ইরার যৌবনকালটা মরুভূমির মতো। হাতে প্রচুর টাকা, বাড়ি, গাড়ি, সম্পন্নতার ছড়াছড়ি। তবু ওই একটা জায়গায় সে এক বিশুদ্ধ নারী।
খুবই উষর ছিল তার জীবন যতদিন না চোরটা এল।
না, শবরকে সে মোটেই মিথ্যে বলেনি। এক রাতে চোর এসেছিল ঠিকই। এবং সেদিন ইরা তার ক্রনিক ইনসোমনিয়ার মধ্যেও বিরল যে দু’-এক রাত ঘুমোয় সেইরকমই ঘুমিয়ে পড়েছিল। এবং ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে জানালার বাইরে লোকটাকে দেখে সে গুলিও করেছিল ঠিকই। এবং আহত চোর পড়ে গিয়েছিল জানালার নীচে।
বাকিটুকু শবরকে বানিয়ে বলেছে ইরা। চোরটা পালায়নি। সে জখম হাত নিয়ে পড়ে গেলেও কয়েক সেকেন্ড পর উঠে দাঁড়ায়। ইরা ততক্ষণে ঘরের বড় লাইট জ্বেলেছে এবং লোজন ডাকবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
চোরটা বলল, প্লিজ! আমার কথা শুনুন।
ইরা ফিরে জানালার দিকে চেয়ে হতবাক। ঘরের স্টিক লাইটের আলোয় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে চোরকে। খুবই চেনা চোর।
ইরা অবাক হয়ে বলে, তুমি! এত রাতে তুমি এখানে কেন? আর এভাবে কেন?
প্লিজ। আমার কিছু কথা আছে।
কথা! মাঝরাতে তুমি আমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছ? তাও জানালার গ্রিল ভেঙে? আমি তোমাকে পুলিশে দেব।
দেখুন, আমি তো পালাইনি। পুলিশে খবর দিন, আমি কিন্তু পালাব না।
তা হলে এরকম করলে কেন? তুমি কি পাগল?
তাই হবে। প্লিজ লেট মি ইন।
না। এত রাতে তোমাকে ঘরে ঢুকতে দিতে পারি না। আমার মনে হচ্ছে তোমার মাথার ঠিক নেই। আমি তোমাকে পুলিশেও দিতে চাই না। বাড়ি যাও ডেভিড।
আমি ফিরে যাওয়ার জন্য আসিনি। আমি এসেছি আপনার কাছে।
তুমি বোধহয় ড্রাগ অ্যাডিক্ট। নাকি মদ খেয়েছ?
ওসব নয়। আপনি মিথ্যে সন্দেহ করছেন। আই অ্যাম ব্লিডিং লাইক হেল। দেখছেন তো। তবু দাঁড়িয়ে আছি কেন? আমার দরকারটা জরুরি।
তোমার মতলব ভাল নয়।
ভয় পাবেন না। আমি শত অপরাধ করলেও আপনার কোনও ক্ষতি কখনও করব না। সে সাধ্যই আমার নেই।
আচ্ছা, একটা কথা বলো। তুমি কি টিনাকে সিডিউস করতে এসেছিলে? ঘর ভুল করে আমার ঘরে হানা দিয়েছ?
না ম্যাডাম, টিনার ঘর আমি চিনি। আমি আপনার কাছেই এসেছি।
ডেভিডের বয়স আঠাশ থেকে ত্রিশের মধ্যে। রোগা, লম্বা এবং দাড়ি গোঁফে সমাচ্ছন্ন এক ভাবুক চেহারা। মাথায় অবিন্যস্ত চুলের ঝাপি। তার চোখ দুটো অস্বাভাবিক টানা এবং মাদকতাময়। কিশোরী টিনা তার অনেক বন্ধুদের মধ্যে এই বয়স্ক বন্ধুটিকে একটু বেশিই পছন্দ করে। শোনা যায়, ডেভিড বাউন্ডুলে, কিন্তু কেরলে তার বাড়ির অবস্থা খুবই ভাল। তার বাবা একজন ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট।
একটু দোনোমোনো করছিল ইরা। তবে সে সাহসী মেয়ে। বলল, তোমাকে ঢুকতে দিতে পারি। কিন্তু একটা কথা মনে রেখো। আমার হাতে রিভলভার থাকবে। কোনওরকম বেচাল দেখলেই কিন্তু গুলি করব।
অ্যাগ্রিড ম্যাডাম।
এ ঘর থেকে বাইরে যাওয়ার পথ একটু ঘোরানো। প্যাসেজে গিয়ে তবে সদরে যেতে হবে। কিন্তু বাথরুমে একটা জমাদার আসার সরু দরজা আছে। সেইটে খুলে দিল ইরা।
ডেভিড ঘরে এল।
রক্তাক্ত বাঁ হাতটা ডান হাতে চেপে ধরে রেখেছিল ডেভিড।
ইরার একটু মায়া হল। সে ড্রয়ার খুলে ব্যান্ড এইড আর তুলো বের করে বলল, লাগিয়ে নাও।
ডেভিড মাথা নেড়ে বলল, লাগবে না। দি উল্ড ইজ নট ভেরি সিরিয়াস।
তুমি তো মারা যেতে পারতে ডেভিড।
আপনার রিভলভার আছে জানলে সাবধান হতাম।
এভাবে কেউ আসে? কী এমন কথা যা মাঝরাতে বলতে হবে?
হাসলে ডেভিডকে যে কী সুন্দর দেখায় তা লক্ষ করে অবাক হল ইরা। ডেভিড কালো, কিন্তু দারুণ হ্যান্ডসাম। বলল, আমি আপনাকে একটু চমকে দিতেই চেয়েছিলাম।
কেন ডেভিড?
আমি যা বলতে এসেছি তা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ঠান্ডা মাথায় বলা যায় না। ইট রিকোয়ারস সাম ম্যাডনেস।
বলো কী? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
রিভলভার তো আপনার হাতেই আছে। চাইলে গুলি করে দেবেন। কিন্তু আমাকে কথাটা বলতেই হবে।
বলে ফেলো ডেভিড।
আমি আপনাকে ভীষণ ভালবাসি।
এত অবাক ইরা কখনও হয়নি। দু’বছর আগে তার বয়স ছিল আর একটু কম। তবু হিসেব মতো ডেভিড তার চেয়ে ছয়-সাত বছরের ছোট, টিনার বন্ধু। এরকমও হয় নাকি?
রেগে যাবেন না। এসব ব্যাপারে কিছু করার থাকে না। লাভ কামস লাইক এ ফ্লাড।
পাগল হয়েছ?
ডেভিড মাথা নেড়ে বলল, সর্ট অফ ম্যাডনেস, ইয়েস। কিন্তু আমি আপনার জন্য এত আকর্ষণ বোধ করি, এত আপনার কথা ভাবি যে আমার কিছু করার থাকে না।
তুমি টিনার বন্ধু, মনে রেখো।
ডেভিড তেমনি সুন্দর হেসে বলল, কখনও ওর বয়ফ্রেন্ড ছিলাম না। আমি ওর কাছে কৃতজ্ঞ। ওর বন্ধুত্বের সূত্রেই তো আপনাকে দেখলাম।
ইরা মুখে প্রতিবাদ করলেও ভিতরে ভিতরে কি খুশি হয়নি? মধ্য তিরিশে সে এখনও যুবকদের মুগ্ধ করতে পারে?
ইরা রিভলভারটা ড্রয়ারে রেখে খুব যত্ন করে ডেভিডের হাতে অ্যান্টিসেপটিক লাগাল। ক্ষতস্থান সিল করে দিল। তারপর বলল, অনেক পাগলামি হয়েছে। এবার বাড়ি যাও।
আমি শুনেছিলাম, আপনার ইনসোমনিয়া আছে।
আছেই তো।
আমাকে একটা অনুমতি দেবেন?
কীসের অনুমতি?
আমি রাত বারোটা-একটায় চলে আসব। তারপর আপনার সঙ্গে গল্প করব বা বসে থাকব। যদি আপনি পছন্দ না করেন তা হলে অন্য কথা।
সেটা হয় না।
কেন হয় না? আপনি ইচ্ছে করলেই হয়।
রাতে একজন পুরুষকে… না, না। ছিঃ!
আপনি তো সংস্কার থেকে বলছেন। কিন্তু ভালবাসা কি ওসব মানে?