বজলু বলল, রক্ত বমিটা বন্ধ হয়েছে। তবে ডাক্তার বলেছে আশা খুবই কম।
মোবারক জহিরের মুখের কাছে মুখ নিয়ে ডাকল, এই জহির। জহির!
জহির চোখ মেলল।
মোবারক বলল, আমাদেরকে চিনতে পারছিস? চিনতে পারলে কথা বলার দরকার নেই। একটু চোখের পাতি নাড়া। তাহলেই বুঝব চিনতে পারছিস।
জহির চোখের পাতি নাড়ল এবং দুই বন্ধুকে অবাক করে দিয়ে সামান্য হাসল।
বজলু বিস্মিত হয়ে প্রায় চেঁচিয়ে উঠল— আরে ব্যাটা দেখি হাসে। ব্যাটাকেতো বিল্লি মে কাট দিয়া।
মোবারক বলল, দোস্ত ঝুলে থাক। খবরদার মরবি না। খবরদার না। কোনো চিন্তা নেই। আমি সব ব্যবস্থা করেছি। দোস্ত আমি কিডনি বেঁচে দিয়েছি। অনেক টাকা পাব। দেখবি এই টাকা দিয়ে আমি আমাদের ভাগ্য বদলে ফেলব— FRUITS AND FLOWERS. বিশ্বাস কর দোস্ত সত্যি কথা বলছি। সবই সত্যি। এক বর্ণ মিথ্যা না।
কথা বলতে বলতে মোবারকের চোখ ঝাপসা হয়ে গেল।
ঝাপসা চোখে তার হঠাৎ মনে হল জহির যে খাটে শুয়ে আছে সেটা সাধারণ খাট না। খাটটা রুপার তৈরি। রুপার পালঙ্ক।
পরিশিষ্ট
মোবারক তার কিডনি বিক্রি করতে পারে নি। তাদের বিদেশ যাত্রার আগের দিন বড় সাহেব হঠাৎ করে মারা যান। মোবারক ফিরে যায় আগের জীবনে। ছাতিম গাছের নিচে তিন বন্ধু বসে থাকে। মাঝে মাঝে তারা ভাবের জগতে চলে যায়, তখন সময়টা বড় আনন্দে কাটে। বজলু হঠাৎ বলে, জহির, তোর বিল্লির গল্পটা বলতো। বিল্লি মে কাট দিয়া।
জহির সঙ্গে সঙ্গে গল্প শুরু করে।
তিন বন্ধু প্রাণ খুলে হাসে।
শুধু পূর্ণিমার রাতে মোবারকের খুব কষ্ট হয়। আকাশ ভেঙে জোছনা নামে। মোবারকের মনে হয় সমস্ত পৃথিবীটাই বুঝি বিশাল এক রুপার পালঙ্ক। এত প্রকাণ্ড এক পালঙ্কে সে বসে আছে একা। অনেক দূরে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে লাজুক একটা মেয়ে। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে একবার যদি বলা যায়, খুকি এসো। সে ছুটে চলে আসবে। কিন্তু মোবারক বলতে পারছে না। কারণ কথাগুলি বলার জন্যে তাকে রুপার পালঙ্ক থেকে নেমে মেয়েটার কাছে যেতে হবে। সে যেতে পারছে না। যে রুপার পালঙ্কে সে বসে আছে সেখান থেকে নামার ক্ষমতা তার নেই।
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাঁদের আলো তীব্র হয়। রুপার পালঙ্ক ঝকমক করতে থাকে।