মিস ভট্টাচার্য। কেমন আছেন?
রাখী জবাব দেয় না। চেয়ে থাকে।
ডাক্তার আরও কিছু প্রশ্ন করে। আঙুল দেখিয়ে কটা আঙুল জিজ্ঞেস করে। রাখী নিরুত্তর।
কিছুক্ষণ পর রাখী ফের আচ্ছন্নতায় ডুবে যায়।
ডাক্তার চিন্তিত মুখে বলে, লস অফ মেমরি মনে হচ্ছে। নার্স, সাইকিয়াট্রিস্ট মুকুল সেনকে কল দিয়ে রাখুন।
সকালে মুকুল সেন আসে, আবার রাখীর জ্ঞান ফিরে এলে, মুকুল সেন কিছু প্রশ্ন করে। রাখী জবাব দেয় না। কিন্তু চারদিকে তাকায়। অস্থিরতা প্রকাশ করে।
মৃন্ময়ী এবং রমেন ভট্টাচার্য একসঙ্গে ঘরে ঢোকেন।
রাখী মৃন্ময়ীকে চিনতে পারে না। কিন্তু কিছুক্ষণ রমেনের দিকে স্থিরদৃষ্টিতে চেয়ে থেকে ফের আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
ডাক্তার মুকুল সেন বললেন, টেমপোরারি মেমোরি লস বলেই মনে হচ্ছে।
রমেন জিজ্ঞেস করে, চান্স অফ সারভাইভ্যাল কতটা?
মুকুল সেন বলেন, শি উইল কাম অ্যারাউণ্ড।
মেডিসিনের ডাক্তার বললেন, শি ইজ ইমপ্রুভিং, কনটিনিউয়াস ইসিজি চলছে। এখনও পর্যন্ত অ্যালার্মিং কিছু পাওয়া যায়নি। তবে হার্ট ইজ উইক।
ডাক্তাররা বেরিয়ে গেলে রমেন আর মৃন্ময়ী পরস্পরের দিকে তাকায়।
মৃন্ময়ী হঠাৎ বলে, রাখী তোমার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিল কেন বলো তো!
রমেন মাথা নেড়ে বলে, জানি না, তবে দেখলাম তাকিয়ে যেন চেনার চেষ্টা করেছিল। অথচ আমি ওর কেউ নই। ব্যাপারটা একটু অদ্ভুত।
বাড়ি চলো।
দাঁড়াও। সবে তো এলাম। আবার হয়তো জ্ঞান ফিরবে।
না। বাড়ি চলো। আমি একটা ডিসিশন নিয়েছি। তোমাকে বলা দরকার।
এখনই?
হ্যাঁ। আমার মন বলছে রাখীর জন্যে আর চিন্তা নেই। ও বাঁচবে। চলো, আমাদের কথাটা জরুরি।
চলো। নার্স, প্লিজ মেয়েটার ওপর নজর রাখবেন।
নার্স হেসে বলল, চব্বিশ ঘণ্টা নজর রাখা হচ্ছে। এটা আই.সি.ইউ., কাজেই নজর রাখাই নিয়ম। তার ওপর সাদা পোশাকের পুলিশও আছে বাইরে।
পুলিশ! পুলিশ কেন?
তা, জানি না। বোধহয় জ্ঞান ফিরলে ওকে ইন্টারোগেট করা হবে।
দু-জনে বেরিয়ে আসে।
মৃন্ময়ী বাড়িতে এসে প্রথমে রমেনের জন্য কফি করে আনে। তারপর কাছাকাছি বসে বলে, শোনো, তুমি হয়তো জানো না যে, রাখী বিশ্বদেবের ছোটো ছেলে বাবলুর প্রেমে পড়েছে।
রমেনের হাতের কফির কাপ খানিকটা চলকে যায়। সে অবাক হয়ে বলে, মাই গড! বায়োলজিক্যালি ওরা ভাই-বোন।
আমার মাথা চিন্তায়-চিন্তায় খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বদেব জানে?
হ্যাঁ। কিন্তু জেনে কী হবে? আমি ছেলেটার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছি। কিন্তু তাতে তো ঠেকানো যাবে না।
কী করতে চাও?
আমাদের এখানকার পাট তুলে দিতে হবে।
পারবে?
রাখীর জন্যে পারতেই হবে। দরকার হলে চাকরি ছেড়ে দেব। আর তোমার প্রস্তাবে রাজি। ভেবে দেখেছি। এটাই বেস্ট অলটারনেটিভ।
দাঁড়াও। আমি যে আমার কোম্পানির কাজে এখানেই পোস্টেড।
তাহলে তুমিও চাকরি ছাড়। আমাদের অন্য কোথাও চলে যেতে হবে।
তোমার ডিসিশনটা হেস্টি হয়ে যাচ্ছে। রাখী যদি যেতে না চায়?
ওর মেমরি কাজ করছে না। এখন যদি চলে যাই, তাহলে আপত্তি করতে পারবে না।
উদ্বেগে তোমার মাথা কাজ করছে না। মেমরি ফিরে এলে তখন ও মানবে কেন এই সিদ্ধান্ত।
আমি যে কিছুই ভাবতে পারছি না।
যেটা সবচেয়ে গুরুতর প্রশ্ন সেটা হল, রাখী সুইসাইড করতে চাইল কেন?
জানি না। সত্যিই জানি না। সুইসাইড বলে আমার মনে হয় না। ওকে কেউ খুন করতে চেয়েছিল।
কেন তা চাইবে?
ও তখন বাড়িতে একা ছিল। আমার মনে হয় কোনো চেনা মানুষ এসে ওকে ছাদে নিয়ে যায়। মাথায় কিছু দিয়ে মেরে অজ্ঞান করে মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে চলে যায়।
মৃন্ময়ী, খুনের তো মোটিভ থাকবে। উদ্দেশ্যহীন খুন তো লজিক্যাল নয়।
তুমি ঠাণ্ডা মাথার লোক। তোমার কী মনে হয়?
কোনোভাবে ও হয়তো জানতে পেরেছে ওর বাবা কে।
তুমি, আমি আর বিশ্বদেব ছাড়া আর কেউ এ-কথাটা জানে না।
ঠিক বলছ?
হ্যাঁ।
রমেন মাথা নেড়ে বলে, অঙ্ক মিলছে না।
.
বিশ্বদেবের অফিসঘরে বিশ্বদেব আর অলোক মুখোমুখি।
বিশ্বদেব বলে, বাই দি ওয়ে, তুমি কি রমেন ভট্টাচার্যকে চেনো?
কেন চিনব না? উনি আমাদের বস। আগে তা এখানেই থাকতেন। ওঁর স্ত্রী এখনও—
বিশ্বদেব হাত তুলে বাধা দিয়ে বলে, হ্যাঁ, হ্যাঁ জানি। রমেনের পজিশন কীরকম?
উনি সিনিয়র পোস্টে আছেন। ম্যানেজেরিয়াল র্যাঙ্ক।
শুনলাম সে এখানে এসেছে। আমার সঙ্গে এখনও দেখা হয়নি। উই ওয়ার ক্লোজ ফ্রেণ্ডস।
প্রজেক্ট হলে উনি এখানেই থাকবেন। ভেরি কমপিটেন্ট ম্যান।
হঠাৎ বিশ্বদেব প্রসঙ্গ পালটে বলে, শোনো অলোক, আজ রাতেও তুমি আমাদের সঙ্গেই খাবে।
আরে, তার কী দরকার? রোজ রোজ আপনার অন্ন ধ্বংস করতে যাব কেন?
তোমার মাসিমার ইচ্ছে।
উঠে দাঁড়ায় অলোক, বলে, ঠিক আছে। কিন্তু আমাকে এখন একটু সাইটগুলোতে যেতে হবে টিম নিয়ে। ফিরতে দেরি হবে।
হোক। আমরা অপেক্ষা করব।
একটু বাদেই রমেন ভট্টাচার্যকে মোটরবাইকের ক্যারিয়ারে চাপিয়ে পাহাড়ি অঞ্চলের রাস্তায় দেখা যায় অলোককে।
রমেন বলে, অলোক, প্লিজ সাবধানে চালাও। তোমার রাশড্রাইভ করার বদ অভ্যাস কেন?
অলোক তবু স্পিড কমায় না। এক জায়গায় বাইক দাঁড় করিয়ে সে তার প্ল্যান বোঝাতে থাকে।
রমেন দু-চারটি প্রশ্ন করে।
তারপর দুজনে একটা গাছতলায় বসে।
অলোক জিজ্ঞেস করে, ভট্টাচার্যদা, বউদিকে ডির্ভোস করেছিলেন কেন?