উড়ো খবর নয়। বাবলুর বন্ধুরা কবুল করেছে যে, ব্যাপারটা সত্যি।
এরকম হওয়া বিচিত্র নয়। তবে ডিসগাস্টিং।
কথাটা হল, মার্ডার বা সুইসাইড বা যেকোনো চেষ্টা হয়ে থাকলে আমাদের একটা নিয়মমাফিক এনকোয়ারি করতেই হবে। সে ক্ষেত্রে লাভ অ্যাঙ্গেল বাদ যাবে না।
মেয়েটা সেরে উঠবে শিবদাস, ডাক্তাররা সেরকমই ভরসা দিচ্ছে। জ্ঞান ফিরলে ওকে জিজ্ঞেস করে দেখলে হবে।
তবু কথাটা আপনাকে জানিয়ে রাখছি। পাবলিসিটি হয়তো পুরোটা এড়ানো যাবে না। বাবুলকে আমি একটু সাবধান করে দিয়েছি।
বাবলু কলকাতায় থাকে, এ ব্যাপারে তার দায় কতটা তা ভেবে দেখার ব্যাপার।
ইদানিং নাকি মেয়েটা বাবলুকে অ্যাভয়েড করছিল। বাবলু তাতে খুবই অ্যাজিটেটেড। ও মেয়েটাকে ছাড়তে চায় না। আমি ওকে বলেছি মেয়েটা যখন চাইছে না তখন ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা না করাই ভালো। আপনিও বাবা হিসেবে ওকে কথাটা বুঝিয়ে দেবেন।
ঠিক আছে। আর কিছু?
হ্যাঁ, রিগার্ডিং সিকিউরিটি।
সিকিউরিটি!
হ্যাঁ। মৃন্ময়ী বলছেন এটা অ্যাটেম্পট অভ মার্ডার। যদি তাই হয়, তাহলে রাখী হয়তো আততায়ীকে চেনে। সে ক্ষেত্রে যদি রাখী সারভাইভ করে, তাহলে আততায়ীর বিপদ। তাই আততায়ী রাখীকে আর একবার মার্ডার করার চেষ্টা করবে না কে বলতে পারে।
মাই গড, আমি তো এ-দিকটা ভাবিনি।
ভাববেন কেন? এসব ভাবনা পুলিশের জন্য। আর আপনার নার্সিং হোমে পুলিশ মোতায়েন করার সুবিধে নেই। বড্ড ইজি অ্যাকসেস। হাসপাতালে একটা আইসোলেশনে হাই সিকিউরিটি ওয়ার্ড আছে। এখানে তো জানালায় গ্রিল অবধি নেই।
তা ঠিক, কিন্তু ট্রিটমেন্টটা এখানে বেটার হবে। যদি বলেন তো আমি চব্বিশ ঘন্টা নজরদারির ব্যবস্থা করতে পারি।
রিস্ক তবু থাকবেই। ডাক্তারেরা অবশ্য রিমুভ করতে বারণ করছে। পয়জনিংয়ের ফলে নাকি হার্টটা খুব উইক। সামান্য শকে ফ্যাটালিটি ঘটতে পারে।
হ্যাঁ। কেসটা এখনও পুরো কন্ট্রোলে নেই।
শিবদাস বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার পর বিশ্বদেব রাখীর কেবিনে গিয়ে একটা চেয়ারে বসে রাখীর দিকে চেয়ে রইল। চোখে একটু জল চিকচিক করছে।
একজন ডাক্তার এবং নার্স পিউ মজুমদার ঘরে ঢুকলে বিশ্বদেব অশস্তি বোধ করে।
ডাক্তার তাকে দেখে হেসে বলে, গুড মর্নিং স্যার। কেমন আছেন?
আপনিই তো একে দেখছেন।
হ্যাঁ।
কেমন মনে হচ্ছে?
বেঁচে যাবে বলেই তো মনে হয়।
সেটা কতদিনে বোঝা যাবে?
বলা মুশকিল। কোমাটা না কাটলে অ্যাসুয়েরেন্স দেওয়া যাচ্ছে না। হার্টটা নিয়েই প্রবলেম। কিডনি বেশ খানিকটা ড্যামেজড। তবে শি ইজ অ্যাপারেন্টলি ইমপ্রুভিং।
কোনো কথাটথা কি বলেছে?
না। কথা বলার মতো সিচুয়েশন আসেনি।
সারভাইভ্যাল চান্স কতটা?
ফিফটি টু সিক্সটি পারসেন্ট।
ডাক্তার চলে যাওয়ার পর পিউ বলল, একটা কথা বলব স্যার?
বলো।
রাগ করবেন না। রাখী বেশ ভালো মেয়ে।
আমি জানি।
বাবলু ওকে ভালোবাসে।
বিশ্বদেব হঠাৎ হাত তুলে থামিয়ে দিয়ে বলে, ওসব ভালোবাসাসির কথা আর বোলো না। আজকাল পাঁচ বছর প্রেম করার পর যে বিয়ে হয় তা পাঁচমাস টিকছে না। অল বোগাস।
কিন্তু
বিশ্বদেব হাত তুলে পিউকে থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে বিরক্তির সঙ্গে বলল, আজকাল এত ভালোবাসার কথা শুনি যে আমার অ্যালার্জি হওয়ার জোগাড়। মেয়েটা এখনও সিরিয়াস কণ্ডিশনে পড়ে আছে, এটা কি ওসব কথা বলার সময়? তোমার কান্ডজ্ঞান কবে হবে?
পিউ থতমত খেয়ে বলে, সরি স্যার। বাবলু খুব ভেঙে পড়েছে দেখে বলে ফেলেছি।
আমি জানি, বাবলুর প্রতি তোমার একটা দিদিসুলভ টান আছে। ওকে বরং বুঝিয়ে বোলো, এখন এসব রোমান্টিক চিন্তা ঝেড়ে ফেলে ক্যারিয়ারে মন দিক। কিছুদিনের মধ্যেই বিদেশে যাবে, সেখানে বিস্তর পড়াশুনো করতে হবে। অন্য দিকে মন পড়ে থাকলে কী করে দাঁড়াবে? হৃদয়দৌর্বল্য কোনো কাজের জিনিস নয়, জঞ্জালবিশেষ। মানুষের বারোটা বাজায়, তার বিনিময়ে দেয় না কিছুই।
ঠিক আছে স্যার, আমি বাবলুকে বোঝানোর চেষ্টা করব।
বাড়িতে ফিরে বিশ্বদেব কিছুক্ষণ বাইরের খোলা অন্ধকার বারান্দায় চুপচাপ বসে রইল। পরিস্থিতি কি একটু ঘোরালো হয়ে উঠছে? কর্মফল বলে কিছু একটা আছে, যার ফল এখন নানাভাবে ফলছে! বিচক্ষণ বিশ্বদেব কখনো তাকে আর মৃন্ময়ীকে নিয়ে রসালো গুজব সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ দেয়নি। তাদের নিয়ে কোনো গুঞ্জন ওঠেনি এ শহরে। এতটাই সাবধান ছিল বিশ্বদেব। কিন্তু মেয়েটার মুখে তার অবিকল প্রতিকৃতি ফুটে উঠেছে। লোকে মিলিয়ে দেখলে অবাক হবে। তারপর রাখীর হঠাৎ আত্মহত্যার এই চেষ্টা কি কোনোভাবে সেই অতীতকে আরও উন্মোচিত করে দেবে? এবং সেই সঙ্গে বিস্মৃতপ্রায় অতীত থেকে অলোকের হাত ধরে রমেন ভট্টাচার্যের পুনরাবির্ভাব কোন সংকেত দিচ্ছে? ঘটনাবলির যে প্যাটার্ন অবলোকন করছে বিশ্বদেব তাতে মনে হয়, রাশ তার হাতে নেই। নিয়তিনির্দিষ্টভাবেই একটা নাটকীয়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কি তার জীবন?
গেটের বাইরে একটা মোটরবাইক এসে থামল। তারপর ফটক খুলে লম্বাপানা একটি যুবক সবল পায়ে এগিয়ে এল বারান্দার দিকে। অলোক! আশ্চর্য, বিশ্বদেব ভুলেই গিয়েছিল যে, তার বাড়িতে আজ অলোকের ডিনারের নেমন্তন্ন।
বারান্দার আলোটা জ্বেলে দিয়ে বিশ্বদেব একটা উচ্চাঙ্গের হাসিতে তার উদ্বিগ্ন মুখের ছবি ঢাকা দিয়ে বলল, আরে এসো, এসো। তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।