সঙ্গে সঙ্গে একটা সমবেত গুঞ্জনধ্বনি উঠল ঘরের মধ্যে।
নব দাস বলল, সর্বজিৎ সরকার কি রাজি?
হ্যাঁ, রাজি।
তা হলে আমরা পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব যে তারা ছবিগুলো বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা করান।
নব দাস বসে পড়ল।
একজন অবাঙালি সাংবাদিক ভাঙা বাংলায় বলল, আই অ্যাম হিয়ার টু কনগ্র্যাচুলেট ইউ মিস্টার সরকার। আই থট ইউ হ্যাভ শোন গ্রেট কারেজ ইন দোজ পেইন্টিংস। বাট ইফ দোজ
আর সাবস্টিটিউটস দেন দ্যাট ইজ অ্যানাদার ম্যাটার।
সর্বজিৎ মৃদু হেসে বলল, আই অ্যাম নট দ্যাট কারেজিয়াস।
ওকে স্যার, থ্যাঙ্ক ইউ।
আরও একজন হিন্দি সাংবাদিক উঠে ভাঙা বাংলায় বলল, স্যার, আপনার কি মনে হয় নিজের ফ্যামিলির ন্যুড আঁকা খারাপ কাজ?
আমি ওসব জানি না।
আর ইউ এ মর্যালিস্ট?
তাও বলতে পারি না।
আর্টিস্টদের কি মর্যাল থাকা উচিত?
কেন নয়?
আমরা তো মনে করি আর্টিস্টদের কোনও সংস্কার থাকবে না।
এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।
আপনি সমর্থন করেন না?
হয়তো সব সংস্কার মানি না। কিন্তু কিছু ভ্যালুজ তো মানতে হয়।
আর্টের ভ্যালুজ কি আলাদা নয়?
আমি অত কথা বলতে পারব না।
আমি তো মনে করি ইউ হ্যাভ ডান এ কারেজিয়াস থিং। ইন ফ্যাক্ট আই কেম হিয়ার ফ্রম দিল্লি জাস্ট টু শেক ইয়োর হ্যান্ডস।
এবার একজন বাঙালি সাংবাদিক পিছন থেকে বলল, আপনি ভয় পেয়ে সবকিছু অস্বীকার করছেন না তো?
না। ভয় কীসের?
মিস্টার সিংঘানিয়া কিন্তু আপনার এজেন্টের কাছ থেকেই ছবিগুলো কিনেছেন। আপনার এজেন্টও বলছে, ছবিগুলো তারা আপনার কাছ থেকেই পেয়েছে। ফিঙ্গারপ্রিন্টের একটা কথা উঠেছে বটে, কিন্তু সেটা খুব নির্ভরযোগ্য অজুহাত নয়। একজন আর্টিস্ট দূরদর্শী হলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাতে ছবিতে না ওঠে তার ব্যবস্থা করে রাখবে।
সর্বজিৎ অসহায়ভাবে বলল, এর চেয়ে বেশি আমার আর কিছু করার নেই।
আপনার স্ত্রী বা মেয়েরা প্রেস কনফারেন্সে এলেন না কেন?
তারা কেন আসবে?
আমরা তাদের বক্তব্য শুনতে চাই।
আপনারা তাদের অ্যাপ্রোচ করে দেখতে পারেন।
ওকে। আমরা মিস্টার সিংঘানিয়া আর জয় শেঠকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই।
রিপোর্টারদের ভিড়ের মধ্যেই মোটাসোটা, ফরসা, আহ্লাদি চেহারার সিংঘানিয়া বসে ছিল। উঠে এল মাইকের সামনে। হাতজোড় করে বলল, আমি কোনও ভিআইপি নই। সামান্য ব্যবসায়ী। আমার কয়েকটা কারবার আছে। আর্টও একটা। গুড মার্কেট, গুড মানি। কোনও দু’নম্বরি ব্যাপার নেই। ক্লিন পারচেজ।
সেই বাঙালি ঠান্ডা-মাথার রিপোর্টার প্রশ্ন করল, মেনি ফেসেস অফ ইভ সিরিজের ছবিগুলি আপনি কবে কিনেছেন এবং কার কাছ থেকে?
এভরিবডি নোজ। দেড় বছর আগে মিস্টার শেঠের কাছ থেকে কিনি।
আপনি সর্বজিৎ সরকারের অনেক ছবি কিনেছেন কি?
হ্যাঁ। মিস্টার সরকারের বাজার ভাল।
আপনি তার ছবি দেখেই বলে দিতে পারবেন যে সেটা মিস্টার সরকারের আঁকা?
নিশ্চয়ই পারব।
ইভ সিরিজ সম্পর্কে বলতে পারবেন?
পারব। ছবি মিস্টার সরকারের আঁকা বলেই জানি। আর আমি ছবিগুলো তার নাম করেই বিক্রি করব, যতক্ষণ না প্রমণ হচ্ছে যে এসব ওঁর আঁকা নয়। আমার আর কিছু বলার নেই। আই অ্যাম এ হার্ট পেশেন্ট। প্লিজ স্পেয়ার মি।
জয় শেঠ বলল, আমরা মিস্টার সরকারকে সম্মান করি। হি ইজ নাইস টু আস।
এই ছবিগুলো কীভাবে আপনাদের হাতে আসে?
পিতাজি রিখিয়ায় গিয়ে নিয়ে এসেছিলেন।
প্যাক করে আনা হয়েছিল কি?
হ্যাঁ। পিতাজি প্যাকার নিয়েই যান।
আপনি তো শুনলেন সর্বজিৎ সরকার বলছেন উনি এসব আঁকেননি।
শুনলাম। বাট উই আর অ্যাট এ লস।
ছবির ব্যাপারে আপনাদের সিকিউরিটি কেমন?
খুব ভাল। পেইন্টিংস আর কস্টলি থিং। সো উই টেক কেয়ার।
নকল ছবি ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলছেন?
নো স্যার।
পুলিশ কি আপনাদের গোডাউন বা স্টোর দেখেছে?
হ্যাঁ স্যার।
তারা কী বলছে আমরা জানতে চাই।
সেই মারমুখো কর্মকর্তা উঠে বলল, পুলিশের বক্তব্য এখন নয়। তদন্ত চলছে। এখনও সব অ্যাঙ্গেল দেখা হয়নি।
সাংবাদিকটি জয় শেঠকে বলল, মিস্টার শেঠ, আপনি কি বলতে চান সর্বজিৎ সরকার মিথ্যে কথা বলছেন?
নো স্যার। নট দ্যাট।
তা হলে কী বলতে চান স্পষ্ট করে বলুন।
আমরা মিস্টার সরকার এবং আরও অনেকের পেইন্টিংসকিনি। উই হ্যাভ আদার এজেন্টস। সো দেয়ার মে বি এ মিক্স আপ অ্যান্ড মে বি এ সাবস্টিটিউশন মেড বাই সাম ওয়ান।
সেটা কী করে সম্ভব?
জয় শেঠ মাথা চুলকে বলল, এরকম হতে পারে কেউ এইসব ছবি এঁকে আমাদের স্টোরে ঢুকিয়ে দিয়েছিল।
তা হলে তো বলতে হবে আপনাদের স্টোর ফুলফ নয়।
ফুলপ্রুফ নয় সে কথা ঠিক। এই ঘটনার পর আমরা আরও সাবধান হয়েছি।
আপনারা কি সর্বজিৎ সরকারের ফ্যামিলি মেম্বারদের চেনেন?
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।
আপনারা যখন দেখলেন ছবিগুলো ওঁর ফ্যামিলি মেম্বারদের নিয়ে আঁকা তখন আপনারা সেটা ওঁকে বা ওঁর পরিবারকে জিজ্ঞেস করলেন না কেন?
আমরা তো ভেবেছি যে মিস্টার সরকারেরই আঁকা। উই ডোন্ট আস্ক এনি আর্টিস্ট অ্যাবাউট দেয়ার পেইন্টিংস।
মিস্টার সরকারের যেসব ছবি আপনারা কেনেন তার হিসেব আপনাদের নিশ্চয়ই আছে?
শিয়োর।
গত দু’ বছরে আপনারা সর্বজিতের ক’টা ছবি কিনেছেন?
তেরোটা।
তার মধ্যে দশটা ইভ সিরিজ?
হ্যাঁ।
তেরোটাই বিক্রি হয়ে গেছে?
না। তিনটে আছে।
এবার মিস্টার সরকারকে প্রশ্ন করব, আপনার হিসেবও কি তাই বলে? দেড় বছরে শেঠদের আপনি তেরোটা ছবি দিয়েছেন?