খুব ক্ষতি না করলে কামড়ায় না। তিনটে আছে, আজ অবধি কাউকে কামড়ায়নি।
গড! ও মাই গড! ক্যান এ স্নেক বি ওয়ান অফ দি ফ্যামিলি!
কদিন যাবৎ ইংরিজিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছে সন্ধ্যা। মায়ে মেয়েতে ছেলেতে মিলে দিনরাত ইংরিজিতে কথা কইছে, তার এক বর্ণও সন্ধ্যা বোঝে না। তবে এটা বুঝতে পারে, ওরা তিনজনে মিলে এবাড়ির লোকেদের নিয়ে ঠাট্টাইয়ার্কি করে। ভাল কথা যে বলে না তা মুচকি হাসি, বাঁকা চাউনি আর ঠোঁট ওলটানো দেখে টের পাওয়া যায়। বড্ড অপমান লাগে, কান-টান ঝাঁ ঝাঁ করে। কিন্তু কিছু করারও তো নেই।
বুডঢা ওপর দিকে চেয়ে চেঁচিয়ে বলে, ডিড ইউ সি ইট দিদি? এ বিগ কোবরা।
ইয়াঃ, আই স ইট। মে বি এ ক্রাইট।
নো, ইট ওয়াজ এ কোবরা। দিস ফুলিশ উওম্যান সেজ ইটস এ রেসিডেনশিয়াল স্নেক। এ মহাত্মা। ডাজ নট বাইট।
শি ইজ এ মোরোন।
সন্ধ্যা বুঝতে পারছে, তাকে নিয়ে কথা কইছে ওরা। খারাপ কথা। সে ভারী ডান্ডাটা তুলে নিল। শক্ত চোয়ালে অপমানটা গিলে ফেলতে চেষ্টা করল। আর সব আক্রোশ নিয়ে দুম দুম করে গুঁড়ো করতে লাগল সর্ষে। ঝাঁঝ আসছে নাকে, সর্ষের গুঁড়া ছিটকে যাচ্ছে চারদিকে। ঠোঁট নড়ছে সন্ধ্যার, কী কেলেঙ্কারি করে এসেছ তোমরা সে কি আর জানি না! পাঁচকান তো করতে পারি না। হাটে হাঁড়ি ভাঙলে টের পেতে বাপু। দিনরাত মায়ে মেয়েতে যে ইংরিজিতে ঝগড়া করছ সে কি এমনি এমনি? আমরা কথাগুলো বুঝতে না পারি, ঝগড়া যে হচ্ছে তা তো বুঝতে বাকি নেই। ছিটেফোঁটা বুদ্ধি আমাদেরও আছে বাপু। কলকাতা ছেড়ে গাঁয়ের বাড়িতে এসে ঘাপটি মেরে আছ সে তো সোহাগ করতে নয়, গা-ঢাকা দিতে। সোহাগ-সুন্দরী, তোমার মুখখানা সুন্দর হলে কী হবে, মনে বিষ।
সোহাগ ওপর থেকে অনুচ্চ স্বরে বলল, শি হেটস মি।
বুডঢা নীচে থেকে বলল, শি হেটস মি টু। অ্যান্ড আই লাইক দ্যাট।
সর্ষে গুঁড়ো করতে করতে সন্ধ্যা বিড়বিড় করতে থাকে, কেমন ইংরিজি বলিস তোরা জানি। বাবা তো কালকেই বলছিল, ওরা যতই ফটাফট ইংরিজি বলুক না কেন, গ্রামারে ভুল আছে। নিমাই মাস্টারের ছেলে অঞ্জনকে নিয়ে এসে সামনে দাঁড় করিয়ে দিলে তো চুপসে যাবি তোরা। ইংরিজিতে সে আশি নব্বই নম্বর পায়…
অনেকক্ষণ ধরেই সোহাগ সাপটাকে দেখছিল। বাঁ ধারে জঙ্গুলে মাঠটার মাঝখানে একটা ছাগল বাঁধা। সেটাই কেমন যেন হঠাৎ ম্যা ম্যা করে ছুটে পালাবার চেষ্টা করছিল। সোহাগের আজকাল কোনও কৌতূহল নেই। কোনও ব্যাপারেই নেই। সে উদাসভাবেই চেয়ে দেখছিল। ঘাস খেতে খেতে শান্ত ছাগলটা হঠাৎ ভয় পেল কেন? ছুটতে গিয়ে পায়ে দড়ি জড়িয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল, ডাকতে লাগল। তখনই লম্বা শরীরটা ধীরে আঁকাবাঁকা হয়ে চলে আসছে। ছাগলটার কাছ ঘেঁষেই এল। তারপর তকতকে উঠোনের কোণ দিয়ে ধীরে ধীরে খড়ের মাচানের নীচে চলে যেতে লাগল। সোহাগ উদাস চোখে সাপটাকে দেখল শুধু। সাপ দেখলে কেউ ভয় পায়, কারও গা ঘিনঘিন করে। তারও ওরকম হয়। এখন হল না। ধীরে ধীরে সে ভেজিটেবল হয়ে যাবে। সে জানে।
সোহাগ, ভিতরে এসো। তোমার খাবার দেওয়া হয়েছে।
মা ডাকছে। সোহাগ উদাস মুখটা ফিরিয়ে বলল, এখন খাব না। খিদে নেই।
তুমি তো চাওমিন খেতে চাইলে। তাই করা হয়েছে।
রেখে দাও। পরে খাব।
পরে গরম করবে কে? এখানে তো মাইক্রোওয়েভ নেই। নুডলস জোগাড় করতেই কমলদাকে বর্ধমান যেতে হয়েছিল। এখানে এসব ফ্যান্সি ফুড অ্যারেঞ্জ করা মুশকিল।
গরম করতে হবে না। ঠান্ডাই খাব।
এসব ভাল হচ্ছে না সোহাগ। তুমি কোনও রুটিন ফলো করছ না।
আই হ্যাভ নো অ্যাপেটাইট। প্লিজ।
তার মানে ইউ উইল স্কিপ দি লাঞ্চ। ব্রেকফাস্টে মোটে একটা বয়েলড ডিম খেয়েছ। এখন বেলা বারোটা বেজে গেছে।
বেলা বারোটা ইজ নট টু লেট।
রাগ করে না খেয়ে থাকাটা প্রিমিটিভনেস। ইট উইল নট হেলপ।
না খেয়ে থাকব কেন? খাচ্ছি তো।
মোটেই খাচ্ছ না। ইউ আর লুজিং ওয়েট। তোমার স্কিন ড্রাই হয়ে যাচ্ছে।
আমি বেশ ভাল আছি। ডোন্ট বদার।
আজ তোমার বাবা আসছেন। তাকে সব বলব।
বোলো। হি ইজ নট এ মেসায়া।
তিনি তোমার বাবা।
সো হোয়াট?
ডোন্ট ডিগ সোহাগ। ডিগিং উইল নট হেলপ। বলছি খেয়ে নাও।
খাব না বলিনি তো। পরে খাব।
ইউ আর ইমপসিবল।
ও কথা কেন বলছ? আই অ্যাম ডুয়িং হোয়াট এভার আই অ্যাম টোল্ড টু ডু। যদি হুকুম করো তা হলে ছাদে উঠে নীচে লাফিয়েও পড়তে পারি। কিন্তু খিদে না থাকলে কিছুতেই খাওয়া যায় না।
খিদে নেই তো সবসময়েই বলছ। এক্সারসাইজ করছ না, মেডিটেশন করছ না, শুধু ঘরে বসে আছ, খিদে না পাওয়ার তো দোষ নেই।
আমার ওসব ভাল লাগছে না।
এই যে বললে ইউ আর ডুয়িং হোয়াটএভার ইউ আর টোল্ড টু ডু?
তুমি কি আমাকে এক্সারসাইজ করতে বলছ?
বলছি। শরীরের জন্য করতে দোষ কী?
আমার ইচ্ছে করে না। মানুষ তো শুধু শরীর নয়।
অন্তত ইউ মে টেক এ ওয়াক।
আমার ভাল লাগে না। লোকেরা তাকায়।
সে তো কলকাতাতেও তাকায়। তাকায় না?
এমন হাঁ করে তাকায় না। আমার হাঁটতে ভাল লাগে না।
সোহাগ, আর ইউ ট্রায়িং টু কিল ইওরসেলফ?
আমার এত কথা বলতে ভাল লাগছে না মা, আমি নীচে যাচ্ছি।
.
পারুল আজ সকাল থেকে পথ চেয়ে আছে। এক বুক তেষ্টা কেন তার আজও? না, এ বোধহয় তেষ্টা নয়, আকাঙ্ক্ষা নয়, এ এক গভীর কৌতূহল। বাঁধা পড়ে গেছে কবেই পারুল। এখন সংসারে জেবড়ে আছে। আর অমলদাও তো কী ভীষণ ব্যস্ত মানুষ।