তা হলে জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হ্যাঁ, বেশ জটিল। নইলে আমাকে এতদূর আসতে হত না।