তুমি পাগল হতে পার। আমি তো পাগল না। দুনিয়ার মানুষের সামনে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ভিজব। লোকজন তাকিয়ে দেখবে শাড়িটা কতটা গায়ের সঙ্গে লেগেছে।
তাহলে তুমি বৃষ্টিতে ভিজবে না?
না।
শাড়ি গায়ের সঙ্গে লেগে যাবে এই ভয়ে বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবে?
উফ চুপ কর তো!
রবীন্দ্রনাথের ঐ গানটা মনে করলে কিন্তু ভেজা শাড়ির কথা মাথায় আসবে না। দুহাত তুলে ঘুরে ঘুরে বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করবে।
কোন গান?
এসো কর স্নান, নবধারা জলে
এসো নীপবনে ছায়াবীথি তলে।
বারসাত শোনো তুমি অনেক দিন আমার সঙ্গে আছ ঠিকই কিন্তু তুমি আমাকে সেই অর্থে চেন না। আমার মধ্যে প্রকৃতিপ্রেম নেই। বৃষ্টি দেখলেই আমার বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করে না।
রেগে যাচ্ছ কেন?
রাগছি না। তোমার নায়ক টাইপ কথা শুনে বিরক্ত হচ্ছি। তুমি কি জানো তুমি মানুষকে খুব বিরক্ত করতে পার।
জানি।
বৃষ্টিতে ভেজার এই ঢংটা না করে তুমি কি দয়া করে রিকশায় উঠবে?
তোমার সঙ্গে?
হ্যাঁ, আমার সঙ্গে।
তোমার নতুন শাড়ি ভিজে যাবে তো।
ভিজুক। তুমি উঠে এসো।
এখন উঠতে পারব না। ছোট্ট একটা কাজ আছে কাজটা শেষ করে উঠতে হবে।
কী কাজ?
নীলুফার নামের একটি মেয়েকে নিউজ বুলেটিন পাঠাতে হবে। তার মোবাইলে টেলিফোন করে জানাতে হবে যে তুমি এসেছ। বিয়েটা শেষপর্যন্ত হচ্ছে! হাসছ কেন?
হাসছি কারণ আমি আসিনি। আমাদের বিয়েও হচ্ছে না। আমার রিকশায় করে চলে আসার ব্যাপারটা পুরো কল্পনা। শুধু যে আমার ব্যাপারটাই কল্পনা তা না, বৃষ্টির ব্যাপারটাও কল্পনা।
তাই না কি?
হ্যাঁ, তাই। বৃষ্টি অনেকক্ষণ থেমে গেছে। আকাশে মেঘ কেটে গিয়ে রোদ পর্যন্ত উঠে গেছে। তুমি যদি একটু ডান দিকে সরে দাঁড়াও তাহলে তোমার গালে রোদ পড়বে।
মীরু তোমার হাতে কি ঘড়ি আছে?
না আমার হাতে ঘড়ি নেই। আমি কল্পনার মীরু। কল্পনার মীরু হাতে ঘড়ি পরে না। বাস্তবের মীরু পরে। ঘড়ি দিয়ে কী হবে?
চারটা বাজছে কি না জানতে চাই।
তোমার নিজের হাতে ঘড়ি আছে। ঘড়িটা দেখে সময় জেনে নাও। আমার ধারণা চারটার বেশি বাজে।
বারসাত ঘড়ি দেখল। চারটা পঁচিশ বাজে। মীরুর জন্যে আর অপেক্ষা করার দরকার নেই। এখন চলে যাওয়া যেতে পারে। একটা টেলিফোন নীলুফার ভাবীকে করতে হবে। উনি নিশ্চয়ই টেলিফোনের জন্যে অপেক্ষা করে আছেন।
হ্যালো ভাবী।
হ্যাঁ।
মীরু আসেনি।
আই এ্যাম সরি টু হিয়ার দ্যাট। তুমি কোথায়?
আমি এখনো কাজি অফিসের আশপাশে। টেলিফোন শেষ করেই রওনা দেব।
কোথায় রওনা দিবে?
আমার দূর-সম্পর্কের এক মামার বাগানবাড়িতে। বাগানবাড়িতে আটচল্লিশ ঘণ্টা কাটানোর অনুমতি নিয়েছিলাম। ঐখানে যাব।
বাগানবাড়িটা কোথায়?
কালিয়াকৈর-এর কাছে।
আমি একটা সাজেশান দেই?
দিন।
একা একা কালিয়াকৈর যাবার কোনো মানে হয় না। আজ কোথাও যাবার দরকার নেই। ঢাকাতেই থাক। মীরু মেয়েটার বাসায় যাও, খোঁজ নাও তার কী হয়েছে।
তার কিছু হয়নি, সে ভালো আছে। সে আমাকে মাথা থেকে ঝেড়ে। ফেলেছে। এখন বাসায় গেলে দেখব সে তার মার সঙ্গে সাপ লুডু খেলছে।
উল্টোটাও হতে পারে। সে হয়তো কোনো সমস্যায় পড়েছে। তুমি আজ বাগানবাড়িতে যাবার আইডিয়া বাদ দাও।
বাদ দিতে পারব না। আমাকে যেতেই হবে। সেখানে তিনজন বেহালা বাদক ঠিক করা আছে। তারা আজ দুপুর থেকে বসে আছে।
তোমার শরীর ঠিক আছে তো? তোমার কথাবার্তা কেমন যেন জড়ানো মনে হচ্ছে।
শরীর ঠিক আছে।
কালিয়াকৈর যাবার আগে কি আমার বাসা হয়ে যাবে? এক কাপ চা খেয়ে যাবে।
চেষ্টা করব।
চেষ্টাটেষ্টা না। চলে এসো। তোমাকে ইন্টারেস্টিং কিছু কথা বলব। তোমার কালিয়াকৈর যাওয়া আমি আটকাচ্ছি না। তুমি যাও তবে যাবার আগে আমার এখানে এক কাপ চা খেয়ে যাও।
ভাবী কটা বাজে বলতে পারবেন? আমার হাত ঘড়িটা কাজ করছে। বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।
এখন বাজছে পাঁচটা ছয়। তুমি আসছ তো?
বারসাত জবাব না দিয়ে টেলিফোন রেখে দিল। সে পরিষ্কার বুঝতে পারছে তার জ্বর এসেছে। এই জ্বর চট করে যাবার জ্বর না। জ্বর তাকে ভোগাবে। চিৎ করে বিছানায় ফেলে দেবে।
মীরু তার ছোট ফুপুর দিকে তাকিয়ে বলল, ফুপু কটা বাজে?
সুলতানা বললেন, পঁচটা দশ বাজে।
মীরু বলল, ফুপু আমি এখন চলে যাব।
সুলতানা অবাক হয়ে বললেন, তোর বাবার এই অবস্থা তুই কোথায় চলে যাবি! তোর কি মাথাটাথা খারাপ হয়ে গেছে?
মীরু বলল, বাবার অবস্থা এখন ভালো। ডাক্তাররা বলেছেন বিপদ কেটে গেছে। তোমরা সবাই চলে এসেছ। এখন আমার দরকার কী?
তুই দেখি সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেছিস। তোর দরকার থাকবে না?
তোমরা যা পার কর। হাসপাতাল আমার পছন্দের জায়গা না। হাসপাতালে ঢুকলেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। দমবন্ধ অবস্থায় অনেকক্ষণ আছি। এখন আমাকে যেতেই হবে।
কোথায় যেতে হবে?
মীরু স্বাভাবিক গলায় বলল, কাজি অফিসে যাব ফুপু। আজ আমার বিয়ে।
সুলতানা বিরক্ত গলায় বললেন, সব সময় ঠাট্টা-ফাজলামি করিস এসব ভালো না। তোর ওপর দিয়ে খুব ধকল গেছে। বুঝতে পারছি মাথা আউলিয়ে গেছে। যা কিছুক্ষণের জন্য ঘুরে আয়। নাসেরকে বলে দিচ্ছি ও তোকে নামিয়ে দেবে।
নাসেরটা আবার কে?
নাসেরের সঙ্গে তো আজ ভোরেই এক গাদা কথা বললি। এর মধ্যে ভুলে গেছিস? তোর হয়েছে কী বল তো?
মীরু ক্লান্ত গলায় বলল, ফুপু আমার কিছু হয়নি। আমি ভালো আছি। আর শোনো আমাকে পৌঁছে দিতে হবে না। আমি রিকশা নিয়ে যাব।