রসিকতা করছেন?
নারে ভাই! আমি রসিক লোক না। রসিকতা করতে পারি না। এই, তোমরা এর কাপড় খুলে ফেল। ভালো করে খাটের সঙ্গে বাঁধ। আপনার কফি খাওয়া শেষ হয়েছে তো! না-কি আরেক কাপ খাবেন?
মুকুল ভাইয়ের চোখে-মুখে এই প্রথম ভয়ের ছায়া দেখা গেল। তবে তিনি এখনো বিশ্বাস করছেন না যে, এরকম কিছু করা হবে। তিনি কফির কাপে আরেকবার চুমুক দিলেন। জহির ভাই বললেন, আমার তেমন তাড়া নেই। আপনি আরাম করে কফি খান। আপনি যখন ইয়েস বলবেন তখনি ডাক্তার সাহেব কাজ শুরু করবেন, তার আগে না।
মুকুল ভাই চাপা গলায় বললেন, জহির না আপনার নাম?
জি।
আপনার সঙ্গে আড়ালে দুটা কথা বলতে পারি?
জি-না। আমি আড়াল-কথা শোনার লোক না।
জহির ভাই দরজার পাশে বসা লোকটির দিকে তাকালেন। তার পরপরই অতি দ্রুত কিছু ঘটনা ঘটল। আমি দেখলাম মুকুল ভাই খাটের সঙ্গে বাঁধা। তার প্যান্ট এবং আন্ডারওয়্যার টেনে নামিয়ে ফেলা হয়েছে। ডাক্তার সাহেব ছোট একটা কালো বক্স খুলে সিরিঞ্জ বের করছেন। মনে হয় এই সিরিঞ্জ দিয়েই লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দেয়া হবে।
জহির ভাই বললেন, মুকুল সাহেব, যে ক্যামেরাম্যান আপনার হয়ে ভিডিও ছবিগুলি নানান সময়ে তুলেছে, তার নাম লিয়াকত না?
মুকুল ভাই বললেন, আমি জানি না।
জহির ভাই বললেন, আমাদের হাতে সময় কম, উল্টা-পাল্টা জবাব না দিলে ভালো হয়। শেষবারের মতো জিজ্ঞেস করছি, তার নাম লিয়াকত না?
জি লিয়াকত। ভাই সাহেব, আমার একটা কথা শুনুন। প্লিজ! দুটা মিনিট শুধু আপনি আর আমি…
জহির ভাই বললেন, এই বদটার মুখে একটা স্পঞ্জের স্যান্ডেল দিয়ে দাও। তাহলে চিৎকার করতে পারবে না। দাঁতে দাঁত কামড়ে ধরার সময় জিহ্বারও ক্ষতি হবে না।
মুহূর্তের মধ্যে স্পঞ্জের স্যান্ডেলের গোড়ালির অংশ মুকুল ভাইয়ের মুখে ঢুকিয়ে দেয়া হলো। জহির ভাইয়ের ইশারায় আমি ফুপুকে নিয়ে বাইরে চলে এলাম। ফুপু জম্বির মতো হয়ে গেছেন। হাঁটতে পারছেন না, কথা বলতে পারছেন না। তাঁর শরীর কাঁপছে, মুখ দিয়ে লালা পড়ছে।
ফুপুকে দি ইমেজ-এর শো-রুমে এনে ফ্যানের নিচে বসিয়ে দিলাম। তার ভাবভঙ্গি ভালো না। তিনি যে-কোনো মুহূর্তে অজ্ঞান হয়ে যাবেন— এটা পরিষ্কার বুঝতে পারছি। তিনি বিড়বিড় করে বললেন, বাসায় যাব। বাসায় যাব। ও বাবলু, বাসায় যাব। শিয়ালমুত্রা ফুপুর অবস্থা দেখে মজা পাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। তিনি ফুপুর কাঁধে হাত রেখে বললেন, ঠাণ্ডা কিছু খাবেন?
আমাদের বেশিক্ষণ বসতে হলো না। ডাক্তার সাহেব এসে জানালেন— অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে। রোগী ভালো আছে।
আওয়ামী লীগ হরতাল ডেকেছে
আওয়ামী লীগ হরতাল ডেকেছে। রাস্তাঘাট ফাঁকা। তবে রিকশা চলছে, কিছু প্রাইভেট কার চলছে। এখনকার হরতাল আগের মতো কঠিন হচ্ছে না। কেমন ঢিলেঢালা ভাব। রাস্তায় পুলিশও কম।
আমি বাবার সঙ্গে হাঁটছি। ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসেছি। হরতালের দিনগুলিতেই মূল রাস্তায় হাঁটা যায়। নির্বিঘ্নে যে হাঁটা যায় তা-না। রাস্তায় ক্রিকেট খেলা হয়। যে-কোনো সময় বল এসে গায়ে লাগতে পারে। কিছু ক্রিকেট খেলা ভালো জমে যায়। চারপাশে উৎসাহী দর্শক জুটে যায়। আমরা এরকম একটা জম্পেশ ক্রিকেট খেলা পার হলাম। বাবা বললেন, বাবলু, তুই ক্রিকেট খেলিস?
আমি বললাম, না।
কোনো খেলাধুলাই করিস না?
এটা ঠিক না। খেলাধুলা করতে হবে। খেলাধুলার অনেক উপকারিতা oni
বাবাকে বিপর্যস্ত লাগছে। তিনি কুঁজো হয়ে হাঁটছেন। মুখভর্তি দাড়ি-গোঁফ। মাথার চুল আউলা-ঝাউলা। কিছুদিন হলো তিনি চশমা পরছেন। চশমায় এখনো অভ্যস্ত হন নি। কিছুক্ষণ পর পর তিনি দাঁড়িয়ে পড়েন। চশমা খুলে নিয়ে পাঞ্জাবির খুঁট দিয়ে অনেকক্ষণ ঘষাঘষি করেন। এই সময় তিনি চারদিকে অসহায়ের মতো তাকান।
আমরা যাচ্ছি হন্টন পীরের খোঁজে। বাবা হন্টন পীরের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিবেন। তিনি নিজেও পীর সাহেবের কাছ থেকে দোয়া নিবেন। তাঁর মামলা সতেরো তারিখ কোর্টে উঠছে।
বাবলু!
জি।
খেলাধুলার কথা মনে রাখবি। ইনডোর গেমস না, আউটডোর গেমস। ফুটবল, ভলিবল, ক্রিকেট, এইসব।
জি আচ্ছা।
মূল কথা একসারসাইজ। হাঁটাহাঁটিও একটা একসারসাইজ। এই যে আমরা হাঁটছি, আমাদের একসারসাইজ হচ্ছে। ব্লাড সারকুলেশন বাড়ছে। ফ্যাট কাটা যাচ্ছে। শরীরের জন্যে ফ্যাট অতি ভয়াবহ। হাঁটা মানে ফ্যাটের দফারফা।
আমি বললাম, তোমার হণ্টন পীর সাহেবের শরীরে নিশ্চয়ই কোনো ফ্যাট নেই। তিনি তো হাঁটার উপরই আছেন।
সাধারণ মানুষের সঙ্গে উনাদের মিলাবি না। উনারা হলেন মজনুন।
মজনুন কী?
মজনুন হলো দিওয়ানা। আল্লাহর প্রেমে দেওয়ানা। এরা হাঁটলেও যা, এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলেও তা। চাঁদপুরের এক পীর সাহেবের সন্ধান পেয়েছি, তিনি এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। তাঁর নাম বগা পীর। বক যেমন এক পায়ে দাঁড়ায় উনিও তাই। সূর্য ওঠার আগে দাঁড়ান। সূর্য ডোবার পর পা নামিয়ে আস্তানায় চলে আসেন। ঠিক করেছি তাকে একবার দেখতে যাব। এই জাতীয় মহাপুরুষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবার মধ্যেও পুণ্য আছে। তুইও চল। বাপ বেটা একসঙ্গে দেখে আসি। যাবি?
হুঁ।
গুড বয়। মামলায় যদি খালাস পেয়ে যাই তাহলে যেদিন খালাস পাব সেদিনই রওনা দেব। লঞ্চে যেতে দুই আড়াই ঘণ্টা লাগে, কোনো ব্যাপারই না! ভালো কথা, বাসায় মামলা নিয়ে তোর মা কিছু বলে?