শর্মিলা অবাক হয়ে বলে, কী করে বুঝলি?
কেমন ক্যাবলা টাইপের দেখলে না! গুলগল্প ঝেড়ে গেল। পোশাক দেখলেই তো বোঝা যায়, একদম গোবরগণেশ। খোঁজ নিয়ে দেখো, মোটেই সিয়াটলে থাকে না।
বিশ্বদেব খুব শান্ত গলায় বলল, খোঁজ আমার নেওয়া হয়ে গেছে। আমি আজ সকাল দশটায় এদের দিল্লি অফিসে ই-মেইল করে অলোকের পজিশন জানতে চাই। তারা যে-জবাব পাঠিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, অলোক সিয়াটলে থাকে। গ্লোবাল ফ্রেণ্ডের রিসার্চ গ্রুপের সিনিয়র সায়েন্টিস্ট। আমেরিকায় ডক্টরেট করেছে।
স্বস্তি একটু লাল হয়ে বলল, তাহলেই-বা কী? মোটেই ভালো লোক নয়। কেমন যেন দেমাকি।
শর্মিলা হেসে ফেলে বলল, স্বস্তি, সত্যি করে বলো তো, ছেলেটাকে তোমার পছন্দ হয়ে যায়নি তো!
যাঃ, কী যে বল বউদি!
বলেই স্বস্তি পালিয়ে গেল।
বিশ্বদেব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ছেলেটা মন্দ নয়। বুঝলে রুচিরা, স্বস্তির জন্য ভাবছিলাম। কিন্তু এ-ছেলে তো সংসারধর্মই করতে পারবে না। সারাবছর বাইরে বাইরে থাকলে সংসার করবে কখন?
তা হোক? আমার অপছন্দ নয়।
শর্মিলা বলল, আমারও খুব পছন্দ বাবা।
টুলু ভ্রূ কুঁচকে কী ভাবছিল। বলল, আমি ভাবছি অন্য কথা।
বিশ্বদেব বলল, কী কথা?
রাখীর সঙ্গে ছোকরা আবার ঝুলে পড়েনি তো? রাখীর সুইসাইডের অ্যাটেম্পটে এ ছোকরারও অবদান থাকতে পারে। এ হয়তো রিফিউজ করেছে।
শর্মিলা অত্যন্ত দৃঢ়কণ্ঠে বলে, হতেই পারে না।
কেন পারে না?
রাখী কখনো ওর প্রেমে পড়েনি।
বলতে চাও অন্য কারো প্রেমে পড়েছে?
হ্যাঁ।
সে কে?
সেটা বলা যাবে না।
.
হোটেলের ঘর। রমেন ভট্টাচার্য আর মৃন্ময়ী।
রমেন বলল, মৃন্ময়ী, আমি তোমাকে ব্ল্যাকমেল করতে আসিনি। এসেছি অফিসের কাজে। যদি প্রজেক্টটা হয়, তবে হয়তো আগামী দু-তিন বছর আমাকে এখানে ঘন ঘন আসতে হবে এবং বেশ অনেকদিন করে থাকতে হবে। সেটা কথা নয়। আসল কথা আমি সব জেনে এবং বুঝেও তোমার সঙ্গে একটা আপসরফায় আসতে চাই। তুমি ভেবে দেখো।
কীরকম আপসরফা চাও তুমি?
রিকনসিলিয়েশন।
সেটা কি সম্ভব! এতদিন পরে?
সেটাই তো ভেবে দেখতে বলছি তোমাকে।
আর রাখী?
রাখী আমার সন্তান নয় জানি। কিন্তু ওর প্রতি মায়া আছে।
আছে?
হাঁ। ওর দু-তিন বছর বয়স পর্যন্ত নিজের মেয়ে মনে করে ওকে ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু বড়ো হওয়ার পর দেখলাম ওর মুখে আমার বা তোমার আদল নেই। তৃতীয় ব্যক্তির আদল। সেই ব্যক্তি বিশ্বদেব। তখনই আমি ডিভোর্স করি।
সব মনে আছে।
অভিযোগ তুমিও অস্বীকার করনি।
কেন করব? আজকাল ডি.এন.এ. টেস্টে সত্য গোপন থাকে না।
ঠিক কথা। কিন্তু এতগুলো বছর কেটে যাওয়ার পর ভেবে দেখলাম দুনিয়ায় একা বাঁচা যায় না। আমার তো কেউ নেই। তুমি-আমি দু-জনেই অনেক বদলে গেছি।
আমাকে কি তোমার আর বিশ্বাস হবে?
বললাম তো, এ-বয়সে মানুষের দায়বদ্ধতা এসে যায়। ভেবে দেখো।
বিয়ে করনি কেন?
ভয়ে। নতুন মানুষ এনে ফের যদি বিপাকে পড়ি?
নারীহীন জীবন?
তা বলতে পারি না। ওসব কথা থাক। আমি সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।
আমি ভাবব, মেয়েটার জন্যে উদ্বেগে আমার মাথার ঠিক নেই।
জানি, মেয়েটা কি আমার কথা বলত?
খুব। তারপর ধীরে ধীরে অ্যাডজাস্ট করে নিল। তুমি কি ওকে নিজের মেয়ের মতো ভাবতে পারবে?
নিজের মেয়ে তো নেই, তাই সেটা বলা সম্ভব নয়। কিন্তু ওই তো বললাম, ওকে অ্যাকসেপ্ট করতে অসুবিধে হবে না।
.
সকালে বিশ্বদেব যখন বারান্দায় বসে খবরের কাগজ দেখছে, তখন রুচিরা এল, পরনে হাউসকোট।
তোমার সঙ্গে একটা কথা ছিল।
বলো।
ওই অলোক ছেলেটিকে তোমার কেমন লাগে?
ভারি ভালো।
কত মাইনে পায় জান?
হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?
স্বস্তির জন্যে ভাবছি।
আরে স্বস্তি তো এখনও নাবালিকা।
তোমার নাবালিকা মেয়ের বয়স আঠারো পেরিয়েছে।
তাতে কী? বিয়ের কথা ভাববার বয়স তো নয়।
শোনো, স্বস্তি লেখাপড়ায় তেমন ভালো নয়, মন নেই। আমার মনে হয় ও বেসিক্যালি হাউসওয়াইফ টাইপ। ঘর-সংসার করার আগ্রহ বেশি।
স্বস্তি কি ওর প্রতি ইন্টারেস্টেড?
অ্যাপারেন্টলি না। বরং উলটোই।
কীরকম?
বউমাকে বলেছে, ছেলেটাকে ওর নাকি একটুও ভালো লাগে না। কেমন জংলি টাইপ, বোকা-বোকা, আনমনা, এইসব।
তাতে বোঝা গেল ওর পছন্দ নয়।
আবার উলটো বুঝলে। ওসব বলা মানেই ও ইন্টারেস্টেড। একটু বেশিই ইন্টারেস্টেড, সেটা ঢাকা দিতেই ওসব বলছে।
উঃ বাপ রে! এ তো দেখছি সাংঘাতিক ভুলভুলাইয়া!
এবার বলো, অলোক কত মাইনে পায়?
মাইনে তোমার মনোমতো না হলে কি পাত্র খারিজ?
না, তা নয়। ওকে আমার ভারি ভালো লেগেছে।
তাহলে মাইনে-ফাইনে গুলি মেরে বিয়ে লাগিয়ে দিলেই তো হয়। পুরুষমানুষ যেমন করেই হোক বউকে ঠিকই খাওয়াতে পারবে। কিন্তু কথা হল অলোকের মতটাও তো নেওয়া দরকার।
সেটার জন্যই তোমাকে লাগবে। ওর মতটা জেনে নাও।
বড্ড তাড়াহুড়ো করছ। অলোক সম্পর্কে আরও একটু খোঁজখবর নেওয়া দরকার।
তাড়াহুড়ো করব কেন? প্রস্তাবটা দিয়ে রাখলাম। এখন খোঁজখবর যা করার তুমিই করো।
টুলু আর শর্মিলা কি জানে?
খুব জানে। শর্মিলাই তো আমাকে বলল, মা, স্বস্তি কিন্তু বেহেড।
.
নার্সিং হোমে রাত্রি বেলা একা ঘরে হঠাৎ রাখীর জ্ঞান সামান্য সময়ের জন্যে ফিরে আসে। কিন্তু চোখের দৃষ্টি শূন্য, কর্তব্যরত নার্স গিয়ে ডাক্তারকে খবর দেয়। ডাক্তার আসে।