গোয়েঙ্কাজী সুইট নিয়েছেন। সামনে ছোট একটু বসবার জায়গা। ভিতরে বেডরুমটা উঁকি মারছে।
মানুষের চোখও যে জিভের মতো হয় তা সোমনাথ এই প্রথম দেখলো। শিউলির দিকে তাকাচ্ছেন গোয়েঙ্কা আর চোখের জিভ দিয়ে ওর দেহটা চেটে খাচ্ছেন।
শিউলি মাথা নিচু করে সোফায় বসেছিল। লম্বা বেণীর ডগাটা শিউলি যে বারবার নিজের আঙুলে জড়াচ্ছে গোয়েঙ্কা তাও লক্ষ্য করলেন। সঙ্গিনীকে সন্তুষ্ট করবার জন্যে গোয়েঙ্কা জিজ্ঞেস করলেন, সে কিছু, খাবে কিনা। শিউলি না বললো। ভদ্রতার খাতিরে গোয়েঙ্কাজী এবার সোমনাথকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কী খাবেন বলুন?” সোমনাথ বলায় ভদ্রলোক যেন আশ্বস্ত হলেন।
শিউলির দেহটা একবার চেটে খেয়ে গোয়েঙ্কা বললেন, “বসুন না, মিস্টার ব্যানার্জি। শিউলির সঙ্গে দুজনে গল্প করি।” নটবরবাবুর উপদেশ সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে গেলো।
“খবরদার এই কাজটি করবেন না। যার জন্যে ভেট নিয়ে গেছেন, মেয়েমানুষটি সেই সময়ের জন্যে তার একার, এই কথাটি কখনও ভুলবেন না। মেয়েমানুষের ক্ষেত্রে যা কিছু, রস-রসিকতা পার্টি করুক। শাস্ত্রে বলেছে, পর দ্রব্যেষু লোষ্ট্রবৎ।”
ঘড়ির দিকে তাকালো সোমনাথ। অধৈর্য গোয়েঙ্কাজী এবার সঙ্গিনীকে বেড রুমে যেতে অনুরোধ করলেন।
নিজের কালো হাতব্যাগটা তুলে নিয়ে শিউলি পাশের ঘরে যেতেই সোমনাথ উঠে দাঁড়ালো। গোয়েঙ্কাজী খুশী মেজাজে সোমনাথের কাঁধে হাত দিলেন।
গোয়েঙ্কাজী অসংখ্য ধন্যবাদ জানালেন সোমনাথকে। বললেন, “অনেক কথা আছে। এখনই বাড়ি চলে যাবেন না যেন।”
সোমনাথ জানিয়ে দিলো সে একটু ঘুরে আসছে। গোয়েঙ্কা নির্লজ্জভাবে বললেন, “আপনি ঘণ্টা দেড়েক পরে ফিরে এসে নিচে লাউঞ্জে অপেক্ষা করবেন। আমি আপনাকে ফোনে ডেকে নেবো।”
৩১. দেড় ঘণ্টা
এই দেড় ঘণ্টা পাগলের মতো এসপ্ল্যানেডের পথে পথে ঘুরেছে সোমনাথ। ভিতরের পুরোনো সোমনাথ তাকে জ্বালাবার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সোমনাথ এক ঝটকায় তাঁকে দূর করে দিয়েছে।
অন্ধকারে অনেকক্ষণ ঘরে ঘরে এখন আশ্চর্য এক অনুভূতি আসছে। নিজেকে আর সিংহশিশু মনে হচ্ছে না। হঠাৎ ক্লান্ত এক গরিলার মতো মনে হচ্ছে সোমনাথের। বৃদ্ধ গরিলার ধীর পদক্ষেপে সোমনাথ এবার দি গ্রেট ইন্ডিয়ান হোটেলে ফিরে এলো। এবং নিরীহ এক গরিলার মতোই লাউঞ্জের নরম সীটে বসে পড়লো।
দেড় ঘণ্টা থেকে মাত্র দশ মিনিট সময় বেশি নিলেন গোয়েঙ্কা। এক ঘণ্টা চল্লিশ মিনিটের মাথায় ফোনে সোমনাথকে ডাকলেন। গোয়েঙ্কাজীর গলায় গভীর প্রশান্তি ঝরে পড়ছে। “হ্যালো মিস্টার ব্যানার্জি, উই হ্যাভ ফিনিশড্।”
ফিনিশড্। তার মানে তো সোমনাথ এখন ওপরে গোয়েঙ্কাজীর ঘরে চলে যেতে পারে। নষ্ট করবার মতো সময় এখন নয়। অথচ ঠিক এই গুরত্বপর্ণ মুহূর্তে ভিতরের পুরোনো সোমনাথ আবার নড়ে-চড়ে উঠবার চেষ্টা করলো। গরিলা সোমনাথকে সে জিজ্ঞেস করছে, ‘ফিনিশ কথাটার মানে কী?’ ওই সোমনাথ ফিসফিস করে বলছে, ‘ফিনিশড্, মানে তো শেষ হয়ে যাওয়া। গোয়েঙ্কাজী শেষ হয়ে যেতে পারেন, কিন্তু উই হ্যাভ ফিনিশড্, বলবার তিনি কে? ওঁর সঙ্গে তাহলে আর কে কে শেষ হলো? “আঃ! ওই সোমনাথের ওপর ভীষণ বিরক্ত হলো সোমনাথ। তোমাকে হাতে-পায়ে দড়ি বেঁধে পাগল সুকুমারের মতো রেখে দিয়েছি-তাও শান্তি দিচ্ছে না।
ওই সোমনাথটার স্পর্ধা কম নয়—আবার কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু ওসব বাজে বকুনি শোনবার সময় কোথায় সোমনাথের? মিস্টার গোয়েঙ্কার সঙ্গে বিজনেস সংক্রান্ত জরুরী কথাগুলো এখনই সেরে ফেলতে হবে। পড়োনি? স্ট্রাইক দ্য আয়রন হোয়েন ইট ইজ হট। গোয়েঙ্কা এখনও ফারনেস থেকে বেরনো লাল লোহার মতো নরম হয়ে আছে, দেরি করা চলবে না।
একটু দ্রুতবেগেই সোমনাথ যাচ্ছিল। কিন্তু লিফটের সামনে নটবর মিত্র তাকে পাকড়াও করলেন। বেশ খুশীর সঙ্গে বললেন, “কোথায় গিয়েছিলেন মশাই? আমি তো আপনাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান! গোয়েঙ্কার ঘরও বন্ধ—‘ডোন্ট ডিস্টাব’ বোর্ড ঝোলানো—আমি জ্বালাতন করতে সাহস পেলাম না।”
সোমনাথ হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, “গড়ের মাঠে ঘুরছিলাম।”
“বেশ মশাই! আপনি গড়ের মাঠে হাওয়া খাচ্ছেন। আমিতো ঊষা জৈনকে মিস্টার সুনীল ধরের ঘরে চালান করে দিয়ে দেড় ঘন্টা বার-এ বসে আছি। না বসে পারলাম না মশাই। মিস্টার ধর বিরাট গভরমেন্ট ইনজিনিয়ার। একেবারে কাঠ-বাঙাল। বিকেল থেকে মালে চুর হয়ে আছেন। ভদ্রলোক আমার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করলেন। নেশার ঘোরে বললেন, ‘মেয়েমানুষের গায়ে কখনও হাত দিইনি। আজ প্রথম ক্যারেকটার নষ্ট করবো। থ্যাংক ইউ ফর ইওর সিলেকশন!’ আমি ভাবলাম ঊষা জৈনকে পেয়ে খুব খুশী হয়েছেন। কিন্তু মিস্টার ধর যা শোনালেন, তাতে একটা শর্ট স্টোরি হয়ে গেলো। মিস্টার ধর বললেন, ‘গুড়ের নাগরীগুলো আমাদের এই সোনার দেশকে শুষে-শুষে সর্বনাশ করে দিয়েছে, টাকার দেমাক দেখিয়ে বেটারা ভূতের নৃত্য করছে। আমাদের অসহায় ইনোসেন্ট মেয়েগুলোকে পর্যন্ত আস্ত রাখছে। তাই আজ আমি প্রতিশোধ নেবো।’
“শুনে তো মশাই আমার হাসি যায় না! হাসি চাপা দেবার জন্যে বাধ্য হয়ে আমাকে একটা ড্রিঙ্ক নিয়ে বার-এ বসতে হলো।”
নটবর মিত্তির বললেন, “যান আপনি গোয়েঙ্কার কাছে। বিজনেস কথাবার্তা এই তালে সেরে ফেলুন। আমি পাঁচ মিনিট পরেই আপনাদের ঘরে গিয়ে মেয়েটাকে দেখে আসছি—গোয়েঙ্কাকে যদি সন্তুষ্ট করে থাকে তাহলে ফিউচারে আমার কাছ থেকে কাজকর্ম পাবে।”