কী খেলা?
আমি একটা শব্দ বলব। শব্দটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আপনার মনে যে শব্দটা আসবে আপনি সেটা বলবেন। আপনার কাছ থেকে শব্দটা শোনার পর আমার মনে যা আসবে তা বলব। এরকম চলতে থাকবে।
শেষ হবে কখন?
যেখান থেকে শুরু করেছি সেখানে পৌঁছার পর শেষ হবে। আসুন শুরু করি। আমি বলছি প্রথম শব্দ। বৃষ্টি। বৃষ্টি শব্দটা শুনে আপনার মনে যে শব্দটা আসবে সেটা বলুন।
মীরু : অশ্রু।
নাসের : নদী।
মীরু : নৌকার পাল।
নাসের : নীল আকাশ।
মীরু : আকাশে মেঘ।
নাসের : ঝড়।
মীরু :বৃষ্টি।
নাসের বলল, খেলা শেষ। আমরা বৃষ্টি দিয়ে শুরু করেছিলাম আবার বৃষ্টিতে ফিরে এসেছি।
মীরু বলল, বৃষ্টি নামতেও শুরু করেছে। কয়েক ফোঁটা আমার গায়ে পড়েছে। চলুন যাওয়া যাক।
মীরুর চোখ ভর্তি পানি। সে চোখের পানি আড়াল করার কোনো চেষ্টা করছে না।
নাসের দুঃখিত গলায় বলল, ঐন্দ্রিলা আপনি নিশ্চিত থাকুন আমি আজ রাতের মধ্যে বারসাত সাহেবের খবর বের করব।
———-
পরিশিষ্ট
মেয়েটির চেহারা অত্যন্ত মিষ্টি। চোখ বুদ্ধিতে ঝলমল করছে। সে এসেছে। তার বিয়েতে আমাকে দাওয়াত করতে। আমি বললাম, তোমার নাম কী?
মেয়েটি বলল, আমার চারটা নাম, মরিয়ম, মীরু, ঐন্দ্রিলা এবং ঐ।
আমি বললাম, চার নামের মেয়ে আমি এই প্রথম দেখলাম।
মেয়েটি বলল, চারটা নামের মধ্যে কোন নামটা আমার সঙ্গে সবচে ভালো যায়।
আমি বললাম, মরিয়ম নামটা সবচে ভালো যায়। মরিয়ম নামের মধ্যে কোমল একটা ব্যাপার আছে। তোমার মধ্যেও কোমলতা আছে।
আমার মধ্যে কোনোই কোমলতা নেই। আমি খুবই কঠিন একটা মেয়ে। যাই হোক আমি কঠিন না কোমল তা নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই। আমার বিয়েতে কিন্তু আপনাকে আসতে হবে। শুক্রবারে বিয়ে। শুক্রবারে আপনি কোনো কাজ রাখতে পারবেন না।
তোমার বিয়েতে আমাকে আসতে হবে কেন?
কারণ আমার জীবনটা অবিকল আপনার লেখা একটা উপন্যাসের মতো। উপন্যাসের নায়িকা গোপনে একটা ছেলেকে বিয়ে করার জন্যে কাজি অফিসে যায়। ছেলেটা কিন্তু আসে না। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে ফিরে আসে। তার বিয়ে হয় অন্য আরেকজনের সঙ্গে। তার জীবন কাটে
কাঁদতে কাঁদতে। উপন্যাসের কথা কি আপনার মনে পড়েছে?
না। ছেলেটা আসে না কেন?
ছেলেটা খুবই অসুস্থ ছিল। তার হয়েছিল হেপাটাইটিস বি। ডাক্তাররা সন্দেহ করেছিলেন তার লিভার সিরোসিস হয়েছে। এক ধরনের ক্যানসার। কাজেই তার মনে হল দুদিন পরে সে মারা যাচ্ছে। এই অবস্থায় একটা মেয়েকে বিয়ে করে তার জীবন সে নষ্ট করতে পারে না। কাজেই বিয়ের দিন সে পালিয়ে গেল গ্রামে। এখন কি আপনার মনে পড়েছে?
হ্যাঁ মনে পড়েছে।
উপন্যাসের নাম রোদনভরা এ বসন্ত।
আমি বললাম, তুমিও কি সেই উপন্যাসের নায়িকার মতো অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করছ?
না আমি অসুস্থ ছেলেটাকেই বিয়ে করছি। তাকে গ্রাম থেকে ধরে আনা হয়েছে। আমার এক বন্ধু নাসের নাম উনি তাকে তার বাড়িতে গৃহবন্দি করে রেখেছেন।
ইন্টারেস্টিং তো!
অবশ্যই ইন্টারেস্টিং। আমাদের বিয়েতে আপনি উপস্থিত থাকবেন। এবং উপন্যাসের শেষটা পাল্টে দেবেন। ছেলেটার অসুখ অবশ্যই সারিয়ে দেবেন। উপন্যাসের নায়ক-নায়িকা যেন খুব সুখে জীবন কাটায়।
তাহলে তো উপন্যাসের নামও পাল্টাতে হয়। মিলনান্তক উপন্যাসের নাম–রোদনভরা এ বসন্ত হতে পারে না।
নাম পাল্টানোর দরকার নেই। আমি সারা জীবন কাঁদতে রাজি আছি কিন্তু বারসাতকে হারাতে রাজি না।
মেয়েটি কাঁদছে। তার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। সুন্দর লাগছে দেখতে।
আমি বললাম, আমার উপন্যাসের নায়ক সুন্দর ছবি আঁকত। তোমার এই ছেলে বারসাত কি ছবি আঁকতে পারে?
ঐন্দ্রিলা চোখ মুছতে মুছতে হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল।
তার চেহারা থেকে কান্না চলে গেছে। সে এখন আনন্দে ঝলমল করছে। এই মেঘ এই রৌদ্র।