ভাবী চা খাবেন?
না। আমি ঘন ঘন চা খাই না।
বৃষ্টি দেখতে দেখতে চা খেতে ভালো লাগে।
তুমি খাও। বারসাত আমার যে এখন উঠতে হয়। ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে হবে।
বারসাত বলল, ভাবী আমার মনে আছে। ওর স্কুল ছুটি হবে দুটায়। আপনাকে দেড়টার সময় উঠলেই চলবে। এখনো আপনার হাতে পঁচিশ মিনিট সময় আছে।
নীলুফার বলল, মেয়েটার বাসায় টেলিফোন নেই? তুমি টেলিফোনে খোঁজ নাও না কেন?
এক ফাঁকে চেষ্টা করে এসেছি। ওদের টেলিফোন নষ্ট।
রিং হয়?
মনে হচ্ছে রিং হয়। কিন্তু কেউ তো ধরছে না।
নীলুফার বলল, শেষ মুহূর্তে মেয়ে মত বদলায়নি তো?
বারসাত বলল, বদলাতে পারে। মেয়েরা কেন জানি কাজির অফিসে এসে বিয়ে করার টেনশানটা নিতে পারে না। বাড়ি থেকে বের হবার আগ মুহর্তে মত বদলায়। কাজের মেয়ের সঙ্গে লুডু খেলতে বসে।
লুডু খেলতে বসে মানে?
কথার কথা বললাম।
বারসাত হাসছে। শব্দ করেই হাসছে। নীলুফার বলল, হাসছ কেন?
বারসাত বলল, মজার একটা কথা মনে করে হাসছি। মাঝে মাঝে। এমনও হয় কাজি অফিসের টেনশানের উত্তাপে সাত বছরের প্রেমও উড়ে যায়। প্রেমিককেই চিনতে পারে না বিয়ে তো দিল্লি হনুজ দূর অস্ত।
প্রেমিককেই চিনতে পারবে না কেন?
আমার নিজের চোখে দেখা। আমার বন্ধু রকিবুল কাজি অফিসে বিয়ে করবে। আমি সাক্ষী। মেয়ের বিকেলে আসার কথা। রাত আটটা বেজে গেল মেয়ের খোঁজ নেই। রকিবুল গেল টেলিফোন করতে। মুখ শুকনা করে ফিরে এল। মেয়ে তাকে চিনতে পারছে না। টেলিফোনে রকিব যতই বলে— আমি রকিব। মেয়ে বলে, কোন রকিব? হা হা হা।
হাসছ কেন?
মজা পেয়ে হাসছি ভাবী।
নীলুফার বলল, তুমি মনে হয় সব কিছুতেই মজা পাও।
বারসাত বলল, আসলে আমি কোনো কিছুতেই মজা পাই না। কিন্তু ভঙ্গি করি সব কিছুতে মজা পাচ্ছি।
তার মানে তুমি এখন মজা পাচ্ছ না?
একটু কম পাচ্ছি।
মেয়েটার জন্যে আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবে?
চারটা পর্যন্ত অপেক্ষা করব।
চারটা কেন?
মীরুকে বলে রেখেছিলাম আমি অবশ্যই চারটা পর্যন্ত অপেক্ষা করব। ভাবী আপনার কি ক্ষিধে লেগেছে। কিছু খাবেন? এখানে একটা দোকান আছে মিনি সিঙাড়া পাওয়া যায়। প্রায় মার্বেলের মতো সাইজ। খেতে অসাধারণ। নিয়ে আসি?
নীলুফারের মনে হল বারসাতের ক্ষিধে পেয়েছে। টেনশানে সে হয়তো সকালে নাস্তাই করেনি। মিনি সিঙাড়া খাওয়ার কোনো ইচ্ছাই নীলুফারের করছে না। বারসাতের কথা ভেবে সে বলল, চট করে নিয়ে এসো।
বারসাত সিঙাড়া আনতে পারল না। আজ সিঙাড়া বানানোর কারিগর আসেনি। বারসাত ফিরল কাক ভেজা হয়ে। নীলুফার বলল, এ কী অবস্থা! এমন ভিজা কী করে ভিজলে?
ইচ্ছা করে ভিজলাম ভাবী। যখন দেখলাম সিঙাড়া বানানোর কারিগর আসেনি তখন এমন মেজাজ খারাপ হল যে রাস্তায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম। বৃষ্টিতে ভিজে যদি গরম মেজাজ একটু ঠাণ্ডা হয়।
ঠাণ্ডা হয়েছে?
কিছুটা হয়েছে।
নীলুফার বলল, আমাকে এখন যেতে হবে। তুমি অপেক্ষা কর। আমার মোবাইল টেলিফোন খোলা থাকবে। মেয়েটা যদি এসে পরে আমাকে টেলিফোন করবে।
আচ্ছা।
না এলেও করবে। কী হয়েছে পুরোপুরি না জানা পর্যন্ত আমার অস্থীর ভাব যাবে না।
ভাবী চারটার পর নিউজ বুলেটিন প্রচার করা হবে।
নীলুফার বলল, তোমাকে আমি এখন ছোট্ট একটা উপদেশ দিতে চাচ্ছি। দেব?
দিন।
ঠাণ্ডায় তোমার গা কাপছে। তোমাকে দেখেই মনে হচ্ছে তোমার জ্বর আসবে। চারটা পর্যন্ত অপেক্ষা করার দরকার নেই তুমি চলে যাও। কাজি সাহেবকে বলে যাও–ঐন্দ্রিলা নামের মেয়েটা এলে যেন তাকে বলা হয় তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে। ঠিক আছে?
বারসাত হাসল। কিছু বলল না।
নীলুফার বলল, বাসায় যেতে না চাও থাক এখানে। অপেক্ষা কর। একটা টাওয়েল জোগাড় করে মাথাটা মোছার ব্যবস্থা কর।
বারসাত আবারো হাসল।
তার মাথায় অন্য পরিকল্পনা খেলা করছে। তার ইচ্ছা করছে ঝুম বৃষ্টিতে ভালোমতো ভিজে সত্যি সত্যি একটু অসুখ বাধাতে। বেশ কিছুদিন ধরে তার শরীর অতিরিক্ত রকমের ভালো যাচ্ছে। অসুখ-বিসুখ কিছু হচ্ছে না। শেষবার হল ভাইরাল ফিভার। বিছানায় তিনদিন শুয়ে থাকা। বিছানা থেকে উঠে বসলেই মাথা চক্কর দিত। চক্করটা খারাপ লাগত না। পর্দা সরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ কড়কড় করত। মাথা ধকধক করত। দুটাই কেন জানি ভালো লাগত। অসুখও উপভোগ করতে জানতে হয়।
বারসাত বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়াল। ভেজার উদ্দেশে বৃষ্টিতে নামলেই বৃষ্টি কেন জানি কমে যায়। বারসাত ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টি অনেকখানি কমে গেছে—তারপরও যা আছে খারাপ না। এই বৃষ্টি ঘণ্টা দুই শরীরে মাখাতে পারলে অসুখ অবশ্যই হবে। ডবল নিউমোনিয়া বাধিয়ে ফেলা যেতে পারে। ঘোর ঘোর ভাব নিয়ে বিছানায় পরে থাকা খারাপ কী?
বৃষ্টিতে ভেজার জন্যে বারসাত মোটামুটি একটা ভালো জায়গা পেয়েছে। রাস্তা থেকে চট করে তাকে দেখা যাবে না। সে রাস্তার লোকজন ঠিকই দেখতে পাবে। রাস্তার সব লোক তার দেখার দরকার নেই। মীরুকে দেখতে পেলেই চলবে। আচ্ছা মীরু যখন দেখবে সে হাসি হাসি মুখে বৃষ্টিতে ভিজছে তখন কী করবে? রিকশা থেকে নেমেই বিরক্তিতে কপালে ভাঁজ ফেলে বলবে, তুমি বৃষ্টিতে ভিজছ কেন?
বারসাত বলবে, এই বৎসর বৃষ্টিতে ভেজা হয়নি। কাজেই ভাবলাম কোটা শেষ করে রাখি। শুভদিনে বৃষ্টিতে ভেজা যাক।
আজ শুভদিন না কি?
আরে আজ আমাদের বিয়ের দিন। আজ শুভদিন না? রিকশা ভাড়া দিয়ে চলে এসো দুজনে মিলেই ভিজি।