বড়খালা বললেন, দুটা মিনিট পরে কথা বল তো! ছবি এখনই শেষ হয়ে যাবে। তুইও দেখ। শেষটা এরা ইন্টারেস্টিং বানিয়েছে।
আমি চোখ বড় বড় করে সবুজ শাড়িওয়ালির অভিনয় দেখে শেষ করলাম। বড়খালা হাই তুলতে তুলতে বললেন, বাবলু, তুই একজন এসির মিস্ত্রি নিয়ে আসিস। এসিতে কোনো গণ্ডগোল আছে, ঘর আগের মতো ঠাণ্ডা হচ্ছে না। মনে হয় গ্যাস চলে গেছে।
আচ্ছা নিয়ে আসব।
তুই কি আম চিনিস? খিরসাপাতি আম কিনে আনতে পারবি? এক কেজি খিরসাপাতি আম আনিস তো। আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যাস। আম কিনে আমার হাতে দিবি।
তোমার আঙুলে কী হয়েছে?
খালা বিরক্তচোখে নিজের বাঁ হাতের আঙুল মেলে ধরলেন। দুটা আঙুল ব্যান্ডেজ করা। গজ-তুলা দিয়ে ব্যান্ডেজ। একটা আঙুল থেকে রক্ত চুইয়ে ব্যান্ডেজের বাইরে চলে এসেছে। আঘাত নিশ্চয়ই গুরুতর।
আঙুলে ব্যথা পেয়েছ কীভাবে?
ব্যথা পাই নি। কামড় দিয়েছে।
কে কামড় দিয়েছে?
একটা দুষ্টু ভূতের বাচ্চা আমার খাটের নিচে থাকে, বলেছি না! সেটাকে ঝাড় দিয়ে মারতে গেছি, ফট করে সে আঙুল কামড়ে ধরেছে। এমন বদ!
ভূতের বাচ্চাটাকে বিদায় করতে পেরেছ, না-কি এখনো সে খাটের নিচে ঘাপটি মেরে বসে আছে?
আমি জানি না। তুই উঁকি দিয়ে দেখ। তবে আমি ঠিক করেছি, ঐটাকে আর ঘটাব না। সে তার মতো থাকুক। বুড়া বয়সে আর কামড় খাব না। কামড় দিয়ে যখন রক্তারক্তি করে ফেলল তখন খোকন ডাক্তার নিয়ে এলো। চেংড়া ডাক্তার। পড়াশোনা করে পাস করেছে, না নকল করে পাস করেছে কে জানে! ডাক্তার বলল, কিসে কামড় দিয়েছে? আমি বললাম, ভূতে কামড় দিয়েছে। ডাক্তার এমনভাবে তাকাল যেন আমার মাথা খারাপ। তোর কি ধারণা আমার মাথা খারাপ?
আমি বললাম, না।
ভূতগুলা এত জায়গা থাকতে আমার খাটের নিচে বসে থাকে কেন বল দেখি?
তুমি দিনরাত এসি চালিয়ে রাখ। ঘর থাকে ঠাণ্ডা। ভূতরা মনে হয় ঠাণ্ডা পছন্দ করে।
হতে পারে। তোর বুদ্ধি খারাপ না। আমি এই লাইনে চিন্তাই করি নি। আরেকটা ছবি চালা তো। টেবিলের উপরে আছে। উপর থেকে তিন নম্বর সিডিটা দে— ম্যায় হুঁ না। শাহরুখ খানের ছবি। নায়িকা সুস্মিতা সেন। চিনিস না সুস্মিতাকে?
না।
মিস ইন্ডিয়া হয়েছিল। পরে মিস ইউনিভার্স হয়েছে। ফিগার খুব সুন্দর। তবে তাকে নিয়ে নানান গুজব আছে। আয় আমার সঙ্গে ছবি দেখ।
ঘুম পাচ্ছে খালা। ঘুমাব।
যা ঘুমা।
মন বিক্ষিপ্ত থাকলে ঘুম ভালো হয় না, এমন কথা প্রচলিত আছে। আমার বেলায় কথাটা একেবারেই খাটে না। আমার ঘুম তখন অনেক ভালো হয়। এক ঘুমে রাত পার করে দিলাম। ছোট ছোট কয়েকটা স্বপ্ন দেখলাম। এর মধ্যে একটা স্বপ্নে জহির ভাই স্ট্রেচারে শুয়ে আছেন। বড়খালা সেই স্ট্রেচার ঠেলছেন। জহির ভাই বলছেন, আস্তে ঠেল মা। আস্তে। আমার শরীরে বিরাট জখম। জহির ভাই যে কথাগুলি বলছেন সেই কথাগুলি আবার একবার নার্স রিপিট করছে। জহির ভাই বললেন, আমার শরীরে বিরাট জখম। নার্স বলল, আমার শরীরে বিরাট জখম। জহির ভাই বললেন, মা, আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? নার্স বলল, মা, আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? এই কথায় বড়খালা রেগে গিয়ে বললেন, তুমি আমাকে মা ডাকছ কেন? তুমি কে? খালার কথা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে নার্সটা একটা ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে হয়ে গেল। স্বপ্নে এই বিষয়টা মোটেই অবাস্তব মনে হলো না। মনে হলো এটাই স্বাভাবিক। বাচ্চা মেয়েটা বলল, আমার নাম যূথী। আমার জ্বর। কপালে হাত দিয়ে দেখ। এই বলে সে বড়খালার দিকে মাথা এগিয়ে দিল। স্বপ্ন এখানেই শেষ।
দ্বিতীয় আলো পত্রিকা
দ্বিতীয় আলো পত্রিকায় ‘দি ইমেজ’ হত্যাকাণ্ডের বিবরণ প্রথম পৃষ্ঠায় লিড নিউজ হয়েছে। সংবাদের শিরোনাম রাজধানীর কেন্দ্রে আবারো নৃশংস খুন। একজন নিজস্ব সংবাদদাতা ঘটনার এমন নিখুঁত বর্ণনা দিয়েছেন যা থেকে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি নিজে উপস্থিত ছিলেন। হত্যাকারীর সঙ্গে হত্যার মোটিভ নিয়ে কথাবার্তাও হয়েছে।
প্রতিবেদকের বক্তব্য থেকে জানা গেল, জহির ভাই বেঁচে আছেন। তাঁর ডান পা এবং ডান হাতে গুলি লেগেছে, তবে ডাক্তাররা তাকে শঙ্কামুক্ত ঘোষণা করেছেন। এবং কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হবে। পুলিশের ধারণা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে দি ইমেজের ম্যানেজার মোহম্মদ নাসিম। হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন আগেই দি ইমেজের মালিকের সঙ্গে তার বচসা হয় এবং চাকরি চলে যায়। মোহম্মদ নাসিম বর্তমানে পলাতক আছে। পুলিশ তার সন্ধানে আছে। তাকে গ্রেফতার করতে পারলেই সব রহস্যের সমাধান হবে।
আওয়ামী লীগ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দি ইমেজের মালিক ফারুক এবং তার বন্ধু জহির দুজনই আওয়ামী যুবলীগের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। ক্ষমতাসীন সরকার ভাড়াটে গুণ্ডা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী কর্মীদের হত্যা করে যাচ্ছে। ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে যাওয়া এই খুনি সরকারের পতনের জন্যে মুক্তিযুদ্ধের সকল স্বপক্ষ শক্তিকে এক হতে আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলীয় কর্মীদের ওপর এই বর্বর আক্রমণের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ আগামী বৃহস্পতিবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে।
এদিকে বিএনপি থেকে বলা হয়েছে, এই দুজনই জিয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত যুবদলের কর্মী। একজন (মোহম্মদ ফারুক) যুবদল নগর কমিটির ক্রীড়া পরিষদের সদস্য। বিরোধী দল দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির জন্য পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। তাদের সমুচিত জবাব দেয়া দেশপ্রেমিক জনতার কর্তব্য। বিএনপি উন্নয়নের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। সন্ত্রাসের রাজনীতিতে বিশ্বাসী না।