আপনি আর্লি রাইজার, আজ এত দেরি হল কেন?
রিখিয়ায় তো প্রায় ভর সন্ধেবেলাই শুয়ে পড়তে হয়। রাত নটায়। এখানে তা হয় না। এসব কাণ্ডের ফলে মাথা গরম হয়ে ঘুম আসতে দেরি হয়েছিল।
ঘুম থেকে উঠে কী কী করেছেন?
নাথিং টু টেল অ্যাবাউট। টয়লেটে গেছি, মান করেছি। একটু জানালার ধারে বসে থেকেছি। তারপর চা আনতে বেরোলাম।
ব্যস? আর কিছু নয় তো?
না।
কোনও সাক্ষী আছে?
সাক্ষী? সাক্ষী কে থাকবে? ফ্ল্যাটে তো আর কেউ নেই।
দারোয়ান গোছের কেউ?
একজন দারোয়ান আছে ঠিকই। কিন্তু সে আমাকে কতদূর চেনে কে জানে। চিনতেও পারে।
ঠিক আছে। দরকার হলে তাকে জেরা করা যাবে।
শোনো শবর, সিংঘানিয়া আমার একজন পোটেনশনয়াল বায়ার। তাকে মারলে আমার প্রভূত ক্ষতি।
একদিকে ক্ষতি হলে অন্যদিকে লাভ।
কীসের লাভ?
ছবিগুলো এবার হয়তো কিনে নিতে পারবেন।
কিনে আর কী লাভ? বাজারে চাউর হয়ে গেছে।
তবু তো কিনতে চেয়েছিলেন।
হ্যাঁ। তখন বিবেচনাটা কাজ করেনি।
এখন করছে?
করছে।
আরও একটা খবর আছে।
কী খবর?
ছবিগুলো সিংঘানিয়ার ঘর থেকে চুরি গেছে।
বলো কী?
ঠিকই বলছি।
ছবির জন্যই মার্ডার।
তাই তো মনে হচ্ছে। আপনার দ্বিতীয় পিস্তল নেই তো!
না না। একটাই কাজে লাগে না।
সিংঘানিয়া খুন হয়েছে বত্রিশ বোরের বুলেটে?
তার মানে সন্দেহের আঙুল এখন আমার দিকে?
যা ভাববার ভাবতে পারেন।
আর যে-কেউ সন্দেহ করুক, তুমি কোরো না।
সন্দেহের অভ্যাসটা ছাড়তে চায় না সহজে।
আমাকে কী করতে বলো তুমি?
কিছু না। চুপচাপ থাকুন। সিংঘানিয়ার ছবি পাহারা দেওয়ার জন্য চারজন লোক ছিল।
তবু চুরি?
হ্যাঁ। একজন বেয়ারাগোছের লোক এসে খবর দেয় যে সাহেব ময়দানে খুন হয়েছে। ওরা চারজন দৌড়োয়। সেই ফাঁকে–
ওঃ।
মজা কী শুনবেন?
বলো।
যখন খবরটা দেওয়া হয় খুনটা তখনও হয়নি৷
যাঃ, তা হলে বেয়ারা জানল কী করে?
বেয়ারার মতো পোশাক হলেই বেয়ারা হতে হবে তা তো নয়। ওরা যখন যায় তখনও সিংঘানিয়া পুরোপুরি মরেনি।
কিছু বলে গেছে?
হ্যাঁ। বলে গেছে সে মারা গেলে ছবিগুলো যেন বোম্বেতে মিস্টার কুমারকে দেওয়া হয়।
বড্ড খারাপ লাগছে এসব শুনতে।
আপনার অ্যালিবাই পোক্ত থাকলেই হল।
সেটা পোক্তই আছে। তোমরা মানবে কিনা দেখো।
মানব। প্রমাণ পেলে নিশ্চয়ই মানব। আপনি দারোয়ানটার সঙ্গে কথা বলুন।
কী বলতে হবে?
সে আপনাকে চেনে কি না।
ধরো চেনে। তার পর?
জিজ্ঞেস করবেন, সকালে বাড়ি থেকে কেউ বেরিয়েছে কি না।
তার পর?
এইটুকুই আপাতত। ছাড়ছি।
দাঁড়াও। ইরা কী বলছে?
কী বলবে?
তার অ্যালিবাইও দেখছ তো!
অফ কোর্স।
ছবিগুলোর কী হবে শবর?
কী করে বলি? ছাড়ছি।
.
ইরাদেবী, আপনার রিভলভারটা কোথায়?
কেন?
দরকার আছে।
কেন দরকার বলুন।
জিনিসটা আছে তো!
আছে।
লাইসেন্সটা আমিই করিয়ে দিয়েছিলাম। মনে আছে?
হ্যাঁ।
জিনিসটা আপনি কখনও ব্যবহার করেছেন?
করেছি।
কীভাবে?
যখন লাইসেন্স করি তখন একজন অফিসার আমাকে বলেছিলেন রিভলভার কেনার পর যেন ফাঁকা জায়গায় গিয়ে কয়েকবার ফায়ার করি।
তাই করেছিলেন?
হ্যাঁ।
আর কখনও ব্যবহার করেননি?
ইরা অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, তেমন কিছু নয়।
ভেবে দেখুন। ব্যাপারটা ইম্পর্ট্যান্ট।
করেছি।
কীভাবে?
আমাদের বাড়িতে একবার চোর আসে।
কবে?
পাঁচ-ছয় মাস আগে।
তারপর?
জানালার গ্রিল খুলে ঢুকবার চেষ্টা করে। তখন আমি গুলি চালাই।
বটে! তার গায়ে গুলি লেগেছিল?
হ্যাঁ। তবে সিরিয়াস কিছু হয়নি। কারণ গুলি খেয়ে সে পালিয়ে যায়।
পুলিশে রিপোর্ট করেছিলেন?
না।
সে কী? রিপোর্ট করেননি কেন?
কিছু চুরি যায়নি, লোকটাও মরেনি। রিপোর্ট করে কী হবে?
লোকটা উন্ডেড হয়েছিল কি?
বোধহয় হয়েছিল। জানালার নীচে রক্তের দাগ ছিল। রাস্তা অবধি রক্তের ফোঁটা দেখা গেছে। তারপর আর ছিল না।
রিপোর্ট করলে ভাল করতেন।
আমার ভয় হয়েছিল, পুলিশ জানলে আমার রিভলভারটা বাজেয়াপ্ত করবে।
তা করার কথা নয়। লোকে এসব অকেশনে সেলফ ডিফেন্সের জন্যই আগ্নেয়াস্ত্র রাখে। রিভলভারটা কোথায় থাকে?
দিনের বেলা আলমারিতে চাবি দিয়ে রাখি। রাতে বালিশের পাশে নিয়ে শুই।
কেন বলুন তো! ও পাড়ায় কি খুব চোর-ডাকাত?
তা আছে। তা ছাড়া আমরা তো একতলায় থাকি। একতলাটা সবসময়েই একটু ইনসিকিয়োর্ড। দোতলা হচ্ছে। ওপর তলায় ততটা ভয় নেই।
আপনি রিভলভারের ইউজ তা হলে জানেন?
জানি। না জানলে কি লাইসেন্স পাই?
আজ সকালে কখন ঘুম থেকে উঠেছেন?
হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?
দরকার আছে।
আমার ইনসোমনিয়া আছে। ঘুম হয় না।
একদমই হয় না?
মাঝে মধ্যে একটু আধটু। কোনও ঠিক নেই।
আপনি কি ঘুমের ওষুধ খান?
না। ভয় পাই।
কেন?
আমার মা ঘুমের ওষুধের ওভারডোজে মারা যান।
তারও কি ইনসোমনিয়া ছিল?
না। অন্তত ক্রনিক নয়। একটু বেশি বয়সে হাইপারটেনশন থেকেই ঘুম ভাল হত না।
রাতে না ঘুমিয়ে কী করেন?
লিখি, পড়ি। আগে বেহালা বাজাতাম। এখন বাজাই না।
কী লেখেন আর পড়েন?
ডায়েরি লিখি। রোজনামচা। আর আবোল তাবোল যা খুশি। গল্পের বই পড়ি।
তা হলে তো আপনার ঘরে সারা রাতই আলো জ্বলে?
যতক্ষণ লেখাপড়া করি ততক্ষণ জ্বলে। তারপর আলো নিবিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি। সাধারণত রাত দুটো নাগাদ শুই।
কাল রাতের কথা বলুন।
কী বলব?
কাল রাতে আপনি ক’টায় শুতে গিয়েছিলেন?
কিন্তু এসব কথা জিজ্ঞেস করছেন কেন?
কারণ আছে। জরুরি কারণ।