হাসার মত অবস্থা তার না। শুভ্র গত রাতে বাসায় ফিরে নি, তার আগের রাতেও ফিরে নি। আজ খুব ভোরে ম্যানেজার ছালেহ এসেছিল। তাঁর সঙ্গে তিনি অনেক রাগারগি করেছেন। এই বদমাশটাকেও কিছু কঠিন গালাগালি দিতে পারলে হত। খানকি মাগি ধরনের গালি। এই গালি পুরুষদের জন্যে প্রযোজ্য নয়। মেয়েরা বিশেষ অবস্থায় খানকি মাগি হয়— পুরুষরা কী হয়?
এক পর্যায়ে তাঁর ইচ্ছা করছিল বিছানা থেকে নেমে লাথি মেরে ম্যানেজারকে চেয়ার শুদ্ধ মেঝেতে ফেলে দিতে। হারামজাদা আবার কুচুর কুচুর শব্দ করে তাঁর সামনেই পান খায়। কত বড় অভদ্ৰ! তিনি অবশ্যি মনের রাগ প্রকাশ করলেন না। শান্ত মুখেই বললেন, খবর কী?
ছালেহ বলল, কোন খবর জানতে চান?
জাহানারার মুখ তেতো হয়ে গেল। মনে মনে বললেন- শুয়রের বাচ্চা, তুমি জানি না আমি কোন খবর জানতে চাই। তোমার কাছে কি আমি সৌদি আরবের বাদশার খবর জানতে চাই? তোমার কাছে জানতে চাই- আমার ছেলের খবর।
তিনি দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগ সামলালেন। যদিও রাগ সামলানোটা খুবই কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে, কারণ হারামজাদা ম্যানেজারটা শুধু যে কুচুর কুচুর করে পান খাচ্ছে তাই না, পাও নাচাচ্ছে। পায়ে স্প্রীং ফিট করে এসেছে।
জাহানারা শান্ত গলায় বললেন, আসমানী মেয়েটার বিষয়ে কী করেছ? কী ব্যবস্থা নিয়েছ?
ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন। আটঘাট বেধে এগুতে হবে। আমার যা করার আমি করব।
শুভ্ৰ কাল রাতে ঘরে ফিরে নি।
ও আচ্ছা।
গত পরশু রাতেও ফিরে নি। আমারতো এখন মনে হয় শুভ্ৰ বাড়ি ঘর ছেড়ে দিয়ে বেশ্যা বাড়িতেই থাকবে।
আপনি দুশ্চিন্তা করবেন না।
আমি দুশ্চিন্তা করব নাতো দুশ্চিন্তাটা করবে। কে? তুমি করবে নাকি সৌদি আরবের বাদশা করবেন?
ছালেহ পানের পিক ফেলবার জন্যে বারান্দায় চলে গেল, আবার ফিরে এসে বসে পা নাচাতে লাগল। জাহানারা লক্ষ করলেন আগে সে একটা পা নাড়াচ্ছিল, এখন দুটা পা-ই নাড়াচ্ছে।
শুভ্ৰ এখন কী করছে তুমি জান?
সঠিক জানি না।
তার কাজকর্ম সম্পর্কে কিছুই জানি না?
বাড়ির মেয়েগুলিকে পনেরো হাজার করে টাকা দিয়ে নিজের নিজের বাড়ি পাঠানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। লাভ হচ্ছে না। কেউ যেতে চাচ্ছে না। এরা টাকাটা নিবে কিন্তু যেটা করবে সেটা হল – এক বাড়ি ছেড়ে অন্য বাড়িতে গিয়ে উঠবে। মাঝখান থেকে সবার নেট লাভ পনেরো হাজার টাকা।
টাকা দেয়া হয়ে গেছে?
শুনেছি দেয়া শুরু হয়েছে। সঠিক জানি না।
তুমি দেখি কোনো কিছুই সঠিক জান না। সবই বেঠিক জান। আমি বিছানায় শুয়ে থেকে যা জানি- তুমি শহরে বন্দরে ঘোরাঘুরি করে তার একশ ভাগের এক ভাগ জান না। পনেরো হাজার করে টাকা দিলে– সব কটা মেয়ের জন্যে কত টাকা লাগবে?
অনেক লাগবে।
সেই অনেকটা কত হিসাব করে বল। নাকি যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ ভুলে গেছ? আর শোন— পা নাচানোটা একটু বন্ধ করা। আমার সামনে পা না নাচিয়ে বাড়িতে গিয়ে নাচাও।
ছালেহ পা নাচানো বন্ধ করলেন। জাহানারা কঠিন গলায় বললেন, এত এত টাকা যে শুভ্ৰ দিচ্ছে তার কি এত টাকা আছে? তার অন্য ব্যবসার অবস্থা কী?
অবস্থা ভাল না।
ভাল না কেন?
এখনকার ব্যবসা হল বেশির ভাগই দু নম্বরি। উনার পক্ষে দু নম্বরি কাজ সম্ভব না।
উজবুকের মত কথা বলব না। তার পক্ষে বেশ্যাবাড়িতে পড়ে থাকা সম্ভব। আর দুনম্বরি ব্যবসা করা সম্ভব না। এটা কেমন কথা?
ছালেহ উদ্দিন চুপ করে রইলেন। জাহানারা বললেন, আমি শুনতে পাচ্ছি। সে এই বাড়ি বিক্রি করার চেষ্টা করছে। এটা কি সত্যি?
জ্বি, সত্যি। এই বাড়ি আর অফিস সবই তিনি বিক্রি করতে চান। দালাল ধরা হয়েছে। দালালেরা খোঁজখবর করছে।
বিক্রি করে সে খাবে কী? থাকবে কোথায়? সে কি তার মাকে নিয়ে ভিক্ষা করতে বের হবে? কমলাপুর রেল ষ্টেশনে মা-বেটায় ভিক্ষা করব? আর তোমরা ভিক্ষা দিবো; তোমার সঙ্গে ছিঁড়া ময়লা এক টাকার নোট আছে? থাকলে দিয়ে যাও— তোমাকে দিয়েই ভিক্ষা শুরু করি।
ছালেহ বিব্রত গলায় বললেন, আপনার শরীরটা খারাপ। আপনি শুয়ে থাকুন।
তুমি চলে যাচ্ছ?
জ্বি। আমি রোজই একবার এসে খোঁজ নিয়ে যাব।
তোমাকে রোজ আসতে হবে না। তোমাকে যেদিন দেখি সেদিন আমার দিনটা খারাপ যায়। তোমাকে যখন ডাকব তখন-ই আসবে। নিজ থেকে আসবে না।
জ্বি আচ্ছা।
ম্যানেজার চলে যাবার পর থেকে জাহানারা বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়েছিলেন। কারো সঙ্গে কোনো কথা বলেন নি। টেলিফোন বেজেছে, টেলিফোন ধরেন নি। টেলিফোন হয়ত শুভ্র করেছে, তারপরও ধরেন নি। ধরতে ইচ্ছা করে নি।
কান্নার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। কোনো এক মেয়ে চাপা গলায় ফুপিয়ে কাঁদছে। এমনভাবে কাঁদছে যেন কেউ তার কান্না শুনতে না পায়। বিনু কি কাঁদছে! বিনু কেন কাঁদবে! কাদার মত এমন কী ঘটনা ঘটিল! ভাই নিতে এসেছে। এতো আনন্দের কথা। কাঁদবে কেন? জাহানারা রাণীর মাকে ডাকলেন। রাণীর মা কয়েকদিন হল এ বাড়িতে কাজ করছে। তার কাজকর্ম ভাল। চালচলন ভাল না। কেমন করে যেন শরীর দুলিয়ে হাঁটে। যে সব বাড়িতে যুবক পুরুষ থাকে সে সব বাড়িতে রাণীর মা ধরনের কাজের মেয়ে রাখতে নেই। মেয়েটাকে দুএকদিনের মধ্যেই বিদায় করে দিতে হবে। সবচে ভাল হয়। আজই বিদায় করে দিলে।
আম্মা ডাকছেন গো?
হ্যাঁ ডেকেছি। আহাদী করে কথা বলবে না। ডাকছেন গো আবার কী? যখন ডাকি— সামনে এসে দাঁড়াবে। গো বলে টান দিতে হবে না। কাঁদছে কে?