কেন খারাপ?
এরা অপদার্থ এই জন্যে খারাপ।
তোমার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। ফুপু তোমার কি ঘুম পাচ্ছে?
হুঁ। শাড়িটা আমার মুখের ওপর দিয়ে দে। আমি কিছুক্ষণ ঘুমাব।
মীরু ফুপুর মাথার ওপর শাড়ি দিয়ে দিল। সুলতানা জড়ানো গলায় বললেন, তুই কি নাসেরকে বিয়ে করবি? হ্যাঁ বলার দরকার নেই। চুপ করে থাকলেই বুঝব তোর অমত নেই।
ফুপু ঘুমাও।
তাহলে তোর মত আছে? আলহামদুলিল্লাহ।
মীরু বলল, তুমি বলেছিলে চুপ করে থাকলেই বুঝবে আমার মত আছে। আমি কিন্তু চুপ করে থাকিনি। আমি কথা বলেছি। আমি বলেছি, ফুপু ঘুমাও।
সুলতানা বললেন, তোর মত থাকুক বা না থাকুক নাসেরের সঙ্গেই তোর বিয়ে হবে। আমি ইস্তেখারা করে এই জিনিস পেয়েছি।
কি করে এই জিনিস পেয়েছ?
ইস্তেখারা। দোয়া-কালাম পড়ে স্বপ্নে ভবিষ্যৎ জানার একটা পদ্ধতি।
কি দেখেছিলে স্বপ্নে?
স্বপ্নে দেখেছি তোরা দুইজন এক থালায় ভাত খাচ্ছিস। চীনা মাটির বড় একটা থালা।
এক থালায় ভাত খাওয়া স্বপ্নে দেখলে কি বিয়ে হয়?
ইস্তেখারার স্বপ্নগুলি আসে প্রতীকের মত। প্রতীক ব্যাখ্যা করতে হয়। আমার ব্যাখ্যায় এইটাই আসে। তোর ব্যাখ্যা কি?
আমার ব্যাখ্যা হল তুমি মনেপ্রাণে চাচ্ছ নাসের সাহেবের সঙ্গে আমার বিয়ে হোক। চাচ্ছ বলেই স্বপ্নে এই জিনিস দেখেছ। উইশফুল থিংকিং থেকে উইসফুল ড্রিমিং। ফুপু তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছ?
সুলতানা জবাব দিলেন না। তিনি আসলেই ঘুমিয়ে পড়েছেন।
মীরু ভেবেছিল সন্ধ্যার দিকে সে নিজে বড় মামার বাসায় যাবে। মাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে আসবে। তিনি আসতে চাইবেন না। রাগেঅভিমান-দুঃখে কান্নাকাটি করবেন। যে কোনো একদিন আটত্রিশটা ঘুমের ওষুধ খাবেন এটা বলবেন এবং হেন্ডব্যাগ খুলে ঘুমের ওষুধ দেখাবেন। সব শেষে একটা শর্তে আসতে রাজি হলেন—স্বামীর সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক নাই এটা সবাইকে স্বীকার করতে হবে। তিনি অন্য ঘরে আলাদা বিছানায় ঘুমাবেন। বাড়িতে স্বামী-স্ত্রীর যত যুগল ছবি আছে সব নামিয়ে ফেলতে হবে।
মীরু আগেও কয়েকবার তার মাকে এনেছে। এবারো আনা যাবে কোনো সমস্যা হবে না। বোকা মানুষদের পরিচালনা করা খুব সহজ।
মাকে আনার জন্যে মীরুকে কোথাও যেতে হল না। জাহেদা দুপুর বেলা নিজেই চলে এলেন। যথারীতি রান্নাঘরে ঢুকে গেলেন। এক ফাঁকে আফজল সাহেবের ঘরে গিয়ে বললেন, তোমাকে পেঁপে কেটে দেব?
আফজল সাহেব বললেন, দাও। আরেকটা কাজ কর। পায়ের তলা। চুলকাচ্ছে। সরিষার তেল গরম করে মালিশ করে দাও।
জাহেদা বললেন, রূপচান্দা মাছের শুটকি রান্না করছি। তরকারি চড়িয়ে দিয়ে আসি।
আফজল সাহেব দরাজ গলায় বললেন, এসো। কোনো অসুবিধা নাই। চেঁপা শুঁটকি খেতে ইচ্ছে হচ্ছে। চেঁপা ভরতা কর খেয়ে দেখি।
হার্টের অসুখে ঝাল খেলে সমস্যা নাই তো?
সমস্যা থাকলে থাকবে। তাই বলে সব খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেব না কি?
তাদের দেখে কে বলবে আজ সকালেই দুজনের ভয়াবহ ঝগড়া হয়েছে। আফজল সাহেব কঠিন গলায় স্ত্রীকে বলেছেন–তোমার সঙ্গে রাস্তার নেড়ি কুত্তির কোনো ডিফারেন্স নাই। নেড়িকুত্তি কাপড় পরে না। তুমি শাড়ি পর— ডিফারেন্স বলতে এই টুকুই।
মীরু পর্দার আড়াল থেকে দেখল তার মা প্রবল বেগে বাবার পায়ে তেল মালিশ করে দিচ্ছেন। মীরুর ইচ্ছা করল মাকে কঠিন কিছু কথা। শোনায়। শোনানো গেল না। কারণ সে প্রতিজ্ঞা করেছে বাবার ঘরে ঢুকবে। না। প্রতিজ্ঞা করা হয় প্রতিজ্ঞা ভাঙার জন্যে। মীরুর প্রতিজ্ঞা ভাঙতে ইচ্ছা করে না।
বাড়ি খালি। ইসমাইল হোসেন সাহেবের সঙ্গে ঝামেলা পাকিয়ে একটাই লাভ হয়েছে— আত্মীয়-স্বজনরা আপাতত এ বাড়িতে কেউ নেই। তবে পুরোপুরি চলেও নিশ্চয়ই যায়নি। দৃষ্টি সীমার বাইরে আছে। আবারো উদয় হবে। বিশেষ করে ইসমাইল সাহেব। ইনি টাকা-পয়সা না নিয়ে গ্রামে ফিরবেন তা কখনো হবে না। খোয়াজ খিজিরের এমন একটা গল্প তিনি নিশ্চয়ই অকারণে তৈরি করেননি।
দুপুরের পর থেকে মীরুর শ্বাসকষ্ট শুরু হল। অথচ শ্বাসকষ্ট শুরু হবার মত কোন ঘটনা ঘটেনি। ঝগড়াঝাটি যা হবার সকালবেলা হয়েছে। সকালের কথা তার মনেও নেই। তাহলে শ্বাসকষ্টটা হচ্ছে কেন? আবহাওয়ার পরিবর্তনের জন্যে?
আকাশ মেঘলা করেছে। বর্ষাকালে এ রকম মেঘলা আকাশ দিনের মধ্যে কয়েকবার হয়। তার জন্যে শ্বাসকষ্ট শুরু হবার কথা না। মীরু ইনহেলারটা হাতে নিয়ে তার নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।
খাটে আধশোয়া হয়ে বসে শ্বাসকষ্ট সামাল দিতে চেষ্টা করল। আজ সে ইনহেলার নেবে না। ইনহেলার নেয়া অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে। শেষে অবস্থা এ। রকম হবে যে একটু পর পর হা করে মুখে ইনহেলার পাফ করতে হবে। দৃশ্যটা কুৎসিত। মীরু কোন কুৎসিত দৃশ্যের অংশ হতে চায় না।
টেলিফোন বাজছে। টেলিফোনটা মীরুর হাতের পাশে। সে যেখানে বসে আছে সেখান থেকে না নড়েও সে টেলিফোন ধরতে পারে। টেলিফোন ধরবে কি ধরবে না তা সে বুঝতে পারছে না। মীরু লক্ষ্য করেছে। শ্বাসকষ্টের সময় টেলিফোন ধরলে মাঝে মাঝে শ্বাসকষ্টটা কমে যায়। অবশ্যি টেলিফোনে যদি ইন্টারেস্টিং কোনো কথাবার্তা হয় তবেই।
মীরুর মনে হচ্ছে নীলুফার নামের মহিলা টেলিফোন করেছেন। যে মহিলার ছেলের নাম টুকটুকি। ছেলেদের নাম টুকটুকি হয় সে আগে কখনো শুনেনি। মহিলা কি তার টেলিফোন নাম্বার দেবার জন্যে টেলিফোন করেছেন? তিনি এখন কি বলবেন? সরি লাইন কেটে গিয়েছিল–টেলিফোন নাম্বারটা লিখে নাও। মীরু বলবে, লাইন কেটে গিয়েছিল না কি আপনি রাগ করে টেলিফোন রেখে দিয়েছিলেন? ভদ্রমহিলা বলবেন, ও আল্লা রাগ করব। কেন শুধু শুধু। তুমি কি রাগ করার মত কিছু করেছ?