মুকুল ভাই, আপনার-আমার এই ভিডিওটা কে তুলেছে? আপনি কি বের করতে পেরেছেন? মনে হয় না আপনার সেই চেষ্টা আছে। কারণ ভিডিওতে আপনাকে চেনা যায় না। আপনি বেশির ভাগ সময় আড়ালে ছিলেন, যে কয়বার ক্যামেরার সামনে এসেছেন আপনার মুখ দেখা যায় নি। আর আমি ছিলাম পুরোপুরি ক্যামেরার সামনে। আমাকে সবাই চিনবে। আমার সঙ্গের পুরুষ মানুষটাকে কেউ চিনবে না।
মুকুল ভাই, আমি কী করব আপনি বলে দিন। প্লিজ প্লিজ প্লিজ! আরেকটা কথা, প্রজাপতির মন নাটকে আপনি আমাকে একটা রোল দিবেন বলেছিলেন। নায়িকার সৎবোন আমার করার কথা ছিল। অথচ সেই রোল এখন ইতি করছে। আমার কপাল এত খারাপ কেন মুকুল ভাই? আমার আরো অনেক আগেই মরে যাওয়া উচিত ছিল। কেন এখনো বেঁচে আছি? হে দয়াময়, তুমি আমার মৃত্যু দাও। মৃত্যু দাও। মৃত্যু দাও।
ইতি–
আপনার কাছের এক অভিমানী
নীলা
চিঠির শেষে অনেকগুলি ক্রস চিহ্ন। সাংকেতিক কোনো ভাষা। কয়েকটা আবার বৃত্ত দিয়ে ঢাকা।
সময় কাটানোর জন্যে আমি চলে গেলাম দি ইমেজ-এ। রাত করে বার। ফিরতে হবে। ফুপুর কাছে প্রমাণ করতে হবে আমি অনেক রাত পর্যন্ত অপেক্ষ। করে মুকুল ভাইয়ের হাতে চিঠি দিয়েছি। লুকিয়ে থাকার জন্যে দি ইমেজ ভালো জায়গা। জহির ভাই জাহাজ ভাঙা ফার্নিচারের দোকান থেকে লোহার একটা বাথটাব কিনেছেন। সেটা এখনো দেখা হয় নি। নিশ্চয়ই ভালো কিছু হবে।
জহির ভাই জঞ্জাল কিনে বাড়ি ভর্তি করার মানুষ না।
জহির ভাই বাথটাবেই ছিলেন। আধশোয়া হয়ে বই পড়ছেন। বইটার নাম— The Spiral Staircase। কভারে একটা মেয়ের ছবি। মেয়েটা পার্কের বেঞ্চে বসে বই পড়ছে। ইদানীং জহির ভাইয়ের বই পড়া রোগ হয়েছে। যখনই তার ঘরে যাই দেখি তিনি বই পড়ছেন। তাঁর শোবার ঘর ভর্তি করে ফেলেছেন বই দিয়ে।
বাথটাবটা দেখে তেমন ভালো কিছু মনে হলো না। বাথটাব হয় লম্বা, এটা গোল ধরনের। নিচে চাকা আছে। তিনটা চাকা। চাকার কারণে এটাকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঠেলে নেয়া যায়। এখন বাথটাবটা জহির ভাইয়ের শোবার ঘরে। বিছানার সঙ্গে লাগানো।
জহির ভাই আমাকে দেখে বললেন, খবর কী রে?
আমি বললাম, খবর নেই।
আজ দুপুর থেকে বাথটাবে বসা। মাঝখানে দুবার উঠে শুধু বাথরুমে গিয়েছি।
বাথটাবে কতক্ষণ থাকবে?
বুঝতে পারছি না। সারারাত থাকতে পারি, আবার পাঁচ মিনিটের মধ্যে উঠে যেতে পারি।
জহির ভাই হাতের বই বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিয়ে হঠাৎ গম্ভীর গলায় বললেন, তোর ফুপুর খবর কী বল তো? সে কি স্বাভাবিক আছে? নাটক করে বেড়াচ্ছে?
মোটামুটি স্বাভাবিক।
একটা সিগারেট ধরিয়ে আমার হাতে দে। বাথটাবে শুয়ে থাকলে একটাই সমস্যা, ভেজা হাতে সিগারেট ধরানো যায় না।
আমি সিগারেট ধরিয়ে দিলাম। জহির ভাই সিগারেট টানতে টানতে বললেন, তোর ফুপু বাংলাদেশের সবচে বোকা মহিলা। ঠিক বলেছি কি-না বল!
ঠিক বলেছ।
তাকে তুই একটা কথা বলতে পারবি?
পারব।
তাকে বলবি যে, তার ব্যাপারটা আমি দেখছি। এর বেশি কিছু বলতে হবে। এইটুকু বললেই বুঝবে।
আচ্ছা বলব। আজই বলব।
তোর বাবার খবর কী?
জানি না। অনেক দিন দেখা হয় না।
উনার মামলা কোর্টে কবে উঠবে?
জানি না।
খোঁজ নিয়ে আমাকে জানাবি। ঐদিন কোর্টে থাকব।
আচ্ছা।
আর আমার মার খবর কী?
ভালোই আছে।
ভূত-প্রেত এখনো দেখছেন?
হুঁ। একটা ভূত না-কি তাঁর বুড়া আঙুলে কামড় দিয়ে রক্ত বের করে দিয়েছে!
জহির ভাই হাসতে শুরু করেছেন। নীলা ফুপুটাইপ হাসা। হেসেই যাচ্ছেন। হাসি থামছে না।
হাসির শব্দে আকৃষ্ট হয়েই বোধহয় শিয়ালমুত্রা চলে এলেন (তিনি এখন দি ইমেজেই থাকেন)। শিয়ালমুত্রার গায়ে ঘাগরা জাতীয় একটা ঝলমলে পোশাক। তার চেহারায় কিছু পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তনের কারণ মাথার চুল। চুল রঙ করিয়ে সোনালি করা হয়েছে। চোখের পাতাতেও সোনালি রঙ দিয়েছেন। তিনি মুখে যে রঙ-চঙ মেখেছেন তাতে বোধহয় কোনো গণ্ডগোল হয়েছে। মুখের দাঁত আরো ভেসে উঠেছে। এমন চেহারা মুকুল ভাইয়ের চোখে পড়লে কাজ হতো। মুকুল ভাই তাঁকে অবশ্যই রোল দিতেন— নায়িকার ভ্যাম্প মা টাইপ রোল। ভূতের নাটক হলে পেত্নীর রোল।
শিয়ালমুত্রা জহির ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে খুকিদের মতো গলায় বললেন, তাহলে কিন্তু আমি একটা কাণ্ড ঘটাব। ঘড়ি ধরে দশ মিনিট। এই এখন থেকে শুরু হলো। আমি ঠিক দশ মিনিট পরে টাওয়েল-হাতে আসব।
জহির ভাই বিছানায় রাখা বই আবার টেনে নিলেন। তিনি দশ মিনিটের মধ্যে উঠবেন কি উঠবেন না এটা বোঝা যাচ্ছে না।
শিয়ালমুত্রা এবার আমার দিকে তাকিয়ে মধুর গলায় বললেন, খোকা, তুমি একটু আমার সঙ্গে এসো তো! তোমার সঙ্গে কথা আছে। তোমার নাম যেন কী?
বাবলু।
বাবলু এসো।
আমি বাধ্য ছেলের মতো তার পেছনে পেছনে গেলাম। তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন ভিডিও কাউন্টারে। ভিডিও কাউন্টারে লোকজন নেই। টিভিতে কী একটা হিন্দি ছবি চলছে। শিয়ালমুত্রা রিমোট কন্ট্রোলে ছবি বন্ধ করলেন। তার গলার স্বর থেকে কোমল ভাব দূর হয়ে গেল। তিনি খসখসে গলায় বললেন, তোমার ফুপু যে একজনের সঙ্গে সেক্স করেছে আর সেই ছবি সিডিতে এসেছে, এইটা জানো?
আমি বললাম, জানি।
বাহ্বা। বিরাট লায়েক ছেলে তুমি। দেখেছ সেই ছবি?
না।
দেখ নাই কেন? আত্মীয়স্বজনের সেক্স দেখতে ভালো লাগে না? অন্যেরটা দেখতে ভালো লাগে? সবসময় এইখানে ঘোরাঘুরি করো কেন? যাও, বাড়িতে যাও। আর যদি কখনো এখানে তোমাকে দেখি থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব। যাচ্ছ না যে, ব্যাপার কী?