আপনারা বাঁধ দেওয়ার কথা বলছেন, ভালো কথা, কিন্তু হাইডেল তো অনেক টাকার ব্যাপার।
বড়ো প্রজেক্টের জন্যে অনেক টাকা দরকার বটে, কিন্তু ছোটো মিনি হাইডেল অনেক কম খরচে করা যায়। আমরা জল সংরক্ষণের সঙ্গে হাইডেলটা সবসময়েই জুড়ে দিই। তার কারণ, ভবিষ্যতে পৃথিবীতে যখন ফুয়েল ক্রাইসিস দেখা দেবে, তখন এই হাইডেলগুলোর গুরুত্ব অনেকগুণ বেড়ে যাবে। উঁচু জায়গা থেকে যে জল নীচে নামবে, তা তো আর আপনা থেকে সোর্সে ফিরে যাবে না। আর তা না গেলে সেইসব সোর্সও শুকিয়ে যাবে। এইসব হাইডেল পাওয়ারের সাহায্যে বাষ্প করে জল আবার সোর্সে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে, ভবিষ্যতে এই ওয়াটার সাইকেল ভীষণ প্রয়োজন হবে। ইন ফ্যাক্ট সারাদেশেই আমরা এরকম প্রজেক্টের প্রস্তাব সরকারকে দিচ্ছি।
আপনি টেকনিক্যাল হ্যাণ্ড নন?
না। সেই অর্থে নই।
তাহলে আপনার কোম্পানি আপনাকে এ-কাজে পাঠালো কেন?
ছেলেটি একটু হেসে বলল, বিকজ আই অ্যাম প্যাশনেটলি ইন লাভ উইথ ওয়াটার, জলের চরিত্র বোঝবার জন্য আমি বিস্তর মাথা ঘামিয়েছি। জলের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়েও আমি পত্র-পত্রিকায় কিছু লিখেছি। কোম্পানি আমাকে সেইজন্যই চাকরি দিয়েছে, তবে আমার রিপোর্ট ফেভারেবল হলে কোম্পানির বিশেষজ্ঞ আর আমিনরাও আসবে।
আপনার নাম?
অলোক চক্রবর্তী।
ক্রেডেনশিয়ালস দেখাতে পারেন?
কেন পারব না? বলে অলোক তার ঝোলা ব্যাগ থেকে একটা ল্যামিনেট করা আইডেনটিটি কার্ড বের করে বিশ্বদেবের হাতে দিল।
বিশ্বদেব ভ্রূ কুঁচকে কার্ডটার দিকে চেয়ে বলল, আপনার ডেজিগনেশন এগজিকিউটিভ। এ শব্দটা খুব ধোঁয়াটে। কোম্পানিতে আপনার পজিশনটা ঠিক বোঝা গেল না।
ওটা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। আমি সামান্য বেতনভুক লো-লেভেল কর্মচারী মাত্র।
সরকার যখন আপনার কোম্পানিকে অ্যাপয়েন্ট করেছে, তখন ধরে নিতে হবে আপনার কোম্পানি এলেবেলে নয়। এখন বলুন, আপনি এখানে ঘুরে কী অ্যাসেসমেন্ট করলেন। ফেভারেবল?
হ্যাঁ, খুবই ফেভারেবল। তবে উপত্যকায় কিছু পাহাড়ি মতো গ্রাম আছে, জলাধার হলে সেগুলো ডুবে যাবে। ওই লোকগুলোর পুনর্বাসন দরকার হবে। অবশ্য প্রজেক্ট হলে লোকে কাজও পাবে।
সরকার প্রজেক্ট করার কথা ভাবে ঠিকই, কিন্তু টাকায় কুলিয়ে উঠতে পারে না।
ঠিকই তো। তা ছাড়া এদেশে জোনাল সেন্টিমেন্ট এবং পক্ষপাত আছে, মন্ত্রীরা যে যার নিজের রাজ্য বা এলাকার ডেভেলপমেন্ট করতে চায়। বাধা আছে। তবে তা নিয়ে সরকার মাথা ঘামাবে।
আপনি কতদিন হল এ-শহরে এসেছেন?
প্রায় একমাস।
এতদিন খবর দেননি কেন?
খবর তৈরি হলে অবশ্যই দিতাম। স্পটগুলো ঘুরে দেখে তবেই আপনার কাছে এসেছি।
কোথায় উঠেছেন?
প্রথমে রূপকথা হোটেলে উঠেছিলাম। তারপর পাহাড়ে চলে যাই, শাওন নামে একটা গাঁয়ে এক চাষি পরিবারের সঙ্গে কিছুদিন কাটাই। তারপর হায়ার অলটিচুডে তাঁবুতে থাকতে হয়। গতকাল আমার কাজ একরকম শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে দিল্লি থেকে আমার দু-জন সহকারীও এসে গেছেন। ফলে আমরা পেরেরা সাহেবের বাড়িটা ভাড়া নিয়েছি।
পেরেরার বাংলো?
হ্যাঁ।
তিনজনের জন্যে অত বড় বাড়ি নিয়ে কী করবেন? ভাড়াও তো অনেক।
আমাদের কোম্পানির টেকনিক্যাল হ্যাণ্ডরাও এসে পড়বেন।
বুঝতে পারছি আপনি এক মাসের মধ্যে অনেক কাজ করে ফেলেছেন। কিন্তু আমি কেন জানতে পারলাম না সেটাই ভাবছি।
আমার কাজ ছিল বাইরে, গাঁয়ে, জঙ্গলে আর পাহাড়ে। তাই খবরটা আপনার কাছে আসেনি। তবে হয়তো আমারই উচিত ছিল সব কথা আপনাকে জানানো।
বেটার লেট দ্যান নেভার। এ শহরের যারা এমিনেন্ট পারসোনালিটিজ খবরটা তাদেরও জানানো দরকার। তাই না? ধরুন আপনারা চেষ্টা করলেন, সরকার প্রস্তাবটা মানতে চাইল না। সেক্ষেত্রে এই শহরের মানুষ একজোট হয়ে, আণ্ডার প্রপার লিডারশিপ, সরকারের ওপর প্রেশার ক্রিয়েট করতে পারে। প্রজেক্ট যদি সত্যিই হয় তাহলে আমাদের শহরটার গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাবে।
অলোক একটু হাসল, কিছু বলল না।
বিশ্বদেব বলে, তাই নয় কি?
অলোক একটু উদাস গলায় বলে, মুশকিল কী জানেন, সবাই নিজের লোকালিটিস নিয়ে ভাবে। গোটা দেশটা নিয়ে ভাববার লোক ক্রমে কমে যাচ্ছে।
আরে মশাই, আপনি তো আচ্ছা লোক। আপনিই তো বললেন যে, এই জায়গাটা আপনার প্রজেক্টের পক্ষে খুবই সুইটেবল। তাহলে এখন আবার অন্যরকম বলছেন কেন?
অলোক একটু গম্ভীর হয়ে বলে, ভারতবর্ষে নদীর অভাব নেই। সব নদীকেই ঠিকমতো ব্যবহার করলে এবং জলকে কাজে লাগালে গোটা দেশটারই চেহারা পালটে ফেলা সম্ভব। এই প্রজেক্টটা হলে শুধু আপনার শহর নয়, অনেকটা এলাকা জুড়ে একটা পরিবর্তন ঘটবে। হ্যাঁ, আপনার প্রস্তাবটা আমি মানছি। শহরের ইমপর্টেন্ট লোকদের ব্যাপারটা জানানো উচিত এবং প্রয়োজন। আমি বহিরাগত এবং এখানকার বাসিন্দা নই। আমার কথা লোকে শুনবে না বা উলটো বুঝবে। যদি দয়া করে আপনি এটা করেন তাহলে ভালো হয়।
সেটা সহজ কাজ। একটা মিটিং কল করলেই হবে। কিন্তু তার আগে প্রজেক্টের একটা ব্লু প্রিন্ট বা সারভে রিপোর্টের অফিসিয়াল কপি আমার হাতে আসা চাই।
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। আমি জানি, আপনি নিজের সোর্স থেকেও খবর পেয়ে যাবেন। তবে আপনাকে এটুকু বলতে পারি যে, কোম্পানি আমার রিপোর্ট অ্যাপ্রুভ করেছে। তাদের সুপারিশ দিল্লির সরকারি দফতরে জমাও পড়ে গেছে। কাজ অনেকটা এগিয়েছে বলেই আমি আপনার কাছে এসেছি।