যদি মেয়েটা বেঁচে যায় তাহলে ঝামেলা নেই। কিন্তু বাইচান্স মারা গেলে তোকে আবার ডাকতে হবে। মৃন্ময়ী দিদিমণি এটাকে মার্ডার মনে করছেন।
ও ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।
কলকাতায় যাচ্ছিস কবে?
কালই যেতে হবে।
যা। আর মনে রাখিস, রাখী বেঁচে উঠলেও এখন কিছুদিন ওর সঙ্গে কমিউনিকেট করিস না।
কেন কাকু?
ব্যাপারটা কমপ্লিকেটেড হয়ে উঠতে পারে।
আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
কতগুলো সত্য আছে যা খুব ক্রুয়েল। এই যেমন তোর আর রাখীর ব্যাপারটা। রাখী যদি তোকে না চায় তাহলে স্পোর্টসম্যানের মতো ব্যাপারটা মেনে নেওয়াই তো ভালো। না হলে তোর বিরুদ্ধে আমাকে ব্যবস্থা নিতে হয়। ইভটিজিং-এর দায়ে। সেটা তার ফ্যামিলির পক্ষে সম্মানজনক হবে কি?
কেউ কি এরকম কোনো কমপ্লেন করেছে?
মৃন্ময়ী দিদিমণি ওরকমই একটা হিন্ট দিয়ে রেখেছেন।
উনি আমাকে পছন্দ করেন না জানি। কিন্তু এতটা করবেন তা জানা ছিল না।
তুই একজন ব্রাইট ইয়ংম্যান। কাঁচা বয়স। এসব কাফ লাভের তেমন কোনো দাম নেই। বরং কিছুদিন দূরে থাক, সব ঠিক হয়ে যাবে।
আপনি বলছিলেন, রাখী মারা গেলে ব্যাপারটা কমপ্লিকেটেড হবে। কেন কাকু?
সেক্ষেত্রে সুইসাইড না হয়ে মার্ডার বলে প্রমাণ হলে আমাদের তদন্ত করতে হবে। তখন বোধহয় তোকেও ফের টেনে এনে নতুন অ্যাঙ্গেলে তদন্ত করার প্রয়োজন দেখা দেবে। তবে রাখী বেঁচে যাবে বলেই মনে হয়। তোকে সাবধান করে দেওয়া দরকার বলেই ডেকে এনেছি। কিপ অ্যাওয়ে ফ্রম হার।
আমি এখনও কিছু বুঝে উঠতে পারলাম না।
আমিও না। এখন বাড়ি যা।
আমার অ্যাবসেন্সে এমন কি ঘটল যে সব সম্পর্ক পালটে গেল। আমাকেই বা আপনি এসব বলছেন কেন? কাকু, ব্যাপারটা খোলাখুলি আমাকে একটু বুঝিয়ে বলুন।
বোঝানোর কিছু নেই রে পাগলা। শুধু বলি, কলকাতায় ফিরে যা, লেখাপড়ায় মন দে, এখানকার ঘটনা-টটনা ভুলে যা।
তাই কি হয় নাকি কাকু? ইচ্ছে করলেই সব ভুলে যাওয়া যায়?
চেষ্টা কর। তুই তো মানী লোকের ছেলে। আত্মসম্মানবোধ তো তোরও আছে। একটা মেয়ে যখন তোকে রিফিউজ করছে তখন তুই তার পেছনে লেগে থাকবি কেন? কাজকর্মে মন দে, হৃদয়ের ব্যাপার-স্যাপার ভুলে যেতে সময় লাগবে না।
আমি বাচ্চা ছেলে নই কাকু যে, ওভাবে আমাকে ডাইভার্ট করবেন। রাখীকে না হয় আমি ডিস্টার্ব করব না, ব্যাপারটাও ভোলবার চেষ্টা করব, কিন্তু তা বলে কারণটা না জেনে তো সেটা করতে পারি না। এর কারণটা কী তা আমাকে জানতেই হবে।
এখন বাড়ি যা, মাথা ঠাণ্ডা কর।
৪. আজ রিলিভড
আপনাকে আজ রিলিভড দেখাচ্ছে। তার মানে কি রাখী এখন আউট অফ ডেঞ্জার?
মৃন্ময়ী মাথা নেড়ে বললেন, না। ডাক্তাররা প্রাণপণ চেষ্টা করছে, চিকিৎসার কোনো ত্রুটি হচ্ছে না সেটা ঠিক। তবে হার্ট আর কিডনিতে কিছু প্রবলেম ডেভেলপ করেছে বলে শুনছি।
এখানকার ডাক্তাররা ভালো বলেই তো জানি।
হ্যাঁ। তাঁরা ভরসা দিচ্ছেন। তুমি বুঝি আজ রাখীকে দেখতে গিয়েছিলে?
হ্যাঁ। দুপুর বেলা। দুপুর বেলা।
ও সময়টায় তো ভিজিটিং আওয়ার্স নয়।
না। বলে-কয়ে ঢুকে গিয়েছিলাম।
বলে-কয়ে? সেটা আবার কীরকম?
ভিজিটিং আওয়ারর্সে ভিড় হয়, অপেক্ষা করতে হয়। অন্য সময়ে ওসব ঝামেলা থাকে না। দারোয়ানকে মিষ্টি কথায় রাজি করানো যায়।
আর ধরা পড়লে?
আমি খুব একটা বীরত্ব দেখাতে যাই না। ভদ্রভাবে, বিনীত গলায় কথা কইলেই দেখি কাজ বেশি হয়।
অন্যসময় হলে নার্সিং হোমের নিয়ম ভাঙার জন্য তোমাকে হয়তো বকতুম। এখন আমার মাথার ঠিক নেই। রাখীকে দেখে তোমার কী মনে হল বলো তো। বাঁচবে মনে হয়?
হ্যাঁ। নিশ্চয়ই বাঁচবে।
শুধু মুখ দেখেই বলছ?
মুখেও তো কিছু ছাপ থাকে।
তার মানে?
শরীরের ভেতরকার জ্বালা-যন্ত্রণা বা অসুখের একটা ইমপ্রেশন মুখে প্রকাশ পায়।
কী জানি বাপু, আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না।
একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
কী বলো তো।
আপনি কিছু মনে করবেন না তো?
মনে করার মতো কথা নাকি?
একটু সেনসিটিভ হয়তো।
হোক গে, বলো।
রাখীর বাবাকে কি একটা খবর দেওয়া উচিত নয়?
মৃন্ময়ী একটু অবাক হয়ে অলোকের মুখের দিকে চেয়ে রইলেন। তারপর মাথা নেড়ে বললেন, তার দরকার নেই। সে তো আর আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেনি।
কিন্তু এটা তো একটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। উনি হয়তো পরে জানতে পেরে দুঃখিত হবেন। হয়তো অভিমান করে আছেন বলে সম্পর্ক রাখেন না। খবর পেলে হয়তো এসে হাজির হবেন।
মৃন্ময়ী একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, তাঁকে আমি ভালোই চিনি। অনেক বছর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। আমাদের সম্পর্কে কোনো আগ্রহ থাকলে খোঁজখবর তো করত। তাকে খবর দেওয়ার মানেই হয় না।
আপনি যদি রাগ না করেন বলি, আপনি কি কখনো তাঁর খোঁজ করেছেন?
তা করিনি সত্যি। তেতো সম্পর্কের জের টেনে কী হবে বল।
সে তো ঠিক কথাই।
তা ছাড়া সে চলে যাওয়ার পর কোথায় গেছে, কী করছে, এমনকী বেঁচে আছে কি না। তাও তো জানি না। তোমার বোধহয় কথাগুলো শুনতে ভালো লাগছে না।
কথাগুলো ভালো লাগারও তো কথা নয়। নিষ্ঠুর সত্য। আমাদের সবাইকেই জীবনে এরকম কিছু সত্যকে মেনে নিতে হয়। ভালো না লাগলেও। তিনি ঠিক কীরকম মানুষ ছিলেন, ডমিনেটিং?
না না, বরং উলটোটা। মুখচোরা, লাজুক গোছের।
আমিও সেরকমই শুনেছি।
কার কাছে শুনেছ?