এই কথাগুলি বলার জন্যেই তোমাকে ডেকেছিলাম।
এখন চলে যাব?
হ্যাঁ যাও।
ম্যানেজার উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, আপনি ছোট সাহেবের এই মেয়ের কাছে যাওয়া নিয়ে কোনো রকম দুঃশ্চিস্তা করবেন না। এটা আমার ব্যাপার। আপনি কারো সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনাও করবেন না। ছোট সাহেব আমাকে বিদায় করে দিলেও আমি আছি। বড় সাহেব কোরান মজিদ হাতে দিয়ে আমাকে ওয়াদা করিয়ে ছিলেন- আমি যেন শুভ্ৰকে ছেড়ে না যাই। আমি ওয়াদা রক্ষা করব। আপনি বললেও করব না বললেও করব।
আচ্ছা। তুমি চ খেয়েছ?
আমি চা খাই না।
তোমাদের অফিস কেমন চলছে?
জানি না কেমন চলছে, আমি অফিসে যাই না।
শুভ্ৰ যায় অফিসে?
খবর পেয়েছি উনি নিয়মিত অফিসে যান।
আচ্ছা মামুন তুমি এখন যাও। তোমার সঙ্গে কথা বলে মনে শান্তি পেয়েছি। তোমার নাম ঠিক মত বলেছিতো। মামুন না তোমার নাম?
ম্যানেজার কোনো উত্তর দিল না। জাহানারা চোখ বন্ধ করে ফেললেন। তাঁর ঘুম পাচ্ছে। শান্তির ঘুম।
ম্যানেজার চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই জাহানারা বিনুকে ডেকে পাঠালেন। হালকা গলায় বললেন, বিনু কপালে হাত দিয়ে দেখতো জ্বর কি-না।
বিনু কপালে হাত দিয়ে বলল, সামান্য গা গরম।
জাহানারা বললেন, আমি ঠিক করেছি আজ বৃষ্টিতে ভিজব। ঝুম বৃষ্টি নামলে তুমি আমাকে ছাদে নিয়ে যাবে।
বিনু হাঁ-সূচক মাথা নাড়ল। জাহানারা বললেন, আমি যখন ছোট ছিলাম, খুব বৃষ্টিতে ভিজতাম। আমার বাবার বৃষ্টি খুব পছন্দের জিনিস ছিল। তোমার বৃষ্টিতে ভিজতে কেমন লাগে বিনু?
বিনু তাকিয়ে আছে, জবাব দিচ্ছে না। জাহানারা বললেন, আজ বৃষ্টিটা নামুক তোমাকে নিয়েই ভিজব। ছাদে দুটা প্লাষ্টিকের চেয়ার পাঠাতে বল। চেয়ারে বসে বসে ভিজব।
আমার বাবা যে নামাজের পার্টিতে মারা গিয়েছিলেন। সেই গল্প কি তোমাকে বলেছি?
না।
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে গল্পটা বলব।
আচ্ছা।
বিনু তোমার বাবা কি খুব নামাজী?
জ্বি।
তুমি এখানে পড়ে আছ এতদিন হয়ে গেছে। উনিতো তোমাকে দেখতেও আসছেন না।
উনি অসুস্থ। বিছানা থেকে নামতে পারেন না।
অসুখটা কী?
পা পিছলে কোমরে ব্যথা পেয়েছিলেন।
চিকিৎসা হচ্ছে না?
করিবাজি চিকিৎসা হচ্ছে। কোমরে তেলমালিশ করা হচ্ছে।
কবিরাজি চিকিৎসায় কাজ হবে না। ঢাকায় এনে তাঁর চিকিৎসা করতে হবে। তাঁকে ঢাকায় আনার ব্যবস্থা কর।
জ্বি আচ্ছা।
তিনি ঢাকায় এলে আমি তাঁর কাছে একটা প্ৰস্তাব দেব। শুভ্ৰর বিয়ের প্রস্তাব। আমি তাকে বলব— ভাই সাহেব আপনার বড় মেয়ের সঙ্গে আমি আমার ছেলের বিবাহ দিতে চাই। আচ্ছা বিনু, উনি কি রাজি হবেন? আমার ছেলের মত ছেলে কি হয়? তুমি বল— হয়?
বিনু ক্ষীণ গলায় বলল, চাচি বৃষ্টি নেমেছে। ভিজবেন না?
জাহানারা বললেন, ম্যানেজার ছাগলটার নাম যেন কী?
ছালেহ উদ্দিন।
এর নামটা মনে থাকছে না কেন? একটা কাগজে তার নাম লিখে আমার ঘরে টানায়ে দাও।
জ্বি আচ্ছা।
বাপ-মা কেমন নাম রাখে দেখ। লক্ষবার শুনলেও মনে থাকে না। আর দেখ শুভ্রর নাম- একবার শুনলে আর কোনোদিনই ভুলবে না।
ছোট সাব কোনদিকে যাব
ড্রাইভার বলল, ছোট সাব কোনদিকে যাব?
শুভ্র বলল, ফার ফ্রম দ্য মেডিং ক্রাউন্ড।
ড্রাইভার এমন ভঙ্গিতে গাড়ি স্টার্ট দিল যেন ফার ফ্রম দ্য মেডিং ক্রাউন্ড জায়গাটা সে চেনে। আগেও অনেকবার গিয়েছে।
আসমানী খুব হাসছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে খুব মজা পাচ্ছে। শুভ্র বলল, আমার অবশ্যি রিকশা করে ঘুরতে ইচ্ছা করছে। গাড়িতে উঠলেই আমার দমবন্ধ লাগে। আসমানী তোমার লাগে না? মনে হয় না— লোহার একটা খাঁচায় তোমাকে আটকে ফেলা হয়েছে?
উত্তর না দিয়ে আসমানী পান মুখে দিল। সে কৌটা ভৰ্তি করে পান নিয়ে এসেছে। শুভ্ৰর দিকে পানের কোটা এগিয়ে দিয়ে বলল, পান খান।
শুভ্ৰ বলল, আমি তো পান খাই না। আচ্ছা দাও খেয়ে দেখি। জর্দা নেই তো?
ওমা, জর্দা ছাড়া পান হয়! জর্দা আছে।
আচ্ছা ঠিক আছে, জর্দা দিয়েই খেয়ে দেখি।
শুভ্ৰ পান মুখে দিল। আসমানী শাড়ির আঁচল মাথায় তুলতে তুলতে বলল, বলুন দেখি কোন জিনিস একবার হারালে পাওয়া যায়। কিন্তু দ্বিতীয়বার হারালে পাওয়া যায় না।
এটা কি কোনো ধাঁধা?
হুঁ খুব সহজ ধাঁধা। একবার হারালে পাওয়া যায়। দ্বিতীয়বার হারালে আর পাওয়া যায় না।
সম্মান।
সম্মান যতবার হারাবেন ততবারই ফিরত পাবেন। এটা সম্মান না।
আমি পারছি না।
দাঁত। দাত প্ৰথমবার হারালে পাওয়া যায়। দাঁত উঠে। দ্বিতীয়বার হারালে আর পাওয়া যায় না।
শুভ্ৰ বিস্মিত হয়ে বলল, আসলেই তো তাই! আচ্ছা দেখি আরেকটা ধাঁধা ধর তো।
আসমানী বলল, আপনি চোখ বন্ধ করুন। এই ধাঁধাটা চোখ বন্ধ করে জবাব দিতে হয়।
শুভ্ৰ চোখ বন্ধ করল। আসমানী বলল, এখন বলুন—আমি কী রঙের শাড়ি পরেছি? আমার ধারণ আপনি বলতে পারবেন না।
শুভ্ৰ থিতামত খেয়ে গেল। আসলেই সে বলতে পারছে না। এতক্ষণ ধরে যে মেয়েটির সঙ্গে সে আছে সে কী রঙের শাড়ি পরেছে এটা সে কেন বলতে পারবে না?
কী আশ্চর্য! এত দেরি করছেন কেন? বলুন।
চকলেট রঙের।
কী রঙের বল্লেন?
চকলেট রঙের। হয়েছে?
আসমানী কিছু বলছে না। তার চাপা হাসি শোনা যাচ্ছে। জবাবটা যে সঠিক হয় নি। শুভ্র তা বুঝতে পারছে। চকলেট রঙটা হঠাৎ তার মাথায় এসেছে বলেই সে বলেছে। না ভুল হল, চকলেট রঙের ব্যাপারটা হঠাৎ তার মাথায় আসে নি। চকলেট রঙ মীরার খুব পছন্দ। মীরা যখন তখন বলে উঠবে, চকলেট আমি খেতে পছন্দ করি। চকলেট রঙের শাড়ি পরতে পছন্দ করি এবং কোনো একদিন আমি চকলেটের দোকান দেব। যেখানে পৃথিবীর সব দেশের চকলেট পাওয়া যাবে।