বারসাত নাম।
কাজি অফিসে বিয়ে করছিস?
কাজি অফিস ছাড়া উপায় কি? তোমরা কি কমুনিটি সেন্টারে আমার বিয়ে দেবে?
জাহেদা কাদো কাদো গলায় বললেন, আমি আমার দুই মেয়ের কোনো মেয়েকেই কি শখ করে বিয়ে দিতে পারব না?
মীরু বলল, সে রকমই তো মনে হচ্ছে।
জাহেদা কেঁদে ফেললেন। মীরু মার হাত ধরে বলল, বাবাকে রাজি করাও। বাবাকে গিয়ে বল— মীরু একটা ছেলেকে বিয়ে করতে চাচ্ছে। ছেলে বেকার। হতদরিদ্র। বাবা যদি তাতেই রাজি থাকে তাহলে আমি খুবই খুশি মনে বেনারসি শাড়ি পরে বিয়ে করব। বাবাকে বলতে পারবে?
জাহেদা কিছু বললেন না। চোখ মুছতে থাকলেন। মীরু বলল, এত মন। খারাপ করো না তো মা। যা হবার হবে। কে সারা সারা। এসো আমরা হাসি। ছাদে যাবে? চল ছাদে যাই। ছাদের ঘুম সোফায় তুমি শুয়ে থাকবে। আমি তোমার চুল টেনে দেব। যাবে?
জাহেদা এই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বললেন, বিয়ের পর তুই কী করবি? রুনির মতো বাড়ি ছেড়ে চলে যাবি?
মীরু শান্তগলায় বলল, আমার চলে যাবার জায়গা নেই মা। ওর হাতে একেবারেই টাকা-পয়সা নেই। ঘর ভাড়া করে আমাকে নিয়ে থাকার তো প্রশ্নই ওঠে না। আমাকে তোমাদের সঙ্গেই কুমারী মেয়ে সেজে থাকতে হবে। মাঝে মধ্যে স্বামীর সঙ্গে তার মেসে দেখা করতে যায়।
এইভাবে কতদিন থাকবি?
যতদিন থাকা যায়। মা তুমি কি আমাকে এইভাবে থাকতে দেবে না। কি বাবার কাছে আমাকে ধরিয়ে দেবে?
ধরিয়ে দেব কেন?
স্বামীর কাছে ভালো সাজার জন্যে ধরিয়ে দেবে। আদর্শ স্ত্রী সাজতে যাবে। তোমার জীবনের লক্ষ্য হল আদর্শ স্ত্রী হওয়া। আদর্শ মা হওয়া না।
আমার সম্বন্ধে তোর এত খারাপ ধারণা?
হ্যাঁ মা তোমার সম্পর্কে আমার খুবই খারাপ ধারণা। রুনি আপু যে গোপনে বিয়ে করেছে সেই খবরটা বাবাকে তুমি দিয়েছ। আমি তোমার কী নাম দিয়েছি শুনতে চাও? আমি তোমার নাম দিয়েছি তালেবান মা। বাবার সব কথায় তুমি তাল দাও বলেই তুমি তালেবান।
আমি তালেবান?
হ্যাঁ তুমি তালেবান। বাবা যখন ঘুষ খায় তখন তুমি বল, অফিসের সবাই ঘুষ খায়। তোর বাবা একা যদি না খায় সে একঘরে হয়ে যাবে। তার চাকরি চলে যাবে। চাকরি বাঁচানোর জন্যেই তার ঘুষ খাওয়া দরকার। বলনি এমন কথা?
জাহেদা ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। মীরু বাথরুমে ঢুকল। চোখেমুখে পানি দিল। রান্নাঘরে ঢুকে নিজের জন্যে এক কাপ চা বানাল। চায়ের। কাপে দুই চুমুক দেয়ার পর আফজল সাহেব ডাকলেন, মরিয়ম। মরিয়ম।
মীরু চায়ের কাপ রেখে উঠে দাঁড়াল। আফজল সাহেব আবারো। ডাকলেন, মরিয়ম।
মীরু বলল, বাবা আমি আসছি। একটা টেলিফোন করে আসছি।
টেলিফোন পরে হবে আগে শুনে যা।
এত ব্যস্ত হয়ো না বাবা আমি আসছি। টেলিফোন করতে এক মিনিট লাগবে।
মীরু টেলিফোনের ডায়াল ঘুরাল। সুলতানা ফুপুকে টেলিফোন করা দরকার। নামাজে দাঁড়িয়ে পড়লে এক-দেড় ঘণ্টা তাকে আর পাওয়া যাবে না।
হ্যালো ফুপু।
হুঁ।
কী ব্যাপার এখনো তুমি এশার নামাজে দাঁড়াওনি?
তুই কী বলবি বল তো সময় নষ্ট করিস না।
আমার জন্যে একটা ঘর খালি করে রাখ আমি আসছি।
তুই এমন কী মহারানী যে তোর জন্যে ঘর খালি করে রাখতে হবে। তুই আসবি আমার সঙ্গে ঘুমাবি।
নাসের সাহেবের টেলিফোন নাম্বারটা আমাকে একটু দাও তো ফুপু।
টেলিফোন করবি?
টেলিফোন না করলে নাম্বার নিয়ে কী করব?
ঠিক করে বল তো মীরু ছেলেটাকে তোর পছন্দ হয়েছে না?
হ্যাঁ।
কিন্তু নতুন ধনী না। চারপুরুষের ধনী।
ফুপু তুমি টেলিফোন নাম্বারটা দাও। আমার হাতে বেশি সময় নেই। বাবা ডাকছেন।
তুই আমার এখানে কখন আসবি?
এই ধর ঘণ্টা খানিক।
বাড়িতে কি কোনো সমস্যা হয়েছে?
মীরু বলল, আমি যে পরশু সকাল এগারোটায় গোপনে একজনকে বিয়ে করতে যাচ্ছি এই খবরটা মাকে বলেছিলাম। আমার ধারণা মা বাবাকে গিয়ে বলেছেন। যে কারণে বাবা ব্যস্ত হয়ে আমাকে তলব করেছেন।
তুই বারসাতকে বিয়ে করছিস?
হুঁ।
নাসেরের টেলিফোন নাম্বার দরকার কেন?
সাক্ষী লাগবে না? উনি হবেন আমার দিকের সাক্ষী।
আমি জীবনে অনেক মেয়ে দেখিছি। তোর মতো অদ্ভুত মেয়ে দেখিনি।
মীরু বলল, বারসাতের সঙ্গে যখন তোমার পরিচয় হবে তখন তুমি বলবে— আমি অনেক অদ্ভুত ছেলে দেখেছি কিন্তু বারসাতের মতো অদ্ভুত ছেলে দেখিনি। আমিও অদ্ভুত সেও অদ্ভুত! অদ্ভুত অদ্ভুতে ধূল পরিমাণ।
জাহেদা এসে ঘরে ঢুকলেন। মীরু টেলিফোন নামিয়ে রেখে বলল, মা কিছু বলবে?
জাহেদা বললেন, তোর বাবা তোকে ডাকছে তুই যাচ্ছিস না কেন?
মীরু বলল, তুমি কি বাবাকে পরশু সকালে কী ঘটতে যাচ্ছে সেটা বিস্তারিতভাবে বলেছ?
জাহেদা চুপ করে রইলেন। মীরু বলল, বাবার সঙ্গে আমি দেখা করব না। তিনি হার্টের রোগী। চিৎকার চেঁচামেচি করে একটা সমস্যা তৈরি করবেন। আমি নিঃশব্দে পালিয়ে যাব। তোমার কাছে টাকা-পয়সা থাকলে আমাকে দাও।
শোবার ঘর থেকে আফজল সাহেব আবারো ডাকলেন, মরিয়ম। মরিয়ম।
আকাশ ঘন নীল
আকাশ ঘন নীল।
আকাশের দিকে তাকালে মনে হয় চোখে নীল সানগ্লাস পরে আকাশ দেখা হচ্ছে। মীরু বলল, আকাশ কী রকম নীল দেখেছেন? হালকা নীলকে আমরা বলি আকাশী নীল। কিন্তু আসলে আকাশের নীল অনেক গাঢ়।
নাসের কিছু বলল না। হাসল।
মীরু বলল, নীল দিয়ে শুরু হয়েছে এমন একটা গানের কলি বলুন তো।
নাসের বলল, বলতে পারব না। আমি আসলে এত মন দিয়ে গান শুনি না।
গান না পারলে কবিতার লাইন বলুন যেটা শুরু হয়েছে নীল দিয়ে।