জাদু টোনা করা হয়। বান মারা এবং বান কাটান দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। প্রেমিক-প্রেমিকার মিলনের সপ্তধাতু তাবিজ আছে। হারানো বস্তু, গুপ্তধন গ্যারান্টি সহকারে অনুসন্ধান করি।
এত ক্ষমতার অধিকারীকে দেখলাম, লুঙ্গি পরে খালিগায়ে বারান্দার একটা কাঠের চেয়ারে বিমর্ষ ভঙ্গিতে বসা। আমি বললাম, এতসব কীভাবে করেন?
তিনি বিরক্ত ভঙ্গিতে বললেন, সোলেমানি জাদুর মাধ্যমে করি। আপনার কী লাগবে বলেন? বাজে কথার সময় আমার নাই।
এই ভদ্রলোককে দেখেই আমার মাথায় একটা গল্প তৈরি হয়। গল্পটি লিখেও ফেলি। গল্পের নাম গুনীন।
ডাইনি বিষয়ে আমরা কখনো উৎসাহী ছিলাম না বলে আমাদের সাহিত্যে ডাইনি নিয়ে কোনো গল্প নেই। ভুল বললাম, একটি গল্প লেখা হয়েছে। লিখেছেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। তার লেখা ডাইনী বিশ্বসাহিত্যে স্থান পাওয়ার মতো লেখা।
আগ্রহী পাঠকদের লেখাটি পড়তে অনুরোধ করছি।*
——–
* ঈদ সংখ্যা কালের কন্থে ম্যাজিক মুনশি ছাপা হওয়ার পর অনেকেই আমাকে জানান, ভারতবর্ষে অতীতে ডাইনি হত্যা হয়েছে এবং এখনো নাকি হচ্ছে। এই বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।
এশার নামাজ শেষ করে মুনশি এসেছেন
এশার নামাজ শেষ করে মুনশি এসেছেন। তার গায়ের চা-পাতা গন্ধি আতরের সুঘ্রাণ আগের চেয়েও বেশি। মনে হয় নামাজের সময় নতুন করে আতর মাখা হয়েছে। আমি বললাম, আরেকটা ম্যাজিক দেখান।
কঠিন ম্যাজিক দেখাব স্যার? অবশ্যই কঠিন ম্যাজিক দেখাবেন।
কেবিনের জানালা বন্ধ করে দেই? বন্ধ ঘর ছাড়া ম্যাজিক দেখানো যায় না।
জানালা বন্ধ করে দিন।
মুনশি জানালা বন্ধ করলেন। আমাকে বললেন দুহাতে দুটা মোমবাতি ধরে পাশাপাশি রাখতে। মোমবাতি দুটির দূরত্ব যেন ছয় ইঞ্চির বেশি না হয়। আমি তা-ই করলাম। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দপ করে বাঁ হাতের মোমবাতি আপনাআপনি জ্বলে উঠল। পরের ঘটনা অদ্ভুত। বাঁ হাতের মোমবাতি নিভে ডান হাতেরটা জ্বলে উঠল। ঘটনা অতি দ্রুত ঘটতে লাগল। মনে হচ্ছে আলো লাফালাফি করছে।
আমি মুগ্ধ হয়ে আলোর নাচানাচি দেখছি। এই আলো ঠিক মোমবাতির আলো না। হালকা নীলাভ দ্যুতি।
আধুনিক ম্যাজিশিয়ানরা আলোর নাচানাচি দেখাতে পারেন। আলো নাচানাচি করবে। এক কান দিয়ে ঢুকে অন্য কান দিয়ে বের হবে। এই আলোর নাচানাচি ম্যাজিকের কৌশল জটিল না। বুড়ো আঙুলের উপর নকল আঙুল পরতে হয়। বাইরে থেকে বোঝা যায় না হাতে নকল আঙুল পরা আছে। ম্যাজিকের ভাষায় নকল আঙুলকে বলে Thumb TIp. Aplastic flesh colored gimmick that fits over the magicians thumb for the purpose of concealing very small objects, liquids and so on.)
Thumb tip-এ ব্যাটারিচালিত বাল্ব থাকে। ব্যাটারিতে চাপ দিলেই আলো জ্বলে ওঠে। হাত নাড়ালেই মনে হয় আলো নড়াচড়া করছে। নিভে যাচ্ছে, আবার জ্বলছে।
মুনশির ম্যাজিকের সঙ্গে আধুনিক আলোর নাচনের ম্যাজিকের কোনো মিল নেই। আমি দুই হাতের দূরত্ব খানিকটা বাড়াতেই মোমবাতি নিভে গেল। আমি বললাম, অদ্ভুত। এ রকম আগে কখনো দেখি নি। আপনার সবচেয়ে জটিল ম্যাজিক কোনটা?
মুনশি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, ছোট পুকুরে আমি পানির উপর হেঁটে পার হতে পারি। এটাই আমার সবচেয়ে জটিল ম্যাজিক। পূর্ণিমার চাঁদ যখন ঠিক মাথার উপর থাকে, তখন আমি এই ম্যাজিক দেখাতে পারি। অন্য সময়ে পারি না।।
আপনার এই ম্যাজিক কি কেউ দেখেছে?
জি-না। কারও সামনে এই ম্যাজিক করা যায় না।
আমি বললাম, যে ম্যাজিক কেউ দেখতে পারবে না সেই ম্যাজিক কোনো ম্যাজিক না।।
মুনশি সঙ্গে সঙ্গে বলল, কথা সত্য।
আপনি বিয়ে করেছিলেন?
করেছিলাম স্যার! ঝামেলার বিয়ে।
ঝামেলার বিয়ে মানে? পরী বিয়ে করেছিলেন নাকি?
মুনশি হেসে ফেলে বললেন, পরী কোথায় পাব স্যার! একটা হিন্দু মেয়ে বিয়ে করেছিলাম। তার নাম রেবতী। বিয়ের দুই মাসের মধ্যে মেয়েটা মারা যায়।
কীভাবে মারা যায়?
সাপের কামড়ে। রেবতীর মৃত্যুর পর কিছুদিনের জন্যে আমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। পাবনা মানসিক হাসপাতালে ছয় মাস ছিলাম।
আমি বললাম, হাসপাতাল থেকে ফেরার পর আপনি হঠাৎ লক্ষ করলেন, ম্যাজিক দেখানোর কিছু ক্ষমতা আপনার মধ্যে হয়েছে। তাই না?
মুনশি চমকে উঠলেন, কিন্তু হ্যাঁ না কিছু বললেন না।
আমি বললাম, আমি যদি আমার কোনো ম্যাজিশিয়ান বন্ধু নিয়ে আসি, তাকে ম্যাজিক দেখাতে পারবেন?
মুনশি বলল, কেন পারব না? অবশ্যই পারব।
আমি যদি একটা ভিডিও ক্যামেরা রাখি, তার সামনে করতে পারবেন?
পারব।
আমি বললাম, পূর্ণচন্দ্র মাথার উপর নিয়ে পুকুর হেঁটে পার হওয়ার সময় কি আপনার মৃত স্ত্রী কোনো না কোনো কারণে উপস্থিত থাকেন?
মুনশি আবারও চমকাল। কোনো উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করল। আমি বললাম, আপনি কি আমার কোনো বই পড়েছেন?
জি-না স্যার। আপনি কি রামকৃষ্ণ পরমহংসের নাম শুনেছেন?
জি স্যার শুনেছি। আমার স্ত্রী ছিলেন হিন্দু ব্রাহ্মণের মেয়ে। তার কারণেই শুনেছি। তার কাছে পরমহংসের ছবিও ছিল।
আমি বললাম, পানির উপর দিয়ে হাঁটা নিয়ে পরমহংসের একটি সুন্দর গল্প আছে। গল্পটা বলি?
বলুন।
রামকৃষ্ণ পরমহংসের কাছে এক সাধু এসে বললেন, আমি কুড়ি বছর সাধনা করে একটা বিদ্যা পেয়েছি।
পরমহংস বললেন, কী বিদ্যা?
আমি এখন জলের উপর দিয়ে হেঁটে নদী পার হতে পারি।।