হ্যাঁ।
আপনার কথায় তেরোটার মধ্যে দশটা ছবি নিশ্চয়ই ইভ সিরিজ নয়?
না।
তা হলে আপনার হিসেব অনুযায়ী আপনার দশটা ছবি মিসিং।
তাই তো দাঁড়াচ্ছে।
সেই দশটা ছবি কী নিয়ে আঁকা মিস্টার সরকার?
প্রকৃতি, ল্যান্ডস্কেপ, গাছপালা, দেহাতি মানুষ এইসব।
স্পেসিফিক বলতে পারবেন না?
তাও পারব। আমার নোট করা থাকে।
শেঠরা কতদিন পরপর আপনার ছবি আনতে যায়?
বছরে একবার বা দু’বার।
বছরে আপনি ক’টা ছবি আঁকেন?
দশ বারোটা তো বটেই। বেশিও আঁকি।
সেটা কি খুব বেশি?
না। কারণ ওখানে আমার অখণ্ড অবসর। কাজেই একটু বেশিই আঁকতে পারি।
আপনি কি শুধু তেলরঙে আঁকেন?
তেল বা অ্যাক্রিলিক।
ছবি আঁকার আগে স্কেচ বা আউটলাইন করে নেন?
সব সময়ে নয়।
আপনি কখনও অর্ডারি ছবি আঁকেন? ধরুন কারও পোট্রেট আঁকার অফার পেলে? ফি যদি ভাল হয়?
আঁকি। তবে রিখিয়ায় যাওয়ার পর আর হয় না।
অফার পাননি?
পেয়েছি। কিন্তু রিফিউজ করেছি।
আপনি এই স্ক্যান্ডালটা নিয়ে আর কিছু বলবেন?
না।
সভা ভেঙে গেল।
বেরিয়ে এসে যখন গাড়িতে উঠে বসল সর্বজিৎ তখন কোথা থেকে এসে তার পাশে বসে পড়ল শবর। জয় গেল সামনে, ড্রাইভারের পাশে।
শবর, কেমন হল আজকের কনফারেন্স?
সো সো। উত্তেজিত হননি বলে ধন্যবাদ।
তোমাকে একটা কথা জানানো হয়নি। টেলিফোনে কে যেন মাঝে মাঝে আমাকে গালাগাল করছে।
তাই? তবে এরকম তো এখন হতেই পারে।
ইরা আজ ফোন করেছিল।
কী কথা হল?
আমি বললাম যা বলার। বিশ্বাস করল না।
না করারই কথা।
শবর, আমার মনে হয় কলকাতায় থাকার কোনও মানে হয় না। এখানে এসেই আমি টায়ার্ড আর অসুস্থ ফিল করছি! কাল যদি ফিরে যাই কেমন হয়?
আপনার আর কয়েকটা দিন থাকার দরকার।
কেন বলো তো?
ফর সাম রেফারেন্সেস অ্যান্ড সাম হেল্প।
তাতে কিছু হবে?
দেখাই যাক না।
আর একটা কথা। বিল্ট আমার ছেলে নয়, এ কথাটা তোমাকে বলেছিলাম। তুমি সেটা কেন যে ইরাকে বললে?
কথাটা পাশ কাটিয়ে শবর বলল, কাল ছবিগুলো দেখতে যেতে হবে।
.
পেইন্টিংগুলো হোটেলের ঘরে চারদিকে সাজিয়ে রেখেছিল সিংঘানিয়া। সকালের আলোয় বেশ ঝলমল করছিল ছবিগুলো।
শবর বলল, দেখুন বাট ডোন্ট টাচ এনিথিং।
সিংঘানিয়া হেসে বলল, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ইয়েস ইউ মাস্ট বি কেয়ারফুল।
সর্বজিৎ ছবিগুলো একাগ্র চোখে দেখে যাচ্ছিল। খুবই ভাল জাতের পোট্রেট। বিদেশি রঙে এবং তুলিতে আঁকা, যে এঁকেছে সে পাকা শিল্পী। নকল বলে চেনাই যায় না। হ্যাঁ, সর্বজিতের কিছু বৈশিষ্ট্য এইসব ছবিতেও আছে।
আর ইউ প্লিজড মিস্টার সরকার?
আমার প্লিজড হওয়ার কারণ কী?
দিজ আর গুড পেইন্টিংস স্যার।
হতে পারে। বাট আই অ্যাম ওরিড।
কেন স্যার?
দি ইম্পস্টার ইজ এ গুড পেইন্টার।
ইস্পস্টার তোক কি না হোক, রিসেন্ট কন্ট্রোভার্সি হাজ মেড দি পেইন্টিংস এক্সট্রিমলি ভ্যালুয়েবল। গতকাল রাতে ওভার টেলিফোন আমি বোম্বে থেকে বিগ অফার পেয়েছি।
কত বিগ?
দ্যাট ইজ ট্রেড সিক্রেট স্যার।
তার মানে ছবিগুলো আপনি হাতছাড়া করছেন না?
নো স্যার। আই অ্যাম এ বিজনেসম্যান। তবে চিন্তা করবেন না। বোম্বাই দিল্লিতে আপনার ফ্যামিলিকে তো কেউ চেনে না।
কিন্তু পাবলিসিটি হ্যাজ রিচড দোজ সিটিজ। নইলে আপনি বিগ অফার পেতেন কি?
ঠিক কথা। কিন্তু পাবলিক স্ক্যান্ডাল হবে না। কালেক্টর জানবে তো জানুক। চা, কফি কিছু খাবেন স্যার?
না, থ্যাঙ্ক ইউ।
সিংঘানিয়া শবরকে বলল, আপনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট এক্সপার্টরা কখন আসবে স্যার?
বেলা এগারোটায়।
আফটার দ্যাট মে আই প্যাক মাই পেইন্টিংস?
হ্যাঁ।
আমি কাল বোম্বে চলে যাব। বুঝতেই পারছেন আমার সময় নেই।
ঠিক আছে মিস্টার সিংঘানিয়া।
হোটেল থেকে বেরিয়ে এসে শেঠদের দেওয়া গাড়িতে চেপে সর্বজিৎ বলল, তা হলে তুমি সিংঘানিয়াকে ছেড়ে দিচ্ছ?।
শবর একটা শ্বাস ফেলে বলল, উপায় কী?
আমার নামেই ছবিগুলো চালু থাকবে?
আপাতত। যদি প্রমাণ হয় যে আপনার আঁকা নয় তা হলে অন্য কথা। সে ক্ষেত্রে সিংঘানিয়া হয়তো আপনার নামের স্বাক্ষর ছবি থেকে মুছে দেবে।
হুঁ। ঠেকাতে পারো না?
না, কোন আইনে ঠেকাব?
আইন আমি জানি না, তোমারই জানবার কথা।
হয়তো তাই। এই কেস তো আগে পাইনি। এই প্রথম।
শবর, আমি জানি তুমি একজন দুর্দান্ত পুলিশ অফিসার।
যতটা শোনেন ততটা নয়।
তোমার বুদ্ধি ক্ষুরধার আমি জানি। তুমি কিছু আঁচ করতে পারছ না?
না।
কেন পারছ না শবর?
ব্যাপারটা জটিল।
কাউকে সন্দেহ হচ্ছে না?
এখনও নয়।
আমিও কেমন ধাঁধায় পড়ে গেছি।
ভাববেন না। কয়েকটা দিন দেখা যাক।
আমাকে কতদিন থাকতে হবে এখানে?
থাকুন না কয়েকদিন।
আমি এখানে হাপিয়ে উঠছি।
জানি। ছবি আঁকছেন?
আঁকছি। ছবিই তো বাঁচিয়ে রাখে।
একটা কথা বলবেন?
কী কথা?
আপনি কলকাতায় যাদের ছবি আঁকা শেখাতেন তাদের মধ্যে কেউ কি শত্রুতা করতে পারে?
কী করে বলব?
এনি হান্চ?
না শবর। নো হানচ।
শবরের ভ্রু কুঁচকে রইল।
.
নিশুত রাত। হঠাৎ দরজায় বিশাল খট খট শব্দ হল। তারপর তীব্র ধাক্কা।
সর্বজিৎ ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে উঠল, বাঁচাও।
কেন চেঁচাল তা সে জানে না। বড্ড ভয়। দরজাটা ভীষণভাবে ধাক্কা দিচ্ছে কেউ।
মটাৎ করে ছিটকিনি ভেঙে দরজা খুলে গেল।
সভয়ে চেয়ে সর্বজিৎ বলল, তুমি।
হ্যাঁ আমি।
কেন এসেছ?
হাতে এটা কী দেখছ?
ওঃ ওটা তো—
কী মনে হচ্ছে তোমার?
সর্বজিৎ আতঙ্কের গলায় বলল, এরকম কোরো না প্লিজ—