এরকম কি প্রায়ই হয়?
না, খুব কম হয়। অনেকদিন বাদে বাদে।
এরকমটা কিন্তু হতেই পারে। বড় বড় ওস্তাদের নাকি হয়।
আমি ওস্তাদ নই। গান তো আমার সাধনা নয়।
তা হোক। আপনি তো সূক্ষ্ম অনুভূতির মানুষ। ধ্যানস্থ মানুষ।
ওটা বাড়াবাড়ি হয়ে গেল। ওরকম কমপ্লিমেন্ট আমার পাওনা নয় কিন্তু।
এটা কমপ্লিমেন্ট নয়। একটা এক্সপ্ল্যানেশন মাত্র।
থ্যাঙ্ক ইউ।
এখন আপনি কী বিষয় নিয়ে ছবি আঁকছেন?
প্রধানত এই জায়গাটা নিয়ে। পাখি, ফুল, কীটপতঙ্গ নিয়েও আঁকি। আবার ভিশন থেকেও আঁকি। একদিন স্বপ্নে একটা জাহাজ দেখলাম। কালো সমুদ্রের ওপর ভাসছে। অদ্ভুত জাহাজ। বিশাল উঁচু, বিরাট বড়। সেই জাহাজটা বড় ক্যানভাসে প্রায় এক মাস ধরে আঁকলাম। কিন্তু মনের মতো হল না।
ছবিটা কি আছে?
না, বিক্রি হয়ে গেছে।
আপনি আগে আপনার ছবিগুলোর ফটো তুলে রাখতেন। আজকাল রাখেন না?
নাঃ। কী হবে রেখে? মনে হয় আমার এজেন্ট রাখে।
একটা রেকর্ড থাকা ভাল।
কম বয়সে আমারও তাই মনে হত। এখন আর মায়া নেই যে। আঁকি, বিক্রি করি, তারপর ভুলে যাই।
আপনি একসময়ে ক্রিটিকদের ওপর খুব খাপ্পা ছিলেন। একবার একজন আর্ট ক্রিটিককে মারধরও করেছিলেন। তার নাম নব দাস, মনে আছে?
খুব আছে। তখন খুব রিঅ্যাকশন হত।
আজকাল হয় না?
হবে কী করে? আমার এখানে পত্র-পত্রিকা আসে না। এলেও পড়ি না। যার যা খুশি লিখুক।
পড়েন না বলেই কি রিঅ্যাক্ট করেন না? পড়লে করতেন?
না, না, পড়লেও করতাম না। আসলে কী জানো, আমি আজ বুঝেছি, আর্ট ক্রিটিকরা ছবি কিস্যু বোঝে না। তার চেয়েও মারাত্মক কথা আর্টিস্ট নিজেও বোঝে না। এই সাংঘাতিক সত্যটা বুঝতে পারার পর আমি সংযত হয়ে গেছি।
সমঝদাররা কি একথা মানবেন? আপনি সর্বজিৎ সরকার–কত নাম-ডাক আপনার!
ওসবও খুব ফুঁকো ব্যাপার। আর্টের জগতে একটা মস্ত ফাঁকিবাজি আছে।
আপনি সেটা জেনেও তা হলে আঁকেন কেন?
আঁকার নেশায়। কিছু তো করছি। ড্রয়িং জানি, তুলি চালাতে পারি, রং বুঝি, প্যাটার্ন বুঝি। এগুলো নিয়ে একটা খেলা।
ছবির কোনও ফিলজফি নেই বলছেন?
সচেতনভাবে নেই। তবে কেউ কোনও অর্থ বার করে নিতে পারলে ভালই।
এটা তো সাংঘাতিক কথা!
খুব সাংঘাতিক কথা। তবু অনেকটাই সত্যি। তবে একটা কথা আছে।
কী কথা?
একজন জাত আর্টিস্ট যাই আঁকুক ছবিটার মধ্যে কিন্তু একটা সৌন্দর্য থাকবেই। থাকবে সূক্ষ্ম সিমেট্রিকাল নকশা। থাকবে কিছু অনুভূতিও। সবটা ফেলে দেওয়া যাবে না। পিকাসো অনেক অর্থহীন, আবোল তাবোল ছবি এঁকেছেন। কিন্তু তার মধ্যেও দেখবে কিছু একটা আছে। যেটা আছে সেটাকে সেই আর্টিস্টও বুঝিয়ে দিতে পারবে না।
বাঃ, এই তো অ্যাপ্রিসিয়েটও করছেন দেখছি।
স্ববিরোধী কথা বললাম নাকি শবর?
একটু কনফ্লিকটিং। কিন্তু আর্ট জিনিসটা বোধহয় ওরকমই। কিছু নেই, না থেকেও আছে।
চা খাবে?
না, আমি চা খাই না।
তাও তো বটে, তোমার তো কোনও নেশাই নেই। ভুলে গিয়েছিলাম।
আপনি ইচ্ছে করলে খেতে পারেন।
না। এখন বেলা এগারোটা বাজে। এ সময়ে চা খাই না।
আমি আপনার আঁকার বাধা সৃষ্টি করছি না তো!
না। আজ রবিবার। রবিবার আমি ছুটি নিই।
আপনার তো রোজই ছুটি।
হ্যাঁ, সেইজন্যই একটা দিন একটু আলাদা ছুটির মেজাজ তৈরি করে নিতে হয়। এবার আসল কথাটা কি বলবে?
আসল কথা! আবার আসল কথা কী?
সর্বজিৎ হাসল। বলল, শবর, তুমি একজন অতি ধূর্ত পুলিশ অফিসার। শুধু আর্ট নিয়ে আলোচনা করতে কলকাতা থেকে এতদূর আসোনি। আমি জানি।
শবর মৃদু হেসে বলল, আমি সমঝদার না হলেও আর্ট নিয়ে আমার কিছু নাড়াচাড়া করার অভ্যাস আছে।
জানি। তোমার আর্ট নিয়ে নাড়াচাড়াও বোধহয় ক্রাইম ডিটেকশনের জন্যই।
তাই নাকি?
তুমি একবার বলেছিলে, একটা কার যেন ছবি দেখে তুমি একটা মার্ডার কেস সলভ করেছিলে।
ঠিক তা নয়। তবে সামটাইমস ইট হেল্পস।
তুমি আমাকে কোনও ক্রাইমের জন্য ধরতে আসোনি তো শবর?
আরে না। কী যে বলেন।
স্ত্রী আর পরিবার ছেড়ে চলে আসা ছাড়া আমার আর তেমন কোনও অপরাধ নেইও। তবে হ্যাঁ, নব দাসকে মেরেছিলাম। সেটাও একটা ক্রিমিন্যাল অ্যাক্ট বটে। তবে নব পুলিশে যায়নি। আমি ওর কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলাম।
সবই জানি।
তা হলে এবার আসল কথাটা বলে ফেলো।
আচ্ছা আপনি কি আজকাল ন্যুড আঁকেন?
ন্যুড? তা আঁকি বোধহয় মাঝে মাঝে। কেন?
ইদানীং কি আপনি পরপর বেশ কয়েকটা ন্যুড এঁকেছেন?
উঁহু। ন্যুড খুব কম আঁকি। ভীষণ রেয়ার। হঠাৎ ন্যুড নিয়ে কথা উঠছে কেন?
আপনি যদি কিছু মনে না করেন এবং প্রশ্নটার জন্য আমার নির্লজ্জতাকে ক্ষমা করেন তা হলে একটা প্রশ্ন করতে পারি কি?
আরে, ফর্মালিটি ছেড়ে প্রশ্নটা করেই ফেলল। আমি ভোলামেলা মানুষ। নাথিং টু হাইড। একটু আগে তো আমার সেক্স লাইফ নিয়েও প্রশ্ন করেছ, কিছু মনে করেছি কি?
এটা একটু পারসোনাল।
গো অ্যাহেড।
আপনি কখনও আপনার স্ত্রীর ন্যুড এঁকেছেন কি?
এই কথা! হাঃ হাঃ, হ্যাঁ, বিয়ের পর একবার এঁকেছিলাম। খুব ছোট করে।
আপনার স্ত্রী আপত্তি করেননি?
আরে না। ওর কয়েকটা পোট্রেট এঁকেছিলাম। তারপর উনি নিজেই একদিন বললেন, উনি আমার ন্যুড মডেল হতে চান। ব্যাপারটা কী জানো? তখন ইলা নামে একটি মেয়ে আমার মডেল হত। শি ওয়াজ কোয়াইট অ্যাট্রাকটিভ। সম্ভবত আমার স্ত্রী ওঁর সম্পর্কে একটু জেলাস ছিলেন। তাই ওঁকে সরিয়ে নিজে মডেল হতে চেয়েছিলেন।