জ্বি আচ্ছা।
ইচক দানা বিচুক দানা ঐ গানটা খোঁজ করতে হবে। এক সময় হিট গান ছিল। আরেকটা হিট গান হল মেরা জুতা হায় জাপানী। আগে এইসব গান চায়ের দোকানে বাজাত। এখন আর চায়ের দোকানে গান বাজে না। আগে চারিদিকে আনন্দ ছিল। এখন চারদিকে নিরানন্দ।
খাঁটি কথা বলেছেন স্যার।
ড্রাইভার সাহেব আপনার ক্ষিধে লাগলে বলবেন। ভাল কোনো রেস্টুরেন্টে ঢুকে খেয়ে নেব। লজ্জা করবেন না। আর এই একশটা টাকা রাখুন। আমি যখন বাজার সদাই করব তখন আপনার যদি চা-পান খেতে ইচ্ছা করে খাবেন। লজ্জার কিছু নাই।
চা খেতে খেতে মোবারক আজকের দিনের কর্মকাণ্ডের খসড়া মনে মনে তৈরি করে ফেলল। কাগজ কলম থাকলে ভাল হত, লিখে ফেলা যেত। মনের লেখা ঠিক থাকে না। উলট পালট হয়ে যায়।
ড্রাইভার সাহেবের কাছে কি কাগজ কলম আছে?
জ্বি স্যার আছে।
এক পিস কাগজ আর কলম দিনতো লিস্ট করে ফেলি।
ড্রাইভার কাগজ কলম দিল। মোবারক লিস্ট করতে গিয়ে দেখে কিছুই মনে আসছে না। যা করতে হবে তা হল কাগজ কলম হাতে নিয়েই থাকতে হবে। কিছু একটা মনে হলেই লিখে ফেলা। আপাতত তিনটা আইটেম মনে এসেছে। এই আইটেমগুলি লিখে ফেলা যায়—
১. ক্যাসেট পুরনো দিনের গান।
ইচুক দানা বিচুকদানা, মেরা জুতা, একটা গান লিখ। হেমন্তের কোনো এক গাঁয়ের বধু, জগন্ময়ের চিঠি।
২. দাদিজানের জন্যে গরম শাল। দাম দিয়ে কিনতে হবে। ফাইন কোয়ালিটি। ফাইনের উপরেও যদি কিছু থাকে। সুপার ফাইন।
৩. পরিমল দাস। (শয়তান নাম্বার ওয়ান।)
মোবারক ঠিক করল পরিমল দাসের সঙ্গে সে অত্যন্ত ভদ্র ব্যবহার করবে। মাসে চারশ টাকা করে ছয় মাসে হয় চব্বিশশ টাকা। কচকচে একশ টাকার নোটে চব্বিশশ টাকা দেবে। টাকার সঙ্গে এক প্যাকেট বেনসন। এবং একটা লাইটার। টাকাটা দিয়ে বলবে, অসুবিধায় ছিলাম বলে এতদিন দিতে পারি নি। নিজগুনে ক্ষমা করে দেবেন। ছয় মাসে সিট রেন্ট না দেয়ার পরেও যে আপনি মেস থেকে বের করে দেন নি এটা অনেক বড় ব্যাপার। আপনি আমার সঙ্গে যত খারাপ ব্যবহারই করেন না কেন আপনাকে কিছুতেই খারাপ লোক বলা যাবে না। আপনি আসলে অতি মহৎ ব্যক্তি। মেসের ম্যানেজারী করে ধর্ম কর্ম করলে এতদিনে বড় সাধু হয়ে যেতেন।
শালের দোকানের সেলসম্যান বলল, স্যার বলুন কোন প্রাইস রেঞ্জের ভেতর মাল দেখাব।
মোবারক বলল, ভাল কিছু দেখান। আমি আমার দাদিজানের জন্যে কিনছি। বুড়ো মানুষ কয়দিন আর বাঁচবে। একটা ভাল শাল গায়ে দিয়ে মরুক।
কালার কী দেখাব স্যার?
কালার কোনো ব্যাপার না। দাদিজান চোখে দেখেন না। চোখে দেখেন বলেই জিনিসটা হতে হবে সুপার ফাইন। যেন হাত দিলেই কোয়ালিটি বোঝা যায়।
মাখনের মত মোলায়েম শাল দেখাব। হাতে নিলে মনে হবে শাল হাতের মধ্যে গলে যাচ্ছে। পাহাড়ি কচি ভেড়ার গায়ের পশমের শাল। তাও সব পশম না। পেটের পশম। পিঠের পশমের না।
পিঠের পশমের সমস্যা কী?
পিঠে সূর্যের আলো বেশি পড়ে, পশম শক্ত হয়ে যায়। দাম স্যার সামান্য বেশি পড়বে। তবে জিনিসের মত জিনিস।
দেখি কেমন জিনিস। বুড়িকে কোনোদিন কিছু দেয়া হয় না। দেব যখন ভাল জিনিসই দেই। আর আপনার এখানে ভাল স্যুয়েটার আছে?
পিওর আফগান উলের স্যুয়েটার আছে। শুধু স্যুয়েটার গায়ে দিয়ে বরফের চাঙে শুয়ে থাকতে পারবেন। কিচ্ছু হবে না। বরং গরমে ঘামাচি হয়ে যাবে।
আমার দুই বন্ধুর জন্যে দুটা ভাল স্যুয়েটার বের করেন। আপনার এখানে সিগারেট খাওয়া যায়?
জ্বি না স্যার। কাপড়ের দোকানতো। তবে আপনি খান অসুবিধা নেই। দাঁড়িয়ে আছেন কেন বসুন।
মোবারক বসল। তার খুবই ভাল লাগছে। মনে হচ্ছে সে ভাবের জগতে চলে এসেছে। একা একা এসেছে বলে সামান্য মন খারাপ হচ্ছে। শাল এবং স্যুয়েটার কেনা হয়ে গেলেই জহির এবং বজলুকে খুঁজে বের করতে হবে। দুপুরে পুরনো ঢাকায় গিয়ে কাচ্চি বিরিয়ানী খাওয়া যায়। কাচ্চি বিরিয়ানী সঙ্গে চিকেন কোরমা। রাতে ছাতিম গাছের নিচে ভাল জিনিস নিয়ে বসতে হবে। বিদেশী জিনিস। সমস্যা হচ্ছে সন্ধ্যার পর বড় সাহেব কথা বলবেন। উনার কাছ থেকে ছুটি নিয়ে আসতে হবে। দাদিজানের কথা বলে ছুটি নিতে হবে। বিদেশ যাবার আগে মুরুব্বীদের দোয়াতো নিতেই হবে। বড় সাহেব আপত্তি করবেন বলেতো মনে হয় না।
বজলু বা জহির কাউকেই পাওয়া গেল না। বজলু যে বাসায় থাকে সে বাসায় এক ভদ্রলোক বের হয়ে কঠিন গলায় বললেন, বজলু নামে কেউ এখানে থাকে না।
মোবারক বলল, কতদিন ধরে থাকে না!
অনেক দিন।
কোথায় থাকে জানেন?
জানি না।
আমি বজলুর ফ্রেন্ড। তার জন্যে একটা চাকরির খোঁজ এনেছি। বান্দরবানে ফরেস্টে। মাসে পাঁচ হাজার টাকা বেতন। বেতনের বাইরে এক্সট্রা ইনকামও আছে। আজকের মধ্যেই ছবিসহ বায়োডাটা জমা দিতে হবে। যদি একটু কাইন্ডলি বলেন, কোথায় গেলে তাকে পাব।
কোথায় গেলে পাবেন আমি জানি না।
ভদ্রলোক ঘরে ঢুকে শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দিলেন।
মোবারকের মন সামান্য খারাপ হল। ভদ্রলোক যদি তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতেন তাহলে ভদ্রলোকেরই লাভ হত। এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট পেয়ে যেতেন।
প্যাকেট আশি টাকা। প্রতিটা সিগারেট চার টাকা। খারাপ কী?
জহিরও বাসায় নেই। জহিরের বাবা বারান্দায় বসে ছিলেন। মোবারকের সঙ্গে তার কয়েকবার দেখা হয়েছে, তারপরেও তিনি মোবারককে চিনতে পারলেন না। মনে হয় চোখে ছানী পড়েছে। ছানী পড়া লোকজন রোদের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালবাসে। এই লোকও রোদের দিকে তাকিয়ে আছে।