কেন, আমার ফাঁসি হবে?
হ্যাঁ।
হবে না। সবাই তোমার মৃত্যু চায়, তা জানো?
মারবে কেন? মেরো না।
মাঝে মাঝে মরতে হয়। মরো।
তারপরই উপর্যুপরি কয়েকবার ঝলসে উঠল চপারটা। সর্বজিৎ অবাক হয়ে দেখল তার শরীরের অনেকগুলি ক্ষতস্থান থেকে নানা বর্ণের রং বেরিয়ে আসছে। নীল, হলুদ, সাদা, সবুজ, কালো, লাল। রক্তের রং কি এরকমই?
সর্বজিৎ কি মরে যাচ্ছে? সর্বনাশ! মরে যাচ্ছে নাকি?
ঘুম ভেঙে মধ্যরাতে ধড়মড় করে উঠে বসে সর্বজিৎ।
৩. সিংঘানিয়া রোজ সকাল চারটেয় ওঠে
সিংঘানিয়া রোজ সকাল চারটেয় ওঠে। তার অ্যালার্মের দরকার হয় না। ছেলেবেলার অভ্যাস। ঠিক চারটেয় তার ঘুম ভাঙবেই। উঠে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে পুজোয় বসে। নিরেট সোনার তৈরি পাঁচ ইঞ্চি লম্বা গণপতি মূর্তিটি তার সঙ্গেই থাকে।
পুজো সেরে একটু ফলের রস খেয়ে সে বেড়াতে বেরোয়। ডাক্তার বলেই দিয়েছে দু’বেলা খানিকটা হাঁটতেই হবে। সিংঘানিয়ার দু’জন সহকারী এবং দু’জন দেহরক্ষী দু’পাশের ঘরে থাকে। সিংঘানিয়া কোথাও গেলে তারা ঘর পাহারা দেয়। চারজনই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রক্ষী। চারজনই স্বাস্থ্যবান এবং বুদ্ধিমানও। গণপতি কখনও যোগ্য লোক ছাড়া নেয় না। পাহারা দেওয়ার মতো তার অনেক কিছু আছে।
সিংঘানিয়ার একজন পঞ্চম পাহারাদারও আছে। সে হল বিশাল ডোবারম্যান কুকুর ডোরা। সেও হোটেলেরই ঘরে থাকে, সহকারী দু’জনের সঙ্গে।
ডোরা প্রভুভক্ত কুকুর। সকালে সিংঘানিয়ার সঙ্গে সেও বেড়াতে যায়। সরু কিন্তু শক্ত চেন দিয়ে বেঁধে তবেই তাকে নিয়ে বেরোয় সিংঘানিয়া। ডোরা কিলার ডগ।
সকালে কলকাতার রাস্তায় তেমন গাড়ি-ঘোড়া নেই।
হোটেল থেকে ময়দানের দূরত্ব বেশি নয়। গাড়ি নেওয়ার দরকার হয় না। সিংঘানিয়া নাতিদ্রুত হাঁটতে হাঁটতে ময়দানে পৌঁছে গেল। ডোেরা একটা গাছের তলায় প্রাতঃকৃত্য সেরে নেওয়ার পর সিংঘানিয়া কুকুরটার সঙ্গে একটা রবারের বল নিয়ে খানিকক্ষণ খেলা করল। একটু জিরিয়ে নিয়ে ফের জোরকদমে হাঁটা।
গুড মর্নিং মিস্টার সিংঘানিয়া।
মর্নিং।
কেমন আছেন?
গুড। ভেরি গুড।
সঙ্গে কুকুর কেন?
বেড়াতে নিয়ে এসেছি।
বাঃ বেশ ভাল।
হ্যাঁ ভাল।
তা হলে ভালই আছেন?
ভেরি গুড। ভেরি ভেরি গুড।
সামনে শর্টস আর কামিজ-পরা একজন হঠাৎ খুব ঠান্ডা হাতে পকেট থেকে একটা পিস্তল বের করল।
সিংঘানিয়া অবাক হয়ে বলল, এ কী? মাগিং নাকি?
না মাগিং নয় সিংঘানিয়া।
তা হলে পিস্তল দিয়ে কী করবেন?
আই শ্যাল কিল ইউ।
কেন, আমি কী করেছি? আমি তো—
কথাটা শেষ হল না সিংঘানিয়ার। উপর্যুপরি এবং দ্রুত দুটি গুলি তাকে ছাদা করে দিল বুকে।
সিংঘানিয়া পড়ে যাচ্ছিল। কুকুরটা দুটি চিৎকার দিতেই তার মাথা ভেঙে গেল শক্তিশালী বুলেটে।
তারপর ময়দানের ঘাসে দুটি মৃতদেহ পড়ে রইল। একজন মানুষ ও একটি কুকুরের।
সকাল সাড়ে আটটায় ফোনটা পেল সর্বজিৎ।
আমি শবর বলছি।
বলো।
কী করছিলেন?
ফ্লাস্কে করে চা নিয়ে এলাম দোকান থেকে। এবার চা খাব।
বেশ বেশ। কখন উঠলেন ঘুম থেকে?
এই তো, সাড়ে ছ’টা-সাতটা হবে।
রিখিয়াতে তো আরও সকালে ওঠেন।
হ্যাঁ। মর্নিং ওয়াক করতে যাই।
কলকাতায় সেটা হচ্ছে না বুঝি?
নাঃ। কলকাতায় হাঁটব কোথায়? তার ওপর বৃষ্টি বাদলায় পথঘাট তো যাচ্ছেতাই।
আচ্ছা, বছর পাঁচেক কি তারও আগে আপনি একটা স্মল আর্মসের লাইসেন্স পেয়েছিলেন কি?
কেন বলো তো?
জাস্ট কৌতূহল।
হ্যাঁ। রিখিয়াতে থাকাটা কতখানি বিপজ্জনক সেটা আন্দাজ করতে না পেরে লাইসেন্স নিয়েছিলাম। পিস্তলও একটা কিনি।
পিস্তল না রিভলভার?
পিস্তল। ওয়েম্বলে।
কত বোর?
পয়েন্ট বত্রিশ।
সেটা কোথায়?
আমার সুটকেসেই থাকে।
সুটকেসটা কোথায়?
আমার কাছে।
আর একটা কথা।
বলো।
আপনার স্ত্রীরও একটা রিভলভার থাকার কথা।
হ্যাঁ। আছে। ওটার জন্য তুমিই লাইসেন্স বের করে দিয়েছিলে।
সেইজন্যেই জিজ্ঞেস করছি, রিভলভার কি উনি কিনেছিলেন?
অফ কোর্স। বাড়িতে ক্যাশ টাকা থাকে বলে কিনেছিল।
সেটা কি লুগার?
তা হবে। হ্যাঁ, লুগারই। পয়েন্ট বত্রিশ বোর।
বেশ, এবার কাজের কথা।
বলো।
আমি টেলিফোনটা ধরে আছি, আপনি উঠে গিয়ে সুটকেসটা খুলে দেখুন পিস্তলটা আছে কিনা।
কেন বলো তো!
দেখুন না।
সর্বজিৎ উঠে গিয়ে সুটকেস খুলল। কেনার পর জিনিসটা পড়েই আছে। দু’-তিনবার ফাঁকা মাঠে গুলি চালিয়েছিল সে। সেটাকে উদ্বোধন বলা যায়। তারপর কাজে লাগেনি। সুটকেস হাঁটকাতে হল কম নয়। একেবারে তলার দিকে প্লাস্টিকে মোড়া জিনিসটা পাওয়া গেল।
ফিরে এসে ফোন তুলে সে বলল, হ্যাঁ, আছে। কিন্তু কী হয়েছে শবর? আমি কাউকে খুনটুন করলাম নাকি?
কেউ কাউকে করেছে। ব্যাড নিউজ।
কে কাকে খুন করল শবর?
কে তা জানি না। তবে কাকে তা জানি।
প্লিজ কাম আউট। আমার ফ্যামিলির কেউ কি?
আরে না।
তা হলে?
সিংঘানিয়া।
বলল কী? কখন?
আজ সকালে৷ ময়দানে। ডিউরিং হিজ মর্নিং ওয়াক।
সর্বনাশ!
সঙ্গে একটা ডোবারম্যান কুকুর ছিল, সেটাও মরেছে।
গুলি নাকি?
হ্যাঁ। খুব ক্লোজ রেঞ্জ থেকে। সিংঘানিয়ার হিরের আংটিটাও নেই।
তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছ?
না। তবে আপনার অ্যালিবাইটা পোক্ত হওয়া দরকার।
অ্যালিবাই?
হ্যাঁ, সকালে ঠিক কখন উঠেছেন ভেবে বলুন।
ভেবেই বলছি। ভাবতে দাও। …ছ’টা বেজে চল্লিশ মিনিট হবে।