আমারটাও খারাপ করে এনেছে?
অবশ্যই। চারপায়ে হাঁটাহঁটি করছেন। এটা মাথা খারাপের লক্ষণ না? আপনি কি গরু না ছাগল যে চারপায়ে হাঁটবেন? ডাবউইনের থিওরি তো আপনি পড়েছেন, পড়েন নি?
আখলাক সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন, তেমনভাবে পড়ি নি। তবে মোটামুটি জানি।
মোটামুটি জানলে তো আপনার জানা থাকব কথা–প্ৰাণী বিবর্তনের ভেতর দিয়ে মানুষ এসেছে। তার পূর্বপুরুষ এক সময় চারপায়ে হাঁটত। আপনি সেখানেই ফিরে যাচ্ছেন। এটা একটা লজাব কথা না?
আখলাক সাহেব দারুণ অস্বস্তি নিয়ে খুকগুক করে কাশতে লাগলেন। হ্রিহ্রিলা মেয়েটি তো আসলেই জটিল। ওব সঙ্গে আরো সাবধানে কথা বলতে হবে। হ্রিহ্রিলা বলল, ও কেমন পাগল সেটা কি স্যার আপনি দয়া করে একটু শুনবেন?
বলো।
রোজ সে আপনার কাছে আসছে। আপনাকে বিরক্ত করছে। আবার ওদিকে একটা বই লিখছে, যে বইয়ের বিষয়বস্তু হচ্ছে–মানুষ বলে কিছু নেই, মানুষ হলো ভূতের মাথার दgन्म!
বলো কী!
যা সত্যি সেটাই স্যার আপনাকে বলছি।
আখলাক সাহেব রীতিমত ধাঁধায় পড়ে গেলেন। কী বলবেন কিছু বুঝতে পারলেন না। হ্রিহ্রিলা বলল, ওর মাথায় স্যার পদাৰ্থ বলে এখন কিছুই নেই। আপনাকে নিয়ে সবাই যেমন হাসাহাসি করে, ওকে নিয়েও করে। আমার এমন কষ্ট হয়!
আখলাক সাহেব বললেন, তুমি একটু ভুল বলেছ হ্রিহ্রিলা, আমাকে নিয়ে কেউ হাসাহসি করে না।
অবশ্যই আপনাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। কলেজ থেকে আপনাকে ছুটি দিয়েছে। আপনাকে পাগলের ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে। নিয়ে যায় নি?
হুঁ।
আপনাকে নিয়ে শুধু যে হাসাহাসি করে তাই না, আপনাকে ভয়ও করে।
ভয় করে?
অবশ্যই ভয় করে।
আপনার কাজের ছেলে মোতালেব আপনাকে ছেড়ে চলে গেল কেন? আপনাকে ভয় পাচ্ছে বলেই চলে গেছে।
হুঁ।
এখন আপনার যারা অতি কাছের তারা আপনাকে ভয় পাচ্ছে। কিছুদিন পরে দেখা যাবে সবাই ভয় পাবে। ভয় হচ্ছে সংক্রামক। সবাই আপনাকে ভয় পেতে শুরু কবলে আপনিও সবাইকে ভয় পেতে থাকবেন।
হুঁ।
আপনার স্যার মহাদুঃসময়।
হুঁ।
আপনার এখন কী করা উচিত তা কি স্যার জানেন?
না।
প্ৰাণপণে চেষ্টা করা উচিত।ভোভোহাম্বর কাছ থেকে দূরে থাকা।
ভোভোহা কে?
যাকে আপনি লেখক-৭৪ নামে চেনেন সে-ই হলো ভোভোহা। এটাই তার আসল নাম। ভূতদের নামকরণ পদ্ধতি সম্পর্কে সে যা বলেছে সবই বানানো। তার উর্বর মাথার কল্পনা। আমার নাম দিয়েছেন ফা-৪০, ছিঃ ছিঃ কী লজ্জা।
আখলাক সাহেব কী বলবেন ভেবে পেলেন না। মাথা চুলকাতে লাগলেন। মেয়েটাকে তার পছন্দ হচ্ছে। ভূত হলেও চমৎকার মেয়ে। ঠাণ্ডা মাথার মেয়ে।
স্যার।
হুঁ।
আপনাদের শহরের ট্রাকের পেছনে যেমন লেখা থাকে–১০০ গজ দূরে থাকুন। আপনিও অবশ্যই ভেভোহার কাছ থেকে ১০০ গজ দূরে থাকবেন। নয় তো আপনার ভয়াবহ বিপদ।
দূরে থাকব কী করে? রাত হলেই তো সে চলে আসবে।
সেই সমস্যার সমাধানও স্যার আছে।
বলো, কী সমাধান।
আমার সমাধান কি আপনি শুনবেন? আমি আপনার কে?
আখলাক সাহেব বললেন, তুমি আমার মেয়ের মতো। বলে নিজেই লজ্জায় পড়ে গেলেন। ভূতকে তিনি বলছেন, তুমি আমার মেয়ের মতো। তাঁর মাথা তো আসলেই খারাপ হয়ে গেছে। হ্রিহ্রিলা গাঢ় গলায় বলল, মেয়ে যখন বলেছেন তখন আপনার মঙ্গল দেখার দায়িত্ব আমার। চাচাজান, আপনি আমার কথা শুনুন। আপনার ভূত মেয়ের কথা আপনাকে শুনতেই হবে।
আখলাক সাহেব বললেন, বিলো মা কী কথা।
এটা বলে তিনি আবারো চমকালেন। একটা ভূত মেয়েকে তিনি মা ডাকছেন, কী আশ্চর্য কথা।
চাচাজান।
হুঁ।
আপনি একটা বিয়ে করুন চাচাজান।
সে কী?
সে কী ফোকী বললে চলবে না। আপনার বোন মিলি যে মহিলার কথা বলছে তাকে আমি দেখেছি–অতি ভালো একজন মহিলা… তাকে বিয়ে করলে আপনি খুব সুখী হবেন।
আখলাক সাহেব বিরক্ত গলায় বললেন, এইসব ফালতু কথা বন্ধ করা তো।
ফালতু কথা আমি বন্ধ করব না। আপনি রাজি না হলে আমি কিন্তু কাঁদতে শুরু করব। ভূত মেয়েব কান্না সামলানো খুব কঠিন। আমরা মানুষ মেয়ের চেয়ে অনেক বেশি কাঁদতে পাবি।
এ তো দেখি ভালো যন্ত্রণায় পড়া গেল।
হ্রিহ্রিলা হাসতে হাসতে বলল, ভূত কন্যাকে মেয়ে ডেকেছেন, যন্ত্রণা তো হবেই।
আখলাক সাহেব পিঁড়িবিড় করে বললেন, ভোভোহার সমস্যা মিটাতে গিয়ে নিজে কী সমস্যায় পড়ে গেলাম।
ওব সমস্যা নিয়ে আপনাকে মোটেই ভাবতে হবে না। আপনার সমস্যা যেমন আমি দেখব, ওরটাও আমি দেখব।
এই বয়সে বিয়ে, লোকে বলবে কী?
বলুক যার যা ইচ্ছা। সারাটা জীবন একা একা কাটাবেন? আপনি সারাজীবন অনেক কষ্ট করেছেন। আর আপনাকে কষ্ট করতে দেব না।
আখলাক সাহেব হ্রিহ্রিলার কান্নার শব্দ শুনতে পেলেন। ভূত মেয়ে কিন্তু কাঁদছে। ঠিক মানুষের মেয়ের মতো। কান্না শুনে তার মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তিনি গাঢ় গলায় বললেন, কাঁদিস না তো মা। হ্রিহ্রিলা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, আরো কাঁদব। চিৎকার করে কাঁদব।
আখলাক সাহেবের বিয়ে হলো
বৈশাখ মাসের বার তারিখ আখলাক সাহেবের বিয়ে হলো। বেশ ধুমধাম করে বিয়ে। আখলাক সাহেবের কঠিন নিষেধ সত্ত্বেও মিলি কার্ড ছাপিয়ে মহা উৎসাহে সবাইকে বিলি করল। আখলাক সাহেবের লজ্জার সীমা রইল না। তবে একটা কার্ডে তিনি হ্রিহ্রিলা ও ভোভোঁহার নাম লিখে রাতে ঘুমাতে যাবার আগে টেবিলের উপর রেখে দিলেন। সকালে উঠে সেই কার্ড আর দেখলেন না।
আখলাক সাহেবের ধারণা ওরা বউ-ভাতেও এসেছিল। তের তারিখ রাতে সোহাগ কমিউনিটি সেন্টারে বউ-ভাত হলো। যখন সবাই খাওয়া দাওয়া করছে তখন হঠাৎ ইলেকট্রিসিটি চলে গেল। সারা শহরে ইলেকট্রিসিটি আছে শুধু কমিউনিটি সেন্টারে নেই। ওদের নিজস্ব জেনারেটর আছে। অনেক চেষ্টা করেও সেই জেনারেটর চালু করা গেল না। মিনিট দশেক পর আপনা-আপনি সব বাতি জ্বলে উঠল।