ইতি আতাউর
সুলতানা চিঠি ভাঁজ করে টেবিলে রাখলেন।
শামা বলল, মা তুমি কিছু বলবে?
সুলতানা চুপ করে রইলেন। শামা শান্ত গলায় বলল, মা তুমি বল আমি কি উনার সঙ্গে দেখা করে বলব চিঠিটা পড়ে আমার খুব মন খারাপ হয়েছে। আপনার ওপর আমি খুব রাগ করেছিলাম ঠিকই। এখন আর আমার কোনো রাগ নেই। বল মা, এটাও কি আমি বলব না?
সুলতানা জবাব দিলেন না। চুপ করে রইলেন।
শামা মুত্তালিব সাহেবের গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে। মুত্তালিব সাহেব নিজেও গাড়িতে আছেন। তিনি শামাকে নিয়ে পেছনের সীটে বসেছেন।
ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। এমন বৃষ্টি যে গাড়িতে বসে বাইরের কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মুত্তালিব সাহেব বললেন, এই ঝড় বৃষ্টির মধ্যে আমরা কোথায় যাচ্ছি?
শামা বলল, জানি না চাচা।
মুত্তালিব সাহেব বিরক্ত গলায় বললেন, তুই কোথায় যাবি তা না জেনেই বের হয়েছিস?
শামা বলল, আমরা কী করব, না করব তা কি আমরা সব সময় জানি?
মুত্তালিব সাহেব জবাব দিলেন না। তিনি হঠাৎ লক্ষ করলেন, শামা কাঁদছে। টপটপ করে শামার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
শামা বলল, চাচা আমি গাড়ির কাঁচটা নামিয়ে দেই?
মুত্তালিব সাহেব বললেন, ভিজে যাবি তো।
চাচা আজ আমার ভিজতে ইচ্ছা করছে।
মুত্তালিব সাহেব নরম গলায় বললেন, তোর যা করতে ইচ্ছে করে তুই কর। আমি আছি তোর সঙ্গে। মা-রে তুই কাঁদছিস কেন?
শামা জবাব দিল না। সে জানালার কাচ নামিয়ে মুগ্ধ হয়ে বৃষ্টি দেখছে। সে কী করবে? সে কি গাড়িতে করে খানিকক্ষণ ঘুরে বাসায় ফিরে যাবে? যে। মানুষটা মাকড়সা ধাঁধার জবাব ঠিকঠাক দিতে পেরেছিল তার সঙ্গে জীবন শুরু। করবে?
না-কি আতাউর নামের মানুষটার কাছে উপস্থিত হয়ে বলবে, হ্যালো মিস্টার। আসুনতো আমার সঙ্গে বৃষ্টি দেখবেন। আজ আমরা বৃষ্টি বিলাস করব। কোনো ভয় নেই। আমি সারাক্ষণ আপনার হাত ধরে রাখব। এক মুহূর্তের জন্যেও হাত ছাড়ব না। কী করবে শামা?
শামা কাঁদছে। শাড়ির আঁচলে সে চোখ মুছছে। কোনো বড় সিদ্ধান্ত সে নিয়ে নিয়েছে। মস্ত বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেবার আগে আগে মেয়েদের চোখে সব সময় পানি আসে।