সে তো বটেই। আপনার এত যে দেশজোড়া খ্যাতি, এত টাকা এগুলো তো আপনি ভোগও করেন না। এখানে তো দেখছি স্পার্টান লাইফ লিড করছেন। ফ্রিজ বা টিভি আছে কি?
পাগল! ওসব দিয়ে কী হবে? একা মানুষ, ফ্রিজ দিয়ে কী করব? মদ খাওয়ার বরফ আমার চাকর বান্টা এনে দেয়। অবশ্য কিউব নয়, চাঙড়। ওতেই হয়ে যায়।
সিনেমাটিনেমা দেখতে ইচ্ছে করে না?
কোনওদিনই করত না। সিনেমা আমি খুব কমই দেখেছি। এখন তো আরও ইচ্ছে করে না।
আপনার বাগান করার শখ নেই? সামনের বাগানটা তো দেখছি আগাছায় ভরতি।
ওটাই তো আমার ভাল লাগে। তোমাদের কাছে আগাছা হতে পারে, আমার কাছে নয়। সাজানো বাগানের চেয়ে এই ওয়াইন্ডনেস এবং এই হ্যাপাজার্ড গাছগাছালি আমার বেশি প্রিয়। ওটা অ্যাটিচুডের ওপর নির্ভর করে।
তাই দেখছি। আপনার রং, তুলি, ক্যানভাস সব কলকাতা থেকেই আসে?
হ্যাঁ। আমার এজেন্ট দিয়ে যায়। আমি অবশ্য আজকাল বিদেশ থেকেই রং আনাই। এখানকার রঙের কোয়ালিটি আমার পছন্দ নয়।
হ্যাঁ, অ্যান্ড ইউ ক্যান অ্যাফোর্ড দ্যাট। বাড়িরখবর টবর পান?
বিশেষ নয়। মা বোধহয় তাড়না করে, তাই মাঝে মাঝে আমার মেয়েরা চিঠি লেখে। পোস্টকার্ডে।
আপনি জবাব দেন?
এক লাইন-দু’ লাইনে দিই। আমি ভাল আছি এ খবরটা না পেলে মা হয়তো চলেই আসবে খবর নিতে। মায়েদের তো জানো।
আপনি কি মাকে একটু মিস করেন?
না, মিস করি বলাটা বাড়াবাড়ি। তবে একটু মায়ের কথাই যা মনে হয়।
আপনি নিশ্চয়ই পরিবারকে টাকা পাঠান?
তা পাঠাব না? পাঠাতেও হয় না। আমার স্ত্রীর আর আমার জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যায়। ছবির টাকা ছাড়াও আমার স্ত্রীর চাকরির রোজগার আছে। সুতরাং বুঝতেই পারছ–
হ্যাঁ, আমি জানি দে আর ভেরি ওয়েল অফ।
ওদের বড়লোকই বলতে পারো তুমি। বেহালায় অত বড় বাড়ি, গাড়ি, অল সর্টস অব স্ট্যাটাস সিমবলস!
মেয়েদের বা ছেলেকে মিস করেন না?
নাঃ। সবাই তো বড়ই হয়ে গেছে। দে আর বিজি উইথ দেয়ার স্টাডিজ অ্যান্ড ক্যারিয়ারস।
বউদির কী অ্যাটিচুড আপনার প্রতি?
ভেরি কোন্ড, ভেরি প্যাসিভ। যেমনটা ছিল।
উনি আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেননি?
হ্যাঁ, দু’বছর আগে আমার এক শালাকে পাঠিয়েছিল। সে মিনমিন করে কী যেন বলছিল। সব সংসারেই অশান্তি হয়েই থাকে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে খিটিমিটি হতেই পারে…
আপনি তাকে পাত্তা দিলেন না তো!
পাত্তা দেওয়ার মতো ব্যক্তিত্ববান সে নয়।
কী বললেন তাকে?
বললাম, বাড়ি যাও। দুনিয়াটা গোলগাপ্পা নয়। সবকিছু বুঝবার মতো মাথাও তোমার নেই। ভাগিয়ে দিলাম।
বউদি কি চিঠিপত্র কিছু দেননি কখনও?
না। শি ইজ অলসো এ হার্ড নাট টু ক্র্যাক।
আপনি কি তাকে আর পছন্দ করেন না?
কোনওদিনই করিনি।
অথচ সবাই জানে আপনাদের লাভ ম্যারেজ।
লাভ ম্যারেজ ব্যাপারটাই একটা ধাপ্পা।
কেন?
প্রেম করে যেসব বিয়ে হয় সেই প্রেমগুলো বেশিরভাগই স্কিন ডিপ। আই’ নেভার লাভড হার। সাময়িক একটা মোহ আর জেদ থেকে বিয়েটা হয়েছিল। এনিওয়ে শি হ্যাজ নাথিং টু ল্যামেন্ট ফর। বেশ কয়েক বছর বিবাহিত জীবন যাপন করেছি। নাউ আই ওয়ান্ট মাই ফ্রিডম।
এটাই কি সেই ফ্রিডম?
একরকম ফ্রিডমই। অন্তত বন্ডেড তো নই।
এমন তো হতে পারে যে আপনি একদিন অনুতপ্ত হয়ে ফিরে যাবেন।
তা যাব না। যেতাম, যদি মান-অভিমান থেকে চলে আসতাম। এটা অমন হালকাপলকা ব্যাপার নয়। আমি স্ত্রীর সঙ্গ কখনওই উপভোগ করিনি। কোনও টানও নেই তার প্রতি। ছেলেমেয়েদের প্রতিও নেই। আই নেভার ওয়াজ এ গুড ফাদার। তবে ছেলেমেয়েরা ভাল থাকুক সেটা অবশ্য চাই।
আপনি কি তা হলে এখানে বেশ ভাল আছেন?
দেখতেই তো পাচ্ছ। কিছু খারাপ নেই। ভাল থাকাটা নির্ভর করে কতগুলো ফ্যাক্টরের ওপর। ভাল স্বাস্থ্য, ভাল অ্যাটিচুড, স্যাটিসফ্যাক্টরি কাজ…
অ্যান্ড সেক্স?
অলসো সেক্স।
আর কিছু নয়? ধরুন গুড কম্পানি?
কম্পানি ছাড়াও চলে। ওটা অ্যাটিচুডের ওপর নির্ভর করে।
তা হলে কি বলব আপনি এখনই প্রকৃতপক্ষে জীবনকে উপভোগ করছেন?
না, তা বললে মিথ্যে বলা হবে। জীবনকে আমি কি আগেও উপভোগ করিনি কখনও কখনও? ভাল একটা ছবি আঁকলে, ভাল একটা গান শুনলে, সুন্দর দৃশ্য দেখলে আমি বেঁচে থাকাটাকে সার্থক বলেই তো ভেবেছি বহুবার। মনে আছে প্যারিসে আমি প্রথম গিয়ে টানা পনেরো দিন ল্যুভ মিউজিয়ামে ঘুরে বেড়িয়েছি। কেমন যেন স্টানড অ্যান্ড হিপনোটাইজড। সেটাও তো উপভোগ!
আর এখন?
এখনও তাই। মাঝে মাঝে উপভোগ করি।
আপনি গানের কথা বললেন। আপনার কি টেপ রেকর্ডার আছে?
না। ক্যাসেট বাজিয়ে গান শুনতে ইচ্ছে করে না।
তা হলে গানটা আর উপভোগ করেন না?
তোমাকে একটা আশ্চর্য কথা বলব?
বলুন না। শুনতেই আসা।
তুমি হয়তো ঠিক বিশ্বাস করবে না। কিন্তু ব্যাপারটা সত্যি।
বলুন শুনি। বিশ্বাস করব না এমন গ্যারান্টি কে দিতে পারে?
এ জায়গাটা তো দেখছ ভীষণ নির্জন।
হ্যাঁ।
এখানে দিনেদুপুরে ঝিঁঝির শব্দ শোনা যায়। সারাদিনে হয়তো একটাও মানুষের গলার স্বর কানে আসে না। এই যে নির্জনতা, মাঝে মাঝে এর শব্দহীনতা আমাকে অভিভূত করে ফেলে।
বুঝতে পারছি।
মাঝে মাঝে কী হয় জানো? গভীর নিস্তব্ধতায় ডুবে চুপ করে বসে থাকতে থাকতে আমার মনে হয় এই নিস্তব্ধতার ভিতরে যেন একটা সুর লয় খেলা করছে। খুব গভীরে যেন একটা অশ্রুত সংগীত। এ ঠিক বোঝানো যায় না। কানে শোনার জিনিস নয়। কিন্তু অনুভূতিতে যেন ধরা দেয়।