অজগর সাহেব কি উনার বড় মেয়ের জামাই?
জ্বি। অজগর না-আসগর। চলুন উনার সঙ্গে আপনার আলাপ করিয়ে দেই।
উনার সঙ্গে কথা বলে কী হবে?
আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছিলেন।
চলুন যাই।
বসুন এক কাপ চা খেয়ে যাই। সকালে বাসা থেকে যে বের হয়েছি এক কাপ চা পর্যন্ত খেতে পারি নি। আপনি খাবেন?
অবশ্যই খাব। আপনি একা একা চা খাবেন এটা হয় না। এক্সকিউজ মি স্যার আপনিও কি বড় সাহেবের সঙ্গে যাবেন?
এখনও বুঝতে পারছি না। একবার ঠিক হচ্ছে যাব। একবার ঠিক হচ্ছে যাব না। টোটেল কেওস।
আপনি গেলে খুব ভাল হয়।
কেন?
আমিতো আর কাউকে চিনি না। শুধু আপনাকেই চিনি। আপনাকে নিয়ে দেশটা ঘুরে ফিরে দেখতাম। শুনেছি সুইজারল্যান্ডের প্রাকৃতিক দৃশ্য অতি মনোহর।
ম্যানেজার সাহেব কিছু বললেন না। দ্রুত চা শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন।
চলুন আসগর সাহবের কাছে নিয়ে যাই। ভদ্রলোক খুবই মুডি। উনি কী কথা বলেন, না বলেন শুধু শুনে যাবেন। কোনো আগুমেন্টে যাবেন না।
জ্বি আচ্ছা।
আপনার ছবি তুলতে হবে। পাসপোর্টের জন্যেও ছবি লাগবে। ভিসার জন্যে ছবি লাগবে। গাড়ি দিয়ে দেব, ছবি তুলে নিয়ে আসবেন। পাসপোর্ট ফরমে সই করে যাবেন।
জ্বি আচ্ছা।
আপনি বরং এক কাজ করুন স্যারের বাড়িতে আপনাকে একটা রুমের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। জিনিসপত্র নিয়ে উঠে আসুন। কখন কোন প্রয়োজন হয়। এ বাড়িতে থাকতে কোনো অসুবিধা আছে?
জ্বি না।
চলুন আসগর সাহেবের সঙ্গে দেখা করে আসি। কথাবার্তা সাবধানে বলবেন। উনার মেজাজ আজ অত্যন্ত খারাপ।
আসগর সাহেব বারান্দায় ইজিচেয়ারে আধশোয়া হয়ে বসে আছেন। তাঁর সামনের ছোট্ট টি টেবিল ভর্তি রাজ্যের পত্রিকা। মোবারককে দেখে ভদ্রলোক চোখ তুলে তাকালেন। মোবারক ভদ্রলোককে সঙ্গে সঙ্গে চিনতে পারল। উনি সেই মানুষ যিনি প্রথম দিন অত্যন্ত ব্যস্ত ভঙ্গিতে ঘরে ঢুকে মোবারককে জিজ্ঞেস করেছেন আনিস সাহেব কি চলে গেছেন?
এই মুহূর্তে ভদ্রলোক যে খুব রেগে আছেন তা মনে হল না। রাগ থাকলেও খবরের কাগজে ধর্ষণ জাতীয় খবর পড়ে মনে হয় রাগ পড়ে গেছে। ম্যানজোর সাহেব তাঁর বিখ্যাত মিনমিনে গলায় বললেন, স্যার ইনিই মোবারক হোসেন।
মোবারক হোসেনটা কে?
কিডনি ডোনার।
ও আচ্ছা আচ্ছা। আপনি বসুন। ম্যানেজার সাহেব আপনি চলে যান। আপনার দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।
জ্বি আচ্ছা।
আসগর সাহেব বিরক্ত গলায় বললেন, ইদানীং লক্ষ করছি আপনি কুঁজো হয়ে হাটছেন? Why? আপনার বাথরুমে আয়না আছে না?
জ্বি আছে।
দয়া করে একটু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখুন— স্যুট পরা লোক যখন কুঁজো হয়ে থাকে তখন তাকে কেমন দেখায়। Please do that.
জ্বি আচ্ছা।
মোবারক লক্ষ করল ম্যানেজার সাহেব বারান্দা থেকে যাবার সময় সত্যি সত্যি কুঁজো হয়েই যাচ্ছেন। আগে কুঁজো হয়ে হাঁটছিলেন না। আসগর সাহেবের কথা শোনার পর থেকে কুঁজো হয়ে হাঁটছেন।
আসগর সাহেব হাত থেকে পত্রিকা নামিয়ে বললেন, আপনি হলেন কিডনি ডোনার!
জ্বি স্যার।
ভেরি গুড। হিউমেন বডির দুটা কিডনির কোনো প্রয়োজন নেই। একটাই মোর দ্যান সাফিসিয়েন্ট। একটা কিডনিতে বাকি জীবন আপনি হেসে খেলে পার করতে পারবেন। আপনি দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হবেন না।
মোবারক তার মুখ হাসি হাসি করে দেখাবার চেষ্টা করল যে সে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত না। তবে মনে মনে বলল, একটা কিডনিই যদি মানুষের জন্যে যথেষ্ট হয় তাহলে তুই তোর দুটা থেকে একটা দিয়ে দিচ্ছিস না কেন? তুই জামাই মানুষ। শ্বশুরের জীবন রক্ষার জন্য তুই কিছু করবি না? তোর একটা দায়িত্ব আছে? শ্বশুরের সম্পত্তিতো তোরা জামাইরাই হাতাবি। এক কাজ কর— তুই একটা কিডনি দে আর সুইজারল্যান্ডের জামাই দিক একটা। শ্বশুর পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাক।
আসগর সাহেব বললেন, অপারেশন যেটা হবে সেটাও রুটিন অপারেশন। কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট এত হচ্ছে যে ব্যাপারটা টনসিল তোলার মত সহজ হয়ে গিয়েছে। কিছুদিন আগেও কোনো ফরেন বডি শরীর এক্সসেপ্ট করত না। শরীরের Immune systems allow করত না। নতুন একটা ড্রাগ এই প্রবলেম একশ ভাগ সলভ করেছে। ড্রাগটার নাম…।
জ্ঞানগর্ভ আলোচনা হচ্ছে। ইচ্ছা থাকলেও এই জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় অংশ গ্রহণ করা মোবারকের পক্ষে সম্ভব না। হাসি হাসি মুখে বসে থাকা ছাড়া কিছু করার নেই।
অপারেশনটা সুইজারল্যান্ডে হচ্ছে শুনেছেন বোধহয়?
জ্বি।
A very wrong decision. সুইসরা ঘড়ি বানানো ছাড়া আর কিছু পারে। কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টতো আর ঘড়ি বানানো না। জটিল মেডিক্যাল প্রসিডিউর। ঠিক না?
অবশ্যই ঠিক।
অপারেশন এমন হসপিটালে হওয়া উচিত যেখানে সকাল বিকাল এই অপারেশন হচ্ছে। যেমন ধরেন ব্যাংককের আমেরিকান হসপিটাল। কিংবা ইন্ডিয়ার মাদ্রাজ। আমার ফার্স্ট চয়েস ছিল মাদ্রাজ। অবশ্য থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রিতে এ ধরনের অপারেশনের কিছু রিস্ক আছে। পোস্ট অপারেটিভ কেয়ারটা হয় না। যে কারণে আমি ইংল্যান্ডের কুইনস হসপিটালের কথা বলেছিলাম।
স্যার আপনি খুব ভাল কথা বলেছেন। অতি ভাল সাজেশন।
আসগর সাহেব হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গিয়ে বললেন, এ বাড়ির সমস্যা হচ্ছে— এই বাড়ির লোকজন ভাল কথা, ভাল সাজেশন বলে কিছু বিশ্বাস করে না। কেউ একটা ভাল সাজেশন দিলে এরা ইমিডিয়েটলি সেটা কমোডে ফেলে ফ্ল্যাস করে দেবে। সেই আইডিয়া বর্জ্য পদার্থের সঙ্গে চলে যাবে সিউয়ারেজে।