সুলতানা বললেন, তোর বিয়ে ঠিক হওয়ায় বেচারা খুবই খুশি হয়েছে। খুশি চাপতে পারছে না বলে এ রকম করছে।
আমারতো মা কোনো রাজপুত্রের সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে না। কেরানি টাইপ একজনের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছে।
তোর বাবার খুবই পছন্দের ছেলে। মাঝে মাঝে এরকম হয়—কারণ ছাড়াই কোনো একজনকে মনে ধরে যায়।
কারণ ছাড়া কিছু হয় না মা। সব কিছুর পেছনে কারণ থাকে। মাঝে মাঝে কারণটা বোঝা যায়। মাঝে মাঝে বোঝা যায় না।
তোর কি ছেলেটাকে পছন্দ হয়েছে?
না।
তোর বাবাতো এক্কেবারে বিয়ের তারিখ টারিখ করে ফেলল।
করলেও কোনো লাভ হবে না। আচ্ছা মা শোন, ওরা যে এক হাজার এক টাকা দিয়ে গেছে এই টাকাটা আমি খরচ করে ফেলি? | সুলতানা মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। শামা বলল, আমার এক বান্ধবীর বিয়ে। তার বিয়েতে উপহার কিনতে হবে।
সুলতানা শামার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে নিজের প্রশ্নটা আবার করলেন, ছেলে। কি তোর মোটেও পছন্দ হয় নি?
না হয় নি।
তাহলেতো তোর বাবাকে বলা দরকার। অপছন্দের একজনকে কেন বিয়ে করবি?
বাবাকে কিছু বলার দরকার নেই। যেহেতু আমার পছন্দের কেউ নেই, আমি শেষটায় খাতাউরের গলা ধরে ঝুলে বসতেও পারি। মা শোন, আমি কি ঐ এক হাজার এক টাকাটা খরচ করতে পারি?
তোর টাকা তুই খরচ করবি এবার জিজ্ঞেস করার কী আছে?
আমার ঐ বান্ধবীর বিয়ে হবে উত্তরায়। আমরা সারারাত থেকে খুব হুল্লোড় করব। বাবার কাছে বলে আমার ভিসা করিয়ে রাখবে।
আমি কিছু বলতে পারব না। তুই নিজে বলবি। তোর বাবা রাজি হবে বলে আমার মনে হয় না। আর শোন তুই তোর বাবার সঙ্গে কথা বলে তারপর ঘুমুতে যা।
কেন?
তুই বাড়িওয়ালার বাসায় ছিলি, তোর বাবা কয়েকবার তোকে খোঁজ করেছে। মনে হয় কিছু বলবে।
বাবা খেজুরে আলাপ করবে। খেজুরে আলাপ আমার একদম পছন্দ না।
এইভাবে কথা বলছিস কেন— ছিঃ!
খালি হাতে বাবার সামনে যেতে পারব না। পান টান কিছু দাও নিয়ে যাই।
সুলতানা বললেন, এক কাজ কর। তার বাবা যে শাড়িটা এনেছে এটা পরে যা। তোর বাবা খুব খুশি হবে।
শামা হাই তুলতে তুলতে বলল, বাবা এমিতেই খুশি আছে। আরো খুশি করার দরকার নেই। বেলুনে বেশি বাতাস ভরলে বেলুন ব্রাস্ট করে। বাবা এখন। ব্রাস্ট করার পর্যায়ে চলে গেছেন।
শামা খিলখিল করে হাসছে। সুলতানা মুগ্ধ হয়ে মেয়ের হাসি দেখছেন।
আবদুর রহমান মশারির ভেতর ঢুকে পড়েছিলেন। বড় মেয়েকে দেখে মশারির ভেতর থেকে বের হলেন। শামা বলল, বাবা তোমার জন্যে পান এনেছি।
আবদুর রহমান আনন্দিত গলায় বললেন, পানতো আমি একবেলা খাই। শুধু দুপুরে ভাত খাবার পর। যাই হোক, এনেছিস যখন খেয়ে ফেলি। সমস্যা একটাই আবার দাঁত মাজতে হবে। চলে যাচ্ছিল না-কি? বোস, পান খেতে খেতে গল্প করি।
শামা বসল না। দাঁড়িয়ে রইল। বসলেই বাবা দীর্ঘ কথাবার্তা শুরু করতে পারেন। বাবাকে এই সুযোগ কিছুতেই দেয়া যাবে না। শামার মনে হলো বাবার মেজাজ আজ শুধু যে ভাল তা নী, অস্বাভাবিক ভাল। বান্ধবীর বিয়েতে সারা রাত কাটাবার অনুমতি নিতে হলে আজই নিতে হবে। এ রকম সুযোগ আর পাওয়া যাবে না।
আবদুর রহমান পান মুখে দিয়ে বললেন, এশার কাছে একটা টেলিফোন। নাম্বার আছে। আতাউরের নাম্বার। যদিও বিয়ের আগে মেলামেশা মোটেও বাঞ্ছনীয় না, তারপরেও বিশেষ কিছু যদি জানতে চাস
শামা বলল, কিছু জানতে চাই না।
আবদুর রহমান বললেন, বিয়ে শাদি পুরোপুরি ভাগ্যের ব্যাপার। অনেক খোঁজ খবর করে বিয়ে দেবার পর দেখা যায় বিরাট ঝামেলা। স্বামী তেল আর স্ত্রী জল। অঁকাঝাঁকি করলে মিশে আবার কঁকাঝাঁকি বন্ধ করলেই তেল জল আলাদা হয়ে যায়।
শামা বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। আবদুর রহমান হড়বড় করে কথা বলেই যাচ্ছেন। তার মুখ থেকে পানের রস গড়িয়ে শাদা গেঞ্জিতে পড়ছে। থুতনিতে রস লেগে আছে। তিনি তেল জল বিষয়ক কথাবার্তা বলেই যাচ্ছেন। কী বলছেন নিজেও বোধহয় জানেন না। শামা ভেবে পাচ্ছে না তার বাবা এত খুশি কেন। রহস্যটা কী! সে বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, বাবা তােমাকে একটা জরুরি কথা চট করে বলে নেই, পরে ভুলে যাব।
আবদুর রহমান আগ্রহ নিয়ে বললেন, কী কথা?
আমার এক বান্ধবীর বিয়ে । মীরা নাম। উত্তরায় ওদের বাড়ি। আমরা সব বন্ধুরা দল বেঁধে বিয়েতে যাচ্ছি। মীরা বলে দিয়েছে আমাদের সারা রাত থাকতে হবে।
থাকবি। বন্ধুবান্ধবের বিয়েতে মজা না করলে কার বিয়েতে কবি ? তাের বিয়েতেও ওদের সবাইকে বলবি। গায়ে হলুদের পর থেকে সবাই যেন থাকে। একটা ঘর তোর বন্ধুদের জন্যে ছেড়ে দেব। মেঝেতে টানা বিছানা করে দেব। ঠিক আছে রে মা ?
শামা বলল, ঠিক আছে বাবা। আজকের পত্রিকা পড়েছিল ? হ্যাঁ।
ইদানীং সব পত্রিকায় নতুন একটা ব্যাপার হয়েছে কার্টুন ছাপা হচ্ছে। বেশির ভাগ সময়ই খুব ফালতু টাইপ। মাঝে মাঝে আবার খুবই ভাল ।
আজকেরটা কি ভাল ?
আজকেরটা খুবই ভাল। হাসতে হাসতে অবস্থা কাহিল। ঘটনাটা হলো এক লোকের পা ভাঙা । হাসপাতালে পড়ে আছে। তার বন্ধু গিয়েছে তাকে দেখতে। বন্ধু বলল, কীরে পা কীভাবে ভাঙলি ?
সে বলল, সিগারেট খেতে গিয়ে পা ভাঙলাম। বন্ধু বলল, এটা আবার কেমন কথা? সিগারেট খেতে গিয়ে কেউ পা ভাঙে ? সে বলল, ঘটনাটা হলো সিগারেট খেতে খেতে উলটে পড়ে…
এশা
মিথ্যা দু’রকমের আছে। হঠাৎ মুখে এসে যাওয়া মিথ্যা, আর ভেবে চিন্তে বলা মিথ্যা। হঠাৎ মিথ্যা আপনা আপনি মুখে এসে যায়। কোনো পরিশ্রম করতে হয় না। ভেবে চিন্তে মিথ্যা বলাটাই কঠিন। এই মিথ্যা সহজে গলায় আসে না। বারবার মুখে আটকে যায়।