পটে যাবে কী রকম কথা। এই ধরনের নোংরা কথা আমার সঙ্গে বলবি না মীরু। তোর মুখে নোংরা কথা মানায় না। নোংরা কথা বললে যে অজু ভেঙে যায় এটা জানিস?
বারসাতকে তুমি পনেরো মিনিট সময় যদি দাও তাহলে সে তোমার পোট্রেট করে ফেলবে। সেই পোট্রেট দেখলে তোমার চোখ কপালে উঠে যাবে।
পোট্রেট করে ফেলবে মানে কী? পোট্রেট কী?
তোমার ছবি এঁকে ফেলবে। এমন সুন্দর যে মনে হবে ক্যামেরায় তোলা।
ছবি আঁকা তো খুবই গুনার কাজ।
গুনার কাজ না সোয়াবের কাজ আমি জানি না তবে তার আঁকা ছবি। দেখলে তোমার আক্কেলগুড়ুম হয়ে যাবে। ছবি আঁকা কীভাবে শিখেছে শুনবে?
না।
আহা শোনো না। বারসাত একদিন গিয়েছে নিউ মার্কেটে। ফার্মেসি থেকে এসিডিটির ওষুধ কিনবে। ওর মারাত্মক এসিডিটি। যাই হোক ওষুধ কিনতে গিয়ে দেখে ফার্মেসির সামনে এক লোক মেঝেতে বসে ফটোগ্রাফ দেখে দেখে পেনসিলে ছবি আঁকছে। ওয়ান ফুট বাই ওয়ান ফুট ছবি একে। দেয়, একশ করে টাকা নেয়। বারসাত লোকটার পাশে বসে পড়ল। দুঘণ্টা ছবি আঁকা দেখল। তারপর কাগজের দোকান থেকে কাগজ কিনল, পেনসিল কিনল। মেসে ফিরে নিজের পাসপোর্টের ছবি দেখে একটা ছবি আঁকল। খুবই সুন্দর হল ছবিটা— এই তার শুরু।
ছেলের ধৈর্য আছে।
এটা ধৈর্য না। এর নাম ক্ষমতা। কোনো কিছু করতে হলে শুধু ধৈর্যে হয় না। ক্ষমতা লাগে। বারসাত ছবি আঁকার ক্ষমতা নিয়ে এসেছে। নিজে বুঝতে পারেনি। তবে সে পোট্রেট ছাড়া আর কিছু করে না। যে পোট্রেট এত ভালো পারে সে সব কিছুই পারবে অথচ সে করবে না। তার না কি মানুষের মুখ ছাড়া অন্য কিছু আঁকতে ভালো লাগে না। ফুপু তাকে দিয়ে তোমার একটি ছবি আঁকাবে? বোরকা ছাড়া ছবি।
ফাজলামি করিস না তো।
আচ্ছা ঠিক আছে ছবি না আঁকালে। তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বল। কথা বলাতে তো দোষ নেই।
কথা বললে কী হবে?
কিছুক্ষণ কথা বললেই তাকে আপন মনে হবে। মনে হবে সে বাইরের কেউ না, ঘরের মানুষ। সে তিনটা প্রাইভেট টিউশনি করে। যে সব বাচ্চাদের সে পড়ায় তাদের মায়েদের সঙ্গে ওর খুবই খাতির। মায়েরা। তাকে প্রায়ই খবর দিয়ে নিয়ে যায়। তাকে নিয়ে শপিং-এ যায়। এটা-ওটা কাজ করায়। যে কোনো কাজ তাকে দাও সে নিখুঁতভাবে করবে। তার এক ছাত্রীর নানির চোখ অপারেশন হবে মাদ্রাজে। বারসাত একা তাঁকে নিয়ে মাদ্রাজ থেকে চোখ অপারেশন করে চলে এসেছে। মানুষটাকে তোমার এখন কেমন লাগছে ফুপু?
নাই কাজ খই ভাজ টাইপ লাগছে। এক ধরনের মানুষই আছে যাদের নিজের কোনো কাজ থাকে না তারা কাজের জন্যে অন্যের ওপর লেপ্টে থাকে।
ঠিক বলেছ ফুপু। বিয়ের পর আমি ওর এই অভ্যাস ঠিক করাব।
বিয়ে মানে? বিয়ের কথা আসছে কেন? তুই কি ঐ গাধাটাকে বিয়ের কথা ভাবছিস?
হুঁ।
হুঁ মানে?
হুঁ মানে Yes. আমি ঐ লোকটাকে কাজির অফিসে বিয়ে করব।
আমি তোর বিয়ে ঠিক করে রেখেছি। ছেলের নাম–জাহাঙ্গীর। হীরের টুকরো ছেলে। তুই কাজি অফিসে কেন বিয়ে করবি।
কাজি অফিসে বিয়ে করব কারণ আমি জাহাঙ্গীর সাহেবকে বিয়ে করছি। অন্য একজনকে বিয়ে করছি। হীরা আমার পছন্দের পাথর না। আমার পহন্দের পাথর হল রেললাইনের পাথর।
মীরু তুই বুঝতে পারছিস না, এরকম কিছু করলে কিন্তু বাসায় গজব হয়ে যাবে।
গজব যাতে না হয় তুমি সেই চেষ্টা চালাবে। তুমি কাজ করবে আমার হয়ে। তুমি হবে আমার স্পাই। ঘরের শত্রু বিভীষণ।
আমি কেন তোর হয়ে কাজ করতে যাব?
কারণ তুমি আমার অতি আদরের ফুপু। আমি তোমাকে পছন্দ করি। তুমিও আমাকে পছন্দ কর। ফুপু দেখ তো বিয়ের দিন আমি এই শাড়িটা পরব। ঠিক আছে না?
মোটেই ঠিক নেই। বিয়ের দিন সাদা শাড়ি কেউ পরে? সাদা হল বিধবাদের রঙ।
পশ্চিম দেশের সব মেয়েরা বিয়েতে সাদা পোশাক পরে। তাছাড়া শাড়িটা পুরোপুরি সাদাও না। মাঝে মধ্যে লাল-সবুজের খেলা আছে।
তুই তো পশ্চিমা মেয়ে না। তুই বাঙালি মেয়ে। বিয়ের দিন তুই পরবি টকটকে লাল রঙের শাড়ি।
তুমি পাগল হয়েছ? লাল শাড়ি পরে আমি কাজির অফিসে যাব না-কি?
এক কাজ কর, শাড়ির উপর বোরকা পরে ফেল। তাহলে কেউ বুঝবে।
এই বুদ্ধি খারাপ না। ঘোমটার নিচে খেমটা নাচ।
কাল্পনিক কথােপকথন আর ভাল লাগছে না। এখন সত্যি সত্যি কারো সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করছে। রুনির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলা যায়। সে মনে হয় রাতে ঘুমায় না। মীরু যত রাতেই টেলিফোন করুক দুটা রিং বাজার আগেই রুনি টেলিফোন ধরে সহজ গলায় বলবে–হ্যালো। টেলিফোনটা থাকে বড় খালার ড্রয়িং রুমে। দুটা রিং হবার সঙ্গে সঙ্গে টেলিফোন ধরতে হলে ড্রয়িং রুমে বসে থাকতে হয়। মীরার ধারণা তার বড় বোন রাত এগারোটার পর ড্রয়িং রুমেই চুপচাপ বসে থাকে। যার সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে গেছে তার টেলিফোন কলের জন্যে অপেক্ষা। সেই কল আর আসে না।
মীরা টেলিফোন করল। একবার রিং হবার পরই রুনি মিষ্টি গলায় বলল, হ্যালো।
আমি মীরা। আপা তুমি জেগে আছ?
হুঁ।
ঐ লোকের কি টেলিফোন করার কথা?
কারোরই টেলিফোন করার কথা না। ঘুম আসছে না বলে জেগে আছি। তুই জেগে আছিস কেন?
আমি কেন জেগে আছি তা তোমাকে বলতে পারি কিন্তু তুমি সঙ্গে সঙ্গে সেটা চারদিকে রাষ্ট্র করে দেবে, আমার হবে অসুবিধা।
মীরা বাসার খবর কি?
বাসার খবর ভাল।
বাবা আমাকে ত্যাজ্য কন্যা করেছেন এটা কি সত্যি?
হুঁ, সত্যি।
তার মানে আমি বাবার বিষয়-সম্পত্তি কিছুই পাব না?