লতিফার মত মেয়ে পাবি না। তোকে সে মাথায় করে রাখবে। একশ বার লাথি দেবার পরেও মাথা নিচু করে রাখবে। কোনো শব্দ করবে না।
বারসাত গুনগুন করে বলল,
লাথি-কন্যা নাম
আজ আমি তোমাকে দিলাম।
কী বললি?
একটা কবিতা বলেছি মা।
কী কবিতা?
লতিফাকে নিয়ে কবিতা। তুমি কি একটা কাজ করবে? লতিফাকে পাঠিয়ে দেবে। আমি অসুস্থ মানুষ। সে আমার সেবা করুক।
তুই কি পাগলটাগল হয়ে গেলি? একটা কুমারী মেয়েকে এমন নির্জন জংলা টাইপ জায়গায় একা পাঠিয়ে দেব? তোর চিন্তা-ভাবনা তো ভালো না। তোর চিন্তা-ভাবনাও দেখি তোর বাবার মত।
বাবার চিন্তা-ভাবনা এ রকম ছিল?
হুঁ। আমি তোর বড় বোনের জন্মের সময় এক মাস ছিলাম হাসপাতালে। হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে দেখি তোর বাবা অল্প বয়েসী এক কাজের বুয়া রেখেছে। সেই বুয়া ঠোটে লিপস্টিক মাখে। তোর বাবার দিকে তাকিয়ে কেমন করে জানি হাসে।
তুমি কি করলে, ঝেঁটিয়ে বিদায় করলে?
বিদায় করব কি? তোর বাবা বিদায় করতে দিলে তবে না বিদায় করব। একদিন দেখি কি সে তোর বাবার পিঠে তেল মালিশ করে দিচ্ছে।
ঐ বুয়ার নাম কি ছিল মা?
রানী।
শেষ পর্যন্ত তাকে বিদায় করলে কি ভাবে মা?
কি কষ্টে যে বিদায় করেছি তা শুধু আমি জানি আর আল্লাহপাকে জানেন। তোর বাবা তাকে ছাড়াবে না, সেও এই বাড়ি ছেড়ে যাবে না।
উনি দেখতে কেমন ছিলেন মা?
উনি উনি করছিস কেন? কাজের বুয়ার আবার উনি কি।
দুষ্টু লোকে যে বলে বাবা গোপনে ঐ বুয়াকে বিয়ে করেছিলেন সেই জন্যেই সম্মান করে উনি বলছি।
এক থাপ্পড় দিয়ে আমি তোর দাঁত ফেলে দেব।
ছড়া শুনবে মা?
কী শুনব?
ছড়া। ইংরেজি ছড়া—
Atishoo! Atishoo!
We all fall down.
এর মানে কী?
এর মানে হল আমাদের সবারই প্লেগ রোগ হয়েছে। আমরা সবাই মরে। পড়ে থাকব তুমি, আমি, রানী বুয়া, লতিফা, ঐন্দ্রিলা, নীলুফার।
ঐন্দ্রিলার সঙ্গে কথা
আমি কি ঐন্দ্রিলার সঙ্গে কথা বলতে পারি? তার আরেক নাম মীরু।
আমার নাম ঐন্দ্রিলা। আপনি কে?
ঐন্দ্রিলা তুমি আমাকে চিনবে না। আমার নাম নীলুফার… আমি…
আপনি কি অন্য কোন সময় টেলিফোন করবেন? আজ আমাদের বাসায় বিরাট ঝামেলা।
ঐন্দ্রিলা আমি তিন মিনিটের বেশি সময় নেব না। আমার নাম নীলুফার। আমার ছেলের নাম টুকটুকি। বারসাত আমার ছেলের প্রাইভেট টিউটর। তুমি নিশ্চয়ই বারসাতকে চেন? চেন না?
জি চিনি।
আমি যতদূর জানি বারসাতের সঙ্গে তোমার বিয়ের কথা হয়েছিল। আমি ছিলাম একজন সাক্ষী। তুমি আসনি… আমরা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম…
আপনার সঙ্গে আরেকদিন কথা বলি। আজ আমাদের বাসায় বিরাট ঝামেলা।
আমার কথা শেষ হয়ে গেছে। ঐদিন তুমি আসনি। কেন আসনি সেটা তোমার ব্যাপার। না আসার মত কারণ নিশ্চয়ই তোমার আছে। আমি তোমাকে টেলিফোন করেছি বারসাতের খবর জানার জন্যে। ও হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে। বারাসাত কোথায় আছে জানো?
না।
কালিয়াকৈরে বারসাতের দূর সম্পর্কের কোন আত্মীয়ের একটা বাগানবাড়ি আছে। বিয়ের পর তোমাকে নিয়ে বারসাতের সেই। বাগানবাড়িতে যাবার কথা ছিল। তুমি কি সেই বাগানবাড়ির ঠিকানা জাননা?
না।
বারসাতের তিন বোন ঢাকায় থাকে। তার মা-ও ঢাকায় থাকেন। তুমি কি তাদের ঠিকানা জানো?
না।
আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তুমি আমার কথায় বিরক্ত হচ্ছ। তোমাকে বিরক্ত করা আমার উদ্দেশ্য না। আমি বারসাতের খোঁজ জানতে চাচ্ছি। ওর কোন বন্ধু-বান্ধবের টেলিফোন নাম্বার কি তুমি জানো?
না।
তুমি কি আমার টেলিফোন নাম্বারটা রাখবে? যদি তোমার সঙ্গে বারসাতের যোগাযোগ হয় তাহলে কষ্ট করে যদি আমাকে জানাও। I will be so happy.
দিন আপনার টেলিফোন নাম্বার।
আমি তুমি তুমি করে বলছি। দয়া করে এতে কিছু মনে করো না। আমি বয়সে তোমার অনেক বড়।
আপনি টেলিফোন নাম্বারটা দিন।
তোমার সঙ্গে কাগজ-কলম কি আছে?
কাগজ-কলম লাগবে না। টেলিফোন নাম্বারটা বলুন। একবার শুনলেই আমার মনে থাকবে। আমার স্মৃতিশক্তি ভাল।
আচ্ছা থাক তোমার টেলিফোন নাম্বার রাখতে হবে না। মনে হচ্ছে তুমি খুবই বিরক্ত। সরি।
নীলুফার খট করে টেলিফোন রেখে দিল। মীরুর মুখে কোন ভাবান্তর হল না। সে টেলিফোন রেখে ছুটে গেল রান্নাঘরে। রান্নাঘরে আজ ক্রমাগত চা বানানো হচ্ছে। ভাপা পিঠা বানানো হচ্ছে। যার ইচ্ছা চা ভাপা পিঠা নিয়ে যাচ্ছে। বাড়ি ভর্তি মানুষ। পিঠা এবং চা বানিয়ে দুজন কাজের মেয়ে এবং মীরুর মা জাহেদা বানু কূল পাচ্ছেন না।
বাড়িতে চা এবং ভাপা পিঠা এই বিপুল আয়োজনের কারণ হচ্ছে আফজল সাহেব আজ সকালে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। তিনি নাস্তা হিসেবে ভাপা পিঠা খেতে চেয়েছেন। তার বাড়ি ফেরা উপলক্ষে দুনিয়ার আত্মীয়-স্বজন এ বাড়িতে ভিড় করেছে। আফজল সাহেব ভাব করছেন যে তিনি খুব বিরক্ত হচ্ছেন, আসলে তা না। তিনি অত্যন্ত খুশি। তিনি চাচ্ছেনও না যে কেউ বাড়ি থেকে চলে যাক। তিনি মীরুকে ডেকে ষড়যন্ত্র করার ভঙ্গিতে বললেন, এরা তো কেউ নড়বে বলে মনে হচ্ছে না। দুপুরে খাবার ব্যবস্থা করা দরকার। কি করা যায় বল তো?
মীরু বলল, তোমাকে এইসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। তুমি ভাপা পিঠা খাচ্ছ, ভাপা পিঠা খাও। মা আছে মা যা পারে করবে।
তোর মার মাথায় এত বুদ্ধি থাকলে তো কাজই হত। বিয়ের সময় সে তার সব বুদ্ধি বাবার বাড়ির কোন একটা ট্রাংকে তালাবদ্ধ করে চলে এসেছে। এক কাজ করা যাক ওয়ান আইটেম রান্না হোক। তেহারি।